বরিশালে ২৭টি ওয়ার্ড রেড জোন ঘোষণা, প্রথম ধাপে লকডাউন দুটি
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বিবেচনায় বরিশাল নগরীর ৩০টি ওয়ার্ডের মধ্যে ২৭টিকে ‘রেড জোন’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রথম ধাপে নগরীর ১২ ও ২৪ নম্বর ওয়ার্ডকে লকডাউন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিটি করপোরেশন করোনাভাইরাস প্রতিরোধ ও মোকাবিলা কমিটি। পর্যায়ক্রমে অন্য ওয়ার্ডগুলো লকডাউন করা হবে।
বৃহস্পতিবার (১৮ জুন) রাত সাড়ে ১০টার দিকে বরিশাল সিটি করপোরেশন (বিসিসি) থেকে এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এর আগে বিকেলে কমিটির সদস্যরা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে নগরীর ‘রেড জোন’ হিসেবে চিহ্নিত ওয়ার্ডগুলোর লকডাউন বাস্তবায়ন নিয়ে আলোচনা করেন।
কমিটির সভাপতি সিটি করপোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর সভাপতিত্বে সভায় যুক্ত ছিলেন বিভাগীয় কমিশনার অমিতাভ সরকার, মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার শাহাবুদ্দিন খান বিপিএম (বার), ডিজিএফআই পরিচালক কর্নেল জিএস মো. বাকের, শেখ হাসিনা সেনানিবাস ৬২ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের কমান্ডিং অফিসার লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফয়সাল আবেদী হাসান, র্যাব-৮ এর কমান্ডিং অফিসার আতিকা ইসলাম, এনএসআইয়ের যুগ্ম পরিচালক অসিতবরণ সরকার, বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক ডা. বাসুদেব কুমার দাস, সিভিল সার্জন ডা. মো. মনোয়ার হোসেন, শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. বাকির হোসেন, বাংলাদেশ ব্যাংক বরিশাল শাখার জিএম স্বপন কুমার দাস এবং বিআইডব্লিউটিএ বরিশাল কার্যালয়ের যুগ্ম পরিচালক মো. আজমল হুদা মিঠু সরকার।
সভায় চিহ্নিত ওয়ার্ডগুলোতে জনসাধারণের চলাচল ও সার্বিক কার্যাবলি নিয়ন্ত্রণের জন্য এলাকাভিত্তিক লকডাউন বাস্তবায়নে আলোচনা হয়। এছাড়া লকডাউন চলাকালীন স্বাস্থ্যসেবা ও জনসচেতনতা, নৌ ও সড়কপথে যানবাহন চলাচলে নিয়ন্ত্রণ, লকডাউন এলাকার জনগণের কাছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য পৌঁছে দেয়াসহ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে করণীয় সম্পর্কে ব্যাপক আলোচনা করা হয়। সভায় সর্বসম্মতিক্রমে প্রথম ধাপে নগরীর ১২ ও ২৪ নম্বর ওয়ার্ডকে পুরোপুরি লকডাউন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। পরবর্তীতে পর্যায়ক্রমে অন্য ওয়ার্ডগুলো লকডাউন করা হবে।
বরিশাল জেলা প্রশাসনের মিডিয়া সেল সূত্রে জানা গেছে, এ পর্যন্ত জেলায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা এক হাজার ৯০ জন। এর মধ্যে নগরীতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৮৫৫ জন।
বরিশাল সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, প্রথম ধাপে নগরীর ১২ ও ২৪ নম্বর ওয়ার্ডকে লকডাউন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এই দুই ওয়ার্ডে ১২৩ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এছাড়া নগরীর আরও ২৫টি ওয়ার্ডে করোনার ব্যাপক সংক্রমণ ঘটে গেছে। শুধু এর ব্যতিক্রম দেখা গেছে তিনটি ওয়ার্ডে। ওয়ার্ড তিনটি হচ্ছে ২৬, ২৭ ও ৩০ নম্বর ওয়ার্ড। ২৬ নম্বর ওয়ার্ডে এ পর্যন্ত দুইজনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। বাকি ২৭ ও ৩০ নম্বর ওয়ার্ডে এখনও করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়নি। এ কারনে এ তিনটি ওয়ার্ডকে সবুজ জোন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক ডা. বাসুদেব কুমার দাস বলেন, কোনো এলাকায় লকডাউন সফল করতে হলে প্রস্তুতির বিষয় রয়েছে। যেমন স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সম্পৃক্তকরণ, ঝুঁকিবিষয়ক যোগাযোগ, রোগ শনাক্তকরণ পরীক্ষা, শনাক্তকৃত ব্যক্তিকে আইসোলেশনে নেয়া, কনট্যাক্ট ট্রেসিং, খাদ্য ও সামাজিক সহায়তা, ১০০ শতাংশ নাগরিকের মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিত করা, সবাইকে হাত ধোয়ায় উদ্বুদ্ধ করা, সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা, সঠিক চিকিৎসা ও মৃত্যু শূন্যে নামিয়ে আনা, সার্বক্ষণিক নজরদারি এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করা। এসব বিষয় কার্যকর করতে সিটি করপোরেশন থেকে প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। প্রস্তুতি নেয়া হলে লকডাউনের ঘোষণা দেয়া হবে।
সাইফ আমীন/বিএ