নতুন বছরে আনন্দে সবাই, পাটকল শ্রমিকদের কান্না

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি নরসিংদী
প্রকাশিত: ১০:৩৭ এএম, ০১ জানুয়ারি ২০২০

নতুন বছরের প্রথম প্রহরে হাসি আনন্দে মাতোয়ারা সবাই। নতুন স্বপ্ন আর নতুন ভাবনায় উচ্ছ্বসিত মানুষ। কিন্তু হাসি নেই নরসিংদী ইউএমসি জুট মিলের শ্রমিকদের। বুকভরা কষ্ট, চাপা কান্না, আর্তনাদ, হতাশা আর হাহাকার নিয়ে খোলা আকাশের নিচে অনাহারে দিন পার করছেন পাটকল শ্রমিকরা। মিল গেটে চলছে শ্রমিকদের কান্না আর আহাজারি। কিন্তু তাদের খোঁজ রাখার সময় নেই যেন কারও।

শ্রমিকদের কান্না আর বাঁচার আকুতিতে ক্রমেই ভারি হয়ে উঠছে মিল গেট এলাকার বাতাস। দু-মুঠো খাবার যোগাতে কাজে যোগ দিতে চান শ্রমিকরা। দাবি শুধু মজুরি কমিশন বাস্তবায়ন, বকেয়া মজুরি পরিশোধসহ ১১ দফা বাস্তবায়ন।

hungar-strick

বাংলাদেশ রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল শ্রমিক সিবিএ-নন সিবিএ সংগ্রাম পরিষদের ডাকে গত ১০ ডিসেম্বর থেকে আমরণ অনশন শুরু করেন শ্রমিকরা। শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ানের আশ্বাসে ১৪ ডিসেম্বর অনশন স্থগিত করে কাজে যোগ দেন শ্রমিকরা। দাবি পূরণে তারা ২৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছিলেন। কিন্তু দাবি পূরন না হওয়ায় পুনরায় তারা আন্দোলনে নামেন।

তীব্র শীত উপেক্ষা করে রাতভর অনশনস্থলে অবস্থান করছেন শ্রমিকরা। অনশনে অংশ নিয়ে দুই দিনে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন তিনজন শ্রমিক। টানা ৪র্থ দিনের মতো আন্দোলন চললেও মিলেনি কোনো আশ্বাস। এতে হতাশ শ্রমিকরা।

hungar-strick

বয়োবৃদ্ধ পাটকল শ্রমিক মো. সুরুজ মিয়া বলেন, এই মিলে কাজ করে খাই। আজ কতদিন হলো না খেয়ে, অনাহারে অনশনে আছি। ছেলে-মেয়ের লেখাপড়ার কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছি না। কলেজে ভর্তি করিয়েছি, টাকার জন্য পরীক্ষা দেয়াতে পারিনি। এর চেয়ে কষ্ট আর কি হতে পারে। দয়া করে এই দেশের সরকারকে আমাদের দিকে একটু তাকাতে বলেন। খুশির দিন আর আমাদের মাঝে নেই। ঘরে চাল নেই। সন্তানদের শীতের কাপড় নেই। পরনে জুতা নেই।

কাঁদতে কাঁদতে সুরুজ মিয়া বলেন, সন্তানরা আমাকে বলে, দেখ বাবা আমার সাথের বন্ধুরা কত আনন্দ উল্লাস করে। তুমি আমাদের কাপড়ই দিতে পারো না। আমারে কিছু দাও। কিন্তু কোনো উত্তর দিতে পারি না। দয়া করে এই খবরটা প্রধানমন্ত্রীকে জানান। তিনি যেন আমাদের প্রতি সুদৃষ্টি দেন।

hungar-strick

কথা বলতে বলতে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন এই বৃদ্ধ শ্রমিক। তার চোখের পানি দেখে আর আর্তনাদ শুনে আমরণ অনশন মঞ্চের সকলেই কেঁদে ফেলেন।

অপর শ্রমিক নাসির বলেন, মেয়েটা স্কুলের পরীক্ষায় ফাস্ট হয়েছে। বছরের প্রথম দিনে স্কুলে ভর্তি করতে হবে। পকেটে টাকা নেই। তাই কোনো উত্তর দিতে পারিনি- এই বলেই কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।

আমরণ অনশনে সিবিএ-নন সিবিএ সংগ্রাম পরিষদের নেতৃবৃন্দসহ মিলের শতশত শ্রমিক অংশ নিয়েছেন। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমৃত্যু ঘরে ফিরবেন না বলেও ঘোষণা দিয়েছেন শ্রমিকরা।

সঞ্জিত সাহা/আরএআর/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।