নবগঙ্গা নদী ভরাট করে গড়ে উঠছে গুচ্ছগ্রাম
নড়াইলের ঐতিহ্যবাহী নবগঙ্গা নদী দখল করে গড়ে উঠছে গুচ্ছগ্রাম। ফলে দখল-দূষণের কবলে পড়ে নদীটি এখন মৃতপ্রায়। চুয়াডাঙার মাথাভাঙা মোহনা থেকে শুরু হয়ে ঝিনাইদহ ও মাগুরা হয়ে নড়াইলের ওপর দিয়ে লোহাগড়ার শেষপ্রান্ত মহাজন বাজারে মধুমতী নদীতে গিয়ে মিশেছে নবগঙ্গা।
স্থানীয় বাসিন্দারা জাগো নিউজকে জানান, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ নৌপথ বিবেচনায় নিয়ে নবগঙ্গা নদীকে কেন্দ্র করে পাড়ে গড়ে ওঠে উপজেলার লোহাগড়া, লক্ষ্মীপাশা, দিঘলিয়া, মিঠাপুর ও নলদী বাজার। এখনো বর্ষাকালে ঢাকা, খুলনাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে লোহাগড়া বাজারসহ অন্য বাজারে এই নদী দিয়ে মালামাল পরিবহন করা হয়।
সরেজমিনে দেখা গেছে, নদী ভরাট করে কুন্দশীতে গড়ে উঠেছে সরকারি গুচ্ছগ্রাম। নদী শাসন করে অপরিকল্পিত সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। নদীর ভেতরে গড়ে তোলা হয়েছে বসতবাড়িসহ কাঁচা-পাকা বিভিন্ন স্থাপনা। নদীর মাঝখান পর্যন্ত বাঁধ দিয়ে নদী থেকে মাটি কেটে ভরাট করে চাষাবাদ করা হচ্ছে। প্রভাবশালীরা ঘের বানিয়ে করছেন মাছ চাষ। এ অবস্থায় উপজেলা সদরের লক্ষ্মীপাশা থেকে দক্ষিণে মহাজন বাজার পর্যন্ত প্রায় ১৬ কিলোমিটার নদীটি সরু নালায় পরিণত হয়েছে। এছাড়া নদীতে ফেলা হচ্ছে ময়লা-আবর্জনা। নদীর তীরে নির্মাণ করা হয়েছে বসতবাড়ির কাঁচা শৌচাগার।
স্থানীয় বাসিন্দারা জাগো নিউজকে জানান, এ নদীতে দুর্গন্ধ বাড়ছে। ফলে বাড়ছে মশা-মাছির উপদ্রব। তাদের অভিযোগ, দখল-দূষণ আর ভরাটের কবলে পড়া মৃতপ্রায় এ নদীটি রক্ষার উদ্যোগ নেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের।
নড়াইল জেলা নদী বাঁচাও আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এসএ মতিন জাগো নিউজকে জানান, এ নদী না বাঁচলে নৌপথ বন্ধ হবে। ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। বেশি ক্ষতি হবে কৃষির। ধ্বংস হবে মৎস্য সম্পদ। একই সঙ্গে পরিবেশও বিপন্ন হবে। প্রশাসনের নাকের ডগায় এভাবে নদী দখল হওয়া দুঃখজনক ।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০১০ সালের এপ্রিল-মে মাসে মধুমতী নদীর সংযোগস্থল উপজেলার মহাজন থেকে দীঘলিযা পর্যন্ত ৮ দশমিক ৬৮ কিলোমিটার অংশ খনন করা হয়। এ জন্য বরাদ্দ ছিল ২ কোটি ৪০ লাখ টাকা। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির আর্থিক সহাযতায় খনন প্রকল্পটির তত্ত্বাবধান করে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি)।
স্থানীয়দের অভিযোগ, ওই সময় দু-এক কোদাল মাটি কেটে নদী খননের নামে প্রায় সকল বরাদ্দের টাকা লুটপাট করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। নদী খননের কোনো চিহ্নও এখানে নেই।
নডাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) লোহাগড়া উপজেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ-সহকারী প্রকৌশলী আল জহির জাগো নিউজকে জানান, ওই এলাকা দেখে মনে হয়নি যে নদী খনন করা হয়েছে। সে জন্য লক্ষ্মীপাশা থেকে মহাজন পর্যন্ত ১৬ কিলোমিটার অংশ পুরোটা খননের জন্য এক বছর আগে পাউবোতে প্রকল্প দেওয়া আছে। এখনো অর্থ বরাদ্দ হয়নি।
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) তুষার কুমার পাল জাগো নিউজকে জানান, নবগঙ্গা নদীর অবৈধ দখল চিহ্নিত করতে স্থানীয় নায়েবদের তদন্ত চলছে। এরপর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এসএস/এমএস