খাগড়াছড়িতে আইসিইউ না থাকায় বাড়ছে প্রাণহানির শঙ্কা

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি খাগড়াছড়ি
প্রকাশিত: ১১:১৪ এএম, ০৮ জুলাই ২০২০

সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পাহাড়ি জেলা খাগড়াছড়িতে বাড়ছে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। ইতোমধ্যে তিনশ’র ঘর ছাড়িয়ে গেছে করোনায় আক্রান্ত রোগী। আট লাখ মানুষের বাস খাগড়াছড়িতে নেই কোনো নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র বা আইসিইউ। আইসিইউ সঙ্কটে করোনায় আক্রান্ত কোনো মুর্মূষু রোগীকে পাড়ি দিতে হচ্ছে ১২০ কিলোমিটার দূরের চট্টগ্রাম শহরে। সেখানেও আইসিইউ মেলার কোনো নিশ্চিয়তা নেই। আইসিইউ না থাকায় বাড়ছে প্রাণহানির শঙ্কাও। এ পরিস্থিতিতে করোনা মোকাবেলায় খাগড়াছড়িতে দ্রুত নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র বা আইসিইউ স্থাপনের দাবি উঠেছে।

খাগড়াছড়ি জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্যমতে, পার্বত্য খাগড়াছড়িতে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে করোনায় আক্রান্ত রোগী। খাগড়াছড়ি আধুনিক জেলা সদর হাসপাতালে আইসিইউ না থাকায় স্থানীয়দের মাঝে উদ্বেগ বাড়ছে। কোভিড-১৯ এ আক্রান্তদের খাগড়াছড়ি জেলা সদর হাসপাতালের আইসোলেশন ইউনিটে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। তবে মুমূর্ষু রোগীদের চিকিৎসা সেবায় নেই কোনো আইসিইউ সুবিধা। এতে করোনায় আক্রান্ত রোগী ও তাদের স্বজনরা মানসিক শক্তি হারিয়ে ফেলছেন। করোনা আতঙ্কে থাকা মানুষের মাঝে আইসিইউ সঙ্কট আস্থাহীনতা তৈরি করেছে।

করোনায় আক্রান্ত রোগীদের অবস্থার অবনতি হলে তাদেরকে বিভাগীয় শহর চট্টগ্রামে রেফার করা হয়। এতে ১২০ কিলোমিটারের পাহাড়ি পথ পাড়ি দিতে হয় তাদের। দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে আইসিইউ পাওয়া নিয়েও রয়েছে চরম অনিশ্চয়তা। ফলে চিকিৎসা পাওয়ার আগেই প্রাণ হারানোর আশঙ্কা রয়েছে। তাই দ্রুত সময়ে পাহাড়ি জেলা খাগড়াছড়িতে আইসিইউ স্থাপনের দাবি জানিয়েছে স্থানীয়রা।

খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলার বাসিন্দা জীবন চৌধুরী উজ্জ্বল বলেন, এখানে প্রতিদিনই বাড়ছে করোনা রোগীর সংখ্যা। করোনা চিকিৎসায় আইসিইউ না থাকায় রোগীর প্রানহানির শঙ্কা রয়েছে। দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে জেলা সদরে যাওয়াই যেখানে কষ্টসাধ্য সেখানে চট্টগ্রামে গিয়ে চিকিৎসা নেয়া কী করে সম্ভব?

মাটিরাঙ্গা সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হিরনজয় ত্রিপুরা বলেন, খাগড়াছড়িতে করোনায় আক্রান্ত রোগী বাড়ার সঙ্গে ঝুঁকিও বৃদ্ধি পাচ্ছে। খাগড়াছড়ি আধুনিক জেলা সদর হাসপাতালে আইসিইউ ইউনিট না থাকায় ষাটোর্ধ্ব বয়সের রোগী বেড়ে গেলে সামাল দিতে হিমশিম খেতে হবে। পাহাড়ের প্রান্তিক মানুষের পক্ষে চট্টগ্রামে গিয়ে চিকিৎসা নেয়া সম্ভব নয় দাবী করে অবিলম্বে খাগড়াছড়ি জেলা সদর হাসপাতালে আইসিইউ ইউনিট স্থাপনের দাবি জানান তিনি।

খাগড়াছড়িতে আইসিইউ ইউনিট স্থাপন সময়ের দাবি উল্লেখ করে জেলা রেড ক্রিসেট ইউনিটের ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মো. জসিম উদ্দিন মজুমদার বলেন, পাহাড়ের মানুষের মধ্যে প্রাণ হারানোর শঙ্কা রয়েছে। করোনায় আক্রান্ত মুমূর্ষু রোগীকে চট্টগ্রামে রেফার করা মানেই সেই রোগীকে মৃত্যুপথযাত্রী করা মন্তব্য করে তিনি বলেন, ৩-৪ ঘণ্টার পথ পাড়ি দিয়ে যেতে যেতে পথেই রোগী মারা যাবে।

ক’দিন আগে শ্বাসকষ্ট নিয়ে খাগড়াছড়ি জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি হওয়া এক রোগীর মৃত্যুর প্রসঙ্গ টেনে খাগড়াছড়ি জেলা সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক পুর্ণ বিকাশ চাকমা বলেন, আইসিইউ না থাকায় করোনা আক্রান্ত রোগীকে আমরা বাঁচাতে পারিনি। এমন সময় মুর্মূষু রোগীদের অন্যত্র রেফার করেও কোনো লাভ হয় না। চট্টগ্রামে রেফার করা হলেও এত লম্বা পথ পাড়ি দিতে দিতে মারা যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। এছাড়া চট্টগ্রামেও করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ার কারণে সেখানে গিয়েও আইসিইউ পাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। খাগড়াছড়িতে আইসিইউ ইউনিট থাকলে রোগীদের সেবা নিশ্চিত করা সম্ভব বলেও মনে করেন এ চিকিৎসক।

খাগড়াছড়িতে আইসিইউ ইউনিট স্থাপন জরুরি বলে মনে করছেন খাগাড়ছড়ির সিভিল সার্জন ডাক্তার নুপুর কান্তি দাশ। তার মতে এখানে করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা যেভাবে বাড়ছে তাতে করে নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র বা আইসিইউ ইউনিটের ব্যাপক সংকট দেখা দিতে পারে। আইসিইউ ইউনিট ছাড়া মুমূর্ষু রোগীদের চিকিৎসা সেবা দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। করোনা ভাইরাসের প্রকোপ মোকাবেলায় খাগড়াছড়ি জেলা সদর হাসপাতালে আইসিইউ ইউনিট স্থাপন অত্যন্ত জরুরি বলে মনে করেন তিনি।

মুজিবুর রহমান ভুইয়া/এফএ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।