করোনা জয় করে ফের নমুনা সংগ্রহে সাধনা রাণী

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি যশোর
প্রকাশিত: ০৩:৫৮ পিএম, ০৩ জুন ২০২০

করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে চলমান লড়াইয়ে অন্যতম যোদ্ধা সাধনা রাণী মিত্র। যশোরের মণিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এই স্বাস্থ্যকর্মী সন্দেহভাজন করোনা রোগীদের নমুনা সংগ্রহ করতে গিয়ে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। কিন্তু দমে যাননি। কোয়ারেন্টাইনে থেকে সুস্থ হয়ে ফের নেমেছেন করোনা রোগীদের সেবায়। ভয়ে দূরে সরে না গিয়ে দায়িত্ববোধ আর ভালোবাসার স্বাস্থ্যসেবায় অনন্য নজির স্থাপন করেছেন তিনি।

সাধনা রানী মিত্র মণিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ইপিআই)। যিনি নিজেই নিজের নমুনা সংগ্রহ করেন এবং তার করোনা পজিটিভ রিপোর্ট আসে। প্রথমবার করোনা পজিটিভ শনাক্তের পর ২য় ও ৩য় বারও তিনি নিজেই নমুনা সংগ্রহ করেন। পরীক্ষায় পরপর দুই বার নেগেটিভ রিপোর্ট আসলে গত ২০ মে তিনি করোনাভাইরাস মুক্ত হিসেবে ছাড়পত্র পান। ছাড়পত্র পেয়েই ফের সন্দেহভাজন করোনা রোগীদের নমুনা সংগ্রহ শুরু করেছেন তিনি।

সাধনা রানী মিত্র বলেন, এখন নমুনা সংগ্রহ না করলে খারাপ লাগে। নিজের মনের কাছেই ছোট হয়ে যাই। মনে হয়, ভয়ে নিজেকে গুটিয়ে নিচ্ছি না তো!

মণিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শুভ্রা রাণী দেবনাথ বলেন, সাধনা করোনা পজিটিভ শনাক্তের পর সুস্থ হয়ে ফের নমুনা সংগ্রহ শুরু করেছেন। তিনি শুধু একজন দায়িত্বশীল নন, একজন মানব সেবকও বটে।

সাধনা রানী মিত্র ১৯৬৮ সালের ১ জুন পিরোজপুর জেলার মঠবাড়িয়া উপজেলার বাঁশবুনিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকসহ সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেছেন। ১৯৯২ সালের ২৫ অক্টোবর ইপিআই পদে যোগদান করে তিনি স্বাস্থ্য বিভাগে কাজ শুরু করেন। এরপর থেকেই স্বাস্থ্যসেবায় নিয়োজিত তিনি।

সাধনা বাগেরহাট জেলার শরনখোলা উপজেলার রাজাপুর গ্রামের কমলেস চন্দ্র হালদারের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তার স্বামী স্থানীয় একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। দাম্পত্য জীবনে তাদের দুই মেয়ে ও এক ছেলে সন্তান রয়েছে। মাস্টার্স পাস করা বড় মেয়ে মিথিলা বনলতা সাথীকে বিয়ে দিয়েছেন। ঢাকায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছোট মেয়ে প্রিয়াংকা হালদার হ্যাপী আইনে ও একমাত্র ছেলে বিশ্বজিৎ হালদার ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছেন।

মণিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্র জানায়, গত ২ এপ্রিল থেকে মণিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সন্দেভাজন করোনা রোগীদের নমুনা সংগ্রহ শুরু হয়। এখানে এ পর্যন্ত ১৫৬ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। এর মধ্যে ১১ জনের করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে। আশার কথা হলো বর্তমানে ৯ জনই করোনামুক্ত।

শুরু থেকেই সাধনা রানী এক সহকর্মীকে নিয়ে নমুনা সংগ্রহ শুরু করেন। কিন্তু ভয়ে সহকর্মীটি নিজেকে গুটিয়ে নিলেও সাধনা রানী মানবসেবা পরম ধর্ম মনে করে নমুনা সংগ্রহ চালিয়ে যান। একপর্যায়ে জেলার প্রথম করোনা রোগী হিসেবে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্যকর্মী রবিউল ইসলামের করোনা পজিটিভ ধরা পড়ে। এতে সাধনা রানী একটু ভড়কে যান। কিন্তু পরেই আবার নিজেকে প্রস্তুত করে কাজে মনোনিবেশ করেন। এ পর্যন্ত তিনি একাই ৫৫ জনের নমুনা সংগ্রহ করেছেন। আরও কিছু নমুনা সংগ্রহে তার সহযোগিতা রয়েছে। শুধুমাত্র আইসোলেশনের দিনগুলোতেই তিনি দায়িত্ব পালন করেননি।

গত ২৭ এপ্রিল সাধনা রাণী নিজেই নিজের নমুনা সংগ্রহ করেন। একই সঙ্গে আরও ৭ জনের। দুইদিন পর রিপোর্ট এলে তিনিসহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চারজনের করোনা পজিটিভ রিপোর্ট আসে। নিয়ম মেনে আইসোলেশনে থাকার ১৪ দিন পর ফের নিজেই নিজের নমুনা সংগ্রহ করার করে পরীক্ষার জন্য প্রেরণ করেন। নেগেটিভ রেজাল্ট আসে। এভাবে নিয়ম মেনে কোয়ারেন্টাইন শেষ করে আবারও সন্দেহভাজন করোন রোগীদের নমুনা সংগ্রহ শুরু করেছেন সাধনা রাণী।

মিলন রহমান/আরএআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।