পাহাড়ে পাহাড়ে ‘বৈসাবি’ উৎসবের হাওয়া

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি খাগড়াছড়ি
প্রকাশিত: ০৫:১২ পিএম, ০৫ এপ্রিল ২০১৮

বৈশাখ আসি আসি করছে। ইতোমধ্যে বর্ষবরণের প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে। বাংলা নববর্ষের পাশাপাশি উদযাপিত হবে পাহাড়ের ঐতিহ্যবাহী ‘বৈসাবি’ উৎসব। ত্রিপুরাদের ‘বৈসু’, মারমাদের ‘সাংগ্রাই’ আর চাকমাদের ‘বিজু’। এই তিনের আদ্যাক্ষর নিয়ে ‘বৈসাবি’। বৈসাবি মানেই পাহাড়ে প্রাণের উৎসব আর সম্প্রীতির মেলবন্ধন। অরণ্য ঘেরা পাহাড়ের ঐতিহ্যবাহী সামাজিক উৎসব বৈসু-সাংগ্রাই-বিঝু বা বৈসাবির উচ্ছাস ছড়িয়ে পড়েছে পাহাড়ে আনাচে কানাচে। প্রাণের উৎসবকে ঘিরে খাগড়াছড়ির শহর ছাড়িয়ে গ্রামের প্রতিটি ঘরে চলছে উৎসব প্রস্তুতি।

১২ এপ্রিল ভোরে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে নদীতে ফুল ভাসানোর মধ্য দিয়ে শুরু হয়ে তিনদিনের বৈসাবি উৎসব চলবে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত । তবে কোথাও কোথাও এ উৎসব আরও দুদিন চলবে।

পাহাড়ের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ‘বৈসাবি’ উৎসবের সঙ্গে স্থানীয় বাঙালিরাও একাকার হয়ে মিশে যাবে এ প্রাণের উৎসবে। পাহাড়ীদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাঙালিদের ঘরে ঘরে পালিত হবে ‘বাংলা নববর্ষ’। বিশেষ ধরনের সবজি ‘পাঁচন’রান্নায় পিছিয়ে থাকবে না বাঙালি গৃহবধূরাও।

Boisabi-2

আগামী ১২ এপ্রিল চাকমাদের ফুল বিজুর মধ্য দিয়ে পাহাড়ে উৎসবের সূচনা হবে। ১৩ এপ্রিল অর্থাৎ নববর্ষের আগের দিন ‘হারি বৈসু’ পালনের মাধ্যমে শুরু হবে ত্রিপুরা জনগোষ্ঠির বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের আনুষ্ঠানিকতা। নতুন বছরের প্রথম দিন থেকে মারমাদের সাংগ্রাইয়ের সূচনা।

প্রাণোচ্ছল আর বৈচিত্রময় আয়োজনে বর্ষবরণে খাগড়াছড়ির পাহাড়ি পল্লীগুলোতে চলছে নানা প্রস্তুতি। গত কয়েক বছর ধরে পাহাড়ের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকায় বিভিন্ন সম্প্রদায়ের জনগোষ্ঠি বৈসাবি উৎসব পালন করে আসছে।

‘বৈসাবি’ সামনে রেখে ইতোমধ্যে জেলা ও উপজেলা শহরের বিভিন্ন হাট-বাজারে শুরু হয়েছে বেচাকেনার ধুম। উৎসবকে ঘিরে ব্যস্ততা বেড়েছে ছোট-বড় দোকানীদেরও। বিত্তবানদের পাশাপাশি হত দরিদ্ররাও নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী পরিবারের সদস্যদের বায়না পূরণের প্রাণান্তকর চেষ্টা করছে।

Boisabi-3

বৈসাবি উৎসবের সঙ্গে পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি নারীদের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস জড়িয়ে আছে। ইতিহাস আর ঐতিহ্যকে সামনে রেখে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ ও জেলা প্রশাসনের বাইরেও স্থানীয় পাহাড়িরা নিজেদের মতো করে বৈসাবি উদযাপনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। অন্যদিকে প্রতিবারের ন্যায় এবছরও খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ সম্মিলিতভাবে বৈসাবি উদযাপন করবে।

বরাবরের মতোই এ বছরও ১১ এপ্রিল সকালে জেলা পরিষদ প্রাঙ্গণ থেকে বৈসাবি শোভাযাত্রা শুরু হয়ে খাগড়াছড়ি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে গিয়ে শেষ হবে। খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসন, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠি সাংস্কৃতিক ইন্সটিটিউটও পাহাড়ে ভিন্ন আমেজের সঙ্গে নতুন বছরকে বরণের প্রস্তুতি নিয়েছে।

বৈসাবি উৎসবকে সকল সম্প্রদায়ের মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার আহবান জানিয়ে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কংজরী চৌধুরী জানান, ‘বৈসাবি’ উৎসবকে সার্বজনীন করতে সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। এ ছাড়া বৈসাবি উৎসব থেকে শিক্ষা নিয়ে পাহাড়ের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিকে সুদৃঢ় করার আহ্বান জানান তিনি।

Boisabi-4

সংশ্লিষ্টদের মতে, অনুকুল আবহাওয়া থাকলে বিগত বছরের মতোই খাগড়াছড়িতে উৎসব মুখর পরিবেশে পালিত হবে ‘বৈসাবি’ উৎসব। প্রাণের স্পন্দনে হাতে হাত মিলাবে নানা গোষ্ঠি ও সম্প্রদায়ের মানুষ। পাহাড়ে ডানা মেলবে শান্তির পায়রা।

প্রসঙ্গত, ১৯৮৫ সাল থেকে খাগড়াছড়িসহ পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের বিভিন্ন সংগঠনের সম্মিলিত উদ্যোগে ‘বৈসাবি’ নামে এ উৎসব পালিত হয়ে আসছে। সময়ের ব্যবধানে নিজ নিজ সম্প্রদায়ের কাছে ‘বৈসাবি’ পরিণত হয়েছে প্রাণের উৎসবে।

মুজিবুর রহমান ভুইয়া/আরএ/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।