একদল তরুণের অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর গল্প

ইমাম হোসাইন সোহেল
ইমাম হোসাইন সোহেল ইমাম হোসাইন সোহেল
প্রকাশিত: ১০:৪৩ পিএম, ২৪ এপ্রিল ২০২০

মানুষ মানুষের জন্য। একজন বিপদে পড়লে তার সাহায্যে এগিয়ে আসা অন্য মানুষের ধর্ম। এটাই মানুষের স্বাভাবিক প্রবৃত্তি। বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে এই গুণটা আরও বেশি প্রবল। করোনাভাইরাসের কারণে মুহূর্তেই অসহায় হয়ে পড়া অগণিত খেটে খাওয়া অসহায় মানুষদের পাশে এ দেশের সম্পদশালী, উদ্যমী কিংবা বিত্তশালীদের দাঁড়ানোর মধ্য দিয়ে সেটাই আবার প্রমাণ হয়েছে।

বিশ্বব্যাপী মহামারি করোনার প্রভাবে যখন মানুষ গৃহবন্দী আর অধিকাংশ মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছে। বেঁচে থাকার জন্য করোনার পাশাপাশি ক্ষুধার সাথেও যুদ্ধ করতে হচ্ছে খেটে খাওয়া মানুষদের। এ দুঃসময়ে অসহায় মানুষের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে ফেনী জেলার দাগনভূঁইয়া উপজেলার ১নং সিন্দুরপুর ইউনিয়নের দরবেশের হাট এলাকার একদল উদ্যমী যুবক।

করোনার কারণে অসহায় হয়ে পড়ার মানুষগুলোর জন্য সরকারের পাশাপাশি ব্যক্তিগত এবং সামষ্টিক উদ্যোগে প্রচুর ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে। সবচেয়ে লক্ষ্যণীয় বিষয় হলো, অধিকাংশ ত্রাণই দেয়া হয় শহরের কিছু নির্দিষ্ট এলাকায়। অথচ গ্রাম-গঞ্জে বিশাল একটি অংশ পড়ে আছে চোখের আড়ালে। যাদের নিজেদের না আছে সহায়-সম্বল, না পারছে কাজ করতে, না পাচ্ছে কোনো সহযোগিতা।

সে কারণেই গ্রামাঞ্চলের অসহায় মানুষদের কথা চিন্তা করে দরবেশের হাটের এই উদ্যমী তরুণরা সিদ্ধান্ত নিয়েছে গ্রামেই তারা ত্রাণ বিতরণ করবে। সে আলোকেই প্রায় খালি হাতে মাঠে নেমে বিত্তবানদের কাছ থেকে দারুণ সাড়া পেয়েছে তারা। যে কারণে, এখনও পর্যন্ত ২০৬টি পরিবারের মাঝে পৌঁছে দিতে পেরেছে খাদ্য সামগ্রী।

Donation

ফেনীর শাহীন একাডেমি স্কুল এন্ড কলেজের প্রভাষক হাফিজ আহমদ মিলনের উদ্যেগে এই ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। এই উদ্যমী তরুণ দলের বাকি সদস্যরা হচ্ছেন- ইস্রাফিল আজাদ, আনোয়ার হাসান, আইয়ুব, বিপ্লব সিদ্দিকী, আব্দুর রহিম, শামীম, সজিব ইকবাল, ইমাম হুসাইন ও বোরহান।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মানুষের কাছে তারা আহ্বান জানায়, করোনার কারণে ক্ষতিগ্রস্থ মানুষদের পাশে দাঁড়ানোর। তাদের এই প্রচারণার মাধ্যমেই দেশ-বিদেশের বেশ কিছু মানুষ সহযোগিতা নিয়ে এগিয়ে আসে তাদের পাশে। যার ফলে তিনধাপে ২০৬টি পরিবারের মাঝে খাদ্য সামগ্রী পৌঁছে দেয়া সম্ভব হয়েছে।

অসহায় মানুষদের জন্য বিতরণ করা খাদ্য সামগ্রীর মধ্যে ছিল চাল ৮ কেজি, ২ কেজি আলু, ১ কেজি ডাল, ১ কেজি তেল, ১ কেজি পেয়াজ, ২৫০ গ্রাম রসুন, লবণ ১ কেজি এবং একটি করে সাবান।

গ্রামাঞ্চলের প্রকৃত অসহায়-অভাবী পরিবারগুলোকে খুঁজে বের করে তাদের বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দেয়া হয়েছে এসব খাদ্য-সামগ্রী। এমনকি কাদেরকে খাদ্য সামগ্রী দেয়া হলো সে ধরনের কোনো ছবি তোলা হয়নি। রাতের আঁধারে প্রত্যেক অসহায় পরিবারের কাছে সাহায্য সামগ্রী নিয়ে ছুটে গেছেন এই তরুণেরা।

এ প্রসঙ্গে উদ্যেক্তা হাফিজ আহমদ মিলন বলেন, ‘লকডাউনের এই সময়ে অনেক মানুষ তাদের কর্ম হারিয়ে বেকার হয়ে পড়েছে। অর্থাভাবে সংসার আর চলছে না অনেক মানুষের। বিশেষ করে দিন-মুজুরদের অবস্থা খুবই খারাপ। দু’মুঠো ভাত জোগাড় করাই এখন খুব কঠিন হয়ে পড়েছে। এই নিরন্ন মানুষদের পাশে দাঁড়ানোর জন্যই আমাদের এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা। আমাদের মতো একটা গরীব রাষ্ট্রে সবার জন্য খাদ্য নিশ্চিত করা সরকারের একার পক্ষে সম্ভব নয়। তাই সমাজের বিত্তবানদের উচিত গরীব অসহায়দের পাশে দাঁড়ানো।’

২০৬ পরিবারের মধ্যে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করার পরও থেমে যেতে চায় না এই তরুণরা। উদ্যোক্তা হাফিজ আহমেদ মিলন জানান, ‘আমাদের কার্যক্রম শেষ হয়নি, পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত আমরা আমাদের সেবা কার্যক্রম চালিয়ে যাব। এ জন্য আমরা সমাজের বিত্তবানদের সহযোগিতা চাই।’

আইএইচএস/

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।