কাপাসিয়ায় করোনা আক্রান্তদের জন্য সুখবর
করোনা পজিটিভ ব্যক্তিদের জন্য গাজীপুরের কাপাসিয়ায় আইসোলেশন সেন্টার চালু করা হয়েছে। কাপাসিয়া উপজেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগের উদ্যোগে প্রথমবারের মতো একটি বেসরকারি হাসপাতালে এ আইসোলেশন সেন্টার চালু করা হয়েছে। স্থানীয় সংসদ সদস্য সিমিন হোসেন রিমি উপজেলায় করোনা আক্রান্ত সকলের চিকিৎসাসহ সার্বিক কাজ তদারকি করছেন ও নির্দেশনা দিচ্ছেন। তারই নির্দেশনায় বুধবার এই আইসোলেশন সেন্টার চালু করা হলো।
জানা গেছে, কাপাসিয়া উপজেলায় উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, নার্স, স্বাস্থ্য সহকারী, সাংবাদিক মিলিয়ে করোনা পজিটিভ ব্যক্তির সংখ্যা ৭০। সোমবার পর্যন্ত গাজীপুর জেলায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা ২৮০ জন। কাপাসিয়া উপজেলায় করোনা পজিটিভ ব্যক্তিদের মধ্যে উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগের ৩০ জন, একটি মৎস্য খাদ্য উৎপাদন কারখানার ১৪ জন, জেলা সিভিল সার্জন অফিসের দুই কর্মচারী এবং বাকিরা বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দা।
এ উপজেলায় চিকিৎসার জন্য কোনো বিশেষায়িত হাসপাতাল বা আইসোলেশন সেন্টার নেই। অপরদিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, নার্স, স্বাস্থ্য সহকারীসহ মোট ৩০ জন করোনা পজিটিভ হওয়ার কারণে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাসেবা সীমিত করা হয়েছে। এ কারণে আক্রান্ত ব্যক্তিদের অধিকাংশ নিজ নিজ বাড়িতে হোম আইসোলেশনে রয়েছেন। এনিয়ে স্থানীয়ভাবে নানাবিধ সামাজিক সংকট তৈরি হওয়ায় উপজেলায় একটি বেসরকারি হাসপাতালকে আইসোলেশন সেন্টার হিসেবে ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে।
গাজীপুর-৪ কাপাসিয়া আসনের সংসদ সদস্য ও বঙ্গতাজ তাজউদ্দীন আহমদের মেয়ে সিমিন হোসেন রিমি জানান, কাপাসিয়ায় উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগের ৩০ জনকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভেতরে নার্সিং ইনস্টিটিউটে আইসোলেশনে রাখা হয়েছে। দস্যু নারায়ণপুর গ্রামের ছোঁয়া এগ্রো প্রোডাক্ট লিমিটেড কারখানার করোনা পজিটিভ শ্রমিকদের মধ্যে একজনকে ঢাকায় হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। বাকি ১৩ শ্রমিককে কারখানার ভেতরেই আলাদাভাবে আইসোলেশনে রাখার ব্যবস্থা করেছে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা বিভাগ। সেখানে তাদের স্বাস্থ্যের পর্যবেক্ষণ, চিকিৎসা ও অন্যান্য কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে চলছে। তাদের শারিরীর অবস্থা স্থিতিশীল আছে।
সিমিন হোসেন রিমি আরো জানান, হাসপাতাল ও কারখানার বাইরে উপজেলার আরো যে ২৬ জন করোনা পজিটিভ ব্যক্তি রয়েছেন, তারা নিজ নিজ বাড়িতেই আইসোলেশনে রয়েছেন। কিন্তু করোনা পজিটিভ হওয়ার পর উক্ত ব্যক্তিদের প্রতিবেশীরা অনেক ক্ষেত্রেই অসহযোগিতা করছেন এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে পজিটিভ হওয়া ব্যক্তির পরিবারের লোকজনদের সঙ্গে বিরূপ আচরণ করছেন। এসব কারণে পজিটিভ ব্যক্তিরা নিজ নিজ বাড়িতে থাকার ক্ষেত্রে অস্বস্তিবোধ করছেন। আশেপাশের লোকজনও ভীত ও আতঙ্কিত। এসব বিষয় বিবেচনা করে তাদেরকে বিকল্প ব্যবস্থায় আইসোলেশনে রাখার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এজন্য উপজেলার একটি বেসরকারি হাসপাতালকে বেছে নেয়া হয়েছে।
কাপাসিয়া উপজেলায় যে হাসপাতালটি করোনা পজিটিভ ব্যক্তিদের আইসোলেশনে রাখার জন্য স্থানীয় প্রশাসন বাছাই করেছে সেটি উপজেলার রায়েদ ইউনিয়নের দরগার বাজারের পাশে অবস্থিত। এর নাম মডিউল কমিউনিটি হাসপাতাল। হাসপাতালটি প্রতিষ্ঠা করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিশু সার্জারি বিভাগের প্রাক্তন চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. রুহুল আমিন। হাসপাতালটির নির্মাণকাজ শেষ হলেও উদ্বোধনের অপেক্ষায় ছিল।
এ বিষয়ে হাসপাতালের মালিক ডা. মো. রুহুল আমিন বলেন, হাসপাতালে ৫০টির মতো শয্যা রয়েছে। হাসপাতালটি এখনও উদ্বোধন করা হয়নি। তারপরও দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে আমার হাসপাতালটি করোনা আক্রান্তদের জন্য চিকিৎসা সেবার কাজে ব্যবহৃত হবে এটি আমার জন্য অত্যন্ত আনন্দের বিষয়। আমি একজন চিকিৎসক, আমার ছেলেও একজন চিকিৎসক। একজন চিকিৎসক হিসেবে সমাজের প্রতি আমারও দায়বদ্ধতা রয়েছে। স্থানীয় এমপি, উপজেলা প্রশাসন আমার হাসপাতালটি বেছে নেয়ার জন্য তাদের প্রতি ধন্যবাদ জানাচ্ছি। হাসপাতালে যাদের আইসোলেশনে রাখা হবে, আমি তাদের সকলের সুস্থতা কামনা করছি।
ইতোমধ্যে কাপাসিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইসমত আরা, কাপাসিয়া উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আবদুর রহিমসহ সংশ্লিষ্টরা হাসপাতাল পরিদর্শন করেছেন।
উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আবদুর রহিম জানান, হাসপাতালটির সামগ্রিক প্রস্তুতি বুধবার শেষ হয়েছে। সরকারি অ্যাম্বুলেন্স যোগে করোনা আক্রান্ত ব্যক্তিদের নিজ নিজ বাড়ি থেকে উক্ত আইসোলেশন কেন্দ্রে নিয়ে আসা হচ্ছে। এখানে তাদের স্বাস্থ্যের পরবর্তী ধাপগুলো পর্যবেক্ষণে রাখা হবে। প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সহায়তা প্রদান করা হবে। খাবারের ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের পরিবার যদি সহযোগিতা করতে চায় করবে, বাকি ব্যবস্থাপনা স্থানীয় সংসদ সদস্য, উপজেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগ বহন করবে।
আমিনুল ইসলাম/এফএ/এমকেএইচ