হাতজোড় করে ক্ষমা চাওয়া বৃদ্ধকে পাকা বাড়ি করে দিচ্ছেন ডিসি
হাতজোড় করে ক্ষমা চাওয়া বৃদ্ধকে পাকা বাড়ি করে দিচ্ছেন রাজশাহীর জেলা প্রশাসক (ডিসি) হামিদুল হক। ডিসির উদ্যোগে সরকারি খাসজমিতে বৃদ্ধকে পাকা বাড়ি বানিয়ে দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে তানোর উপজেলা প্রশাসন।
রাস্তার পাশে পড়ে থাকা কাগজ কুড়ানো অবস্থায় শুক্রবার (২৭ মার্চ) বিকেলে আতাবুর রহমান (৬০) নামের ওই বৃদ্ধকে দেখতে পান রাজশাহীর জেলা প্রশাসক (ডিসি) হামিদুল হক।
বিকেলে রাস্তার পাশে পড়ে থাকা কাগজ কুড়াচ্ছিলেন ওই বৃদ্ধ। তার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন রাজশাহীর জেলা প্রশাসক (ডিসি) হামিদুল হক। ডিসির সঙ্গে ছিলেন পৌর মেয়র, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও থানার ওসি। হঠাৎ ওই বৃদ্ধের দিকে এগিয়ে যান ডিসি। এগিয়ে যান অন্যরাও। বিষয়টি দেখে ভয় পেয়ে যান বৃদ্ধ। ভয় পেয়ে হাতজোড় করে ডিসিকে বৃদ্ধ বলেন, ‘বাবা আমার যদি কোনও ভুল হয়, মাফ করে দেন, আমি আর বাজারে আসব না।’
বৃদ্ধের অসহায় আত্মসমর্পণ দেখে আবেগাপ্লুত হয়ে বুকে টেনে নেন ডিসি। তাৎক্ষণিকভাবে ওই বৃদ্ধকে সহায়তা করেন তিনি। সেখান থেকে ফিরে বিষয়টি নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন ডিসি হামিদুল হক। পরে সেটা ভাইরাল হয়ে যায়।
স্থানীয় সূত্র জানায়, আতাবুর রহমান তানোর পৌরসভার বড়কুঠি এলাকার বাসিন্দা। শনিবার বিকেলে নিজ কার্যালয়ে ডেকে আতাবুরের হাতে নতুন জামা-কাপড় ও চাল-ডালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী তুলে দেন তানোর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুশান্ত কুমার মাহাতো।
ইউএনও সুশান্ত কুমার মাহাতো বলেন, ডিসি হামিদুল হকের নির্দেশে বৃদ্ধ আতাবুর রহমানকে খুঁজে আনা হয়। এরপর তার হাতে নতুন জামা-কাপড় ও চাল-ডালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় কিছু সামগ্রী তুলে দেয়া হয়েছে।
ইউএনও বলেন, করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে সরকারি খাসজমিতে আতাবুর রহমানকে পাকা বাড়ি করে দেয়া হবে। তাকে পুনর্বাসনের আওতায় আনা হবে। বিষয়টি নিয়ে ডিসি হামিদুল হক আমার সঙ্গে কথাও বলেছেন। আমরা এই বৃদ্ধের সব কিছুর ব্যবস্থা করব।
ফেসবুকে স্ট্যাটাসে ডিসি হামিদুল হক লিখেছেন, অকারণে যেসব লোকজন বাজারে ছিলেন, তাদের বাজার থেকে সরিয়ে দিয়ে রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে উপজেলার দিকে যাই। এ সময় হঠাৎ ৬০ বছরের এক বৃদ্ধ মানুষকে রাস্তার পাশে কিছু পুরোনো, ছেঁড়া কাগজ কুড়াতে দেখে কাছে যাই। আমরা কাছে যেতেই এবং সঙ্গে পুলিশ দেখে ভয় পেয়ে যান বৃদ্ধ।
ভয় পেয়ে হাতজোড় করে বৃদ্ধ লোকটি দাঁড়িয়ে বলেন, ‘বাবা আমার যদি কোনও ভুল হয়, মাফ করে দেন, আমি আর বাজারে আসব না।’
আমি সঙ্গে সঙ্গে বৃদ্ধকে বললাম বাবা, এটি কোনও ভুল না। ভীষণ মায়া লাগলো বৃদ্ধ লোকটিকে দেখে। এ বয়সে তার ঘরে থাকার কথা। নাতিপুতিদের সঙ্গে খেলা করার কথা তার। কিন্তু হায় দারিদ্র্য; তুমি তাকে এই চৈত্রের প্রখর রোদে কটি টাকার জন্য, সামান্য চাল কেনার অর্থের জন্য কিছু ছেঁড়া কাগজ কুড়াতে বাধ্য করেছ। তার ওপর বিশ্ব কাঁপানো করোনা। কিন্তু এই বৃদ্ধের দারিদ্র্যকে করোনা পরাজিত করতে পারেনি। তাকে আটকে রাখতে পারেনি ঘরের কোণে।
ফেরদৌস সিদ্দিকী/এএম/এমকেএইচ