ঝিনাইদহে ইউডিসিতে হিসাব সহকারী নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি ঝিনাইদহ
প্রকাশিত: ১১:১০ এএম, ২৬ মার্চ ২০২১

ঝিনাইদহের বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের ডিজিটাল সেন্টারে (ইউডিসি) হিসাব সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।

বৃহস্পতিবার (২৫ মার্চ) খুলনা বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে লিখিত অভিযোগ করেন ঝিনাইদহ সদর উপজেলার সাগান্না ইউডিসির উদ্যোক্তা মাসুদুর রহমান ও হলিধানী ইউডিসির উদ্যোক্তা জহুরুল ইসলাম।

এতে উল্লেখ করা হয়েছে- জেলার সদ্য বিদায়ী জেলা প্রশাসক সরোজ কুমার নাথ আদালতের আদেশ অমান্য করে তড়িঘড়ি করে ৪৯ ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারে হিসাব সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর নিয়োগ দিয়ে গেছেন।

২০১০ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্থানীয় সরকারের তৃনমূল প্রতিষ্ঠান ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রমকে গতিশীল করতে সারাদেশের তথ্য সেবা কেন্দ্র চালু করেন। এসব তথ্যসেবা কেন্দ্রে স্থানীয় তরুণ-তরুণীরা কাজ করে আসছিলেন। পরবর্তীতে ২০১৪ সালে তথ্যসেবা কেন্দ্রকে ডিজিটাল সেন্টার ঘোষণা করা হয়।

ঝিনাইদহ জেলায় ৬৭ ইউনিয়ন পরিষদ ও ছয়টি পৌরসভা রয়েছে। প্রতিটি সেন্টার একজন ছেলে ও একজন মেয়ে উদ্যোক্তা হিসেবে কাজ করছেন। সরকার বা ইউনিয়ন পরিষদের কোষাগার থেকে কোন পারিশ্রমিক ছাড়াই তারা জনগণকে সেবা প্রদান করছেন। সেবাগ্রহীতাদের কাছ থেকে প্রাপ্ত সামান্য আয় দিয়ে এসব উদ্যোক্তারা সংসার জীবন পরিচালিত হয়ে আসছে।

২০১৬ সালে পূর্বের উদ্যোক্তাদের বাদ দিয়ে ইউনিয়ন পরিষদে হিসাব সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি জারির পর থেকে ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তারা তাদের স্থায়ীকরণের দাবি করে আসছেন। ২০১৭ সালে হিসাব সহকারী কাম কম্পিউটার পদে তাদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নিয়োগের জন্য হাইকোর্টে রিট করা হয়। কিন্তু তাদের দাবির প্রতি কোনো কর্ণপাত না করায় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়ে দীর্ঘদিন শান্তিপূর্ণ আন্দোলন শুরু করেন। তাতেও কোনো ফল না পেয়ে উদ্যোক্তারা স্থায়ী নিয়োগের জন্য আদালতের দ্বারস্থ হন।

উচ্চ আদালতে একাধিক রিটের প্রেক্ষিতে বিভিন্ন জেলায় নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়। পরে উচ্চ আদালত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে রিটকারীদের নিয়োগের জন্য নির্দেশনা প্রদান করেন কিন্তু রায়ের বিপক্ষে সরকার পক্ষ আপিল করে। আপিলের শুনানিতে শর্তসাপেক্ষে অগ্রাধিকারভিত্তিতে উদ্যোক্তাদের নিয়োগের জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়। যদিও আদালতে মামলা এখনও চলমান রয়েছে।

এদিকে, গত ৩ মার্চ ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার শাখা থেকে ৪৯ জনকে হিসাব সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর নিয়োগের চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা করা হয়। আদালতের দেয়া শর্ত পূরণ করায় ১৫ জন উদ্যোক্তাকে চূড়ান্ত ফলাফলে রাখা হয়েছে। বাকি ৩৪ জন নতুন। এদের মধ্যে দুজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান রয়েছেন। ফলে এসব ডিজিটাল সেন্টারের টানা ১০ বছর কাজ করার পর কর্মস্থল হারানোর শঙ্কায় পড়েন শতাধিক উদ্যোক্তা।

যদিও জেলা প্রশাসন থেকে বলা হচ্ছে, তাদের কর্মসংস্থান হারাবে না, তবে নতুনদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। উদ্যোক্তারা বলছেন, ইউনিয়ন পরিষদের হিসাব সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর নিয়োগের মাধ্যমে ‘খেদাব না উঠান চাষের’ অবস্থা সৃষ্টি করা হয়েছে।

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার শিমলা রোকনপুর ইউনিয়ন পরিষদ ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তা হোসেন আলী বলেন, ‘আমরা বর্তমান সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের অগ্রভাগে কাজ করছি। প্রায় ১০ বছর হলো সরকারের কোষাগার থেকে কোনোরকম পারিশ্রমিক ছাড়াই সেবাগ্রহীতাদের কাছ থেকে পাওয়া সামান্য টাকায় বেঁচে আছি। আমাদের হাত ধরেই প্রথম দেশের তৃণমূল পর্যায়ে বসবাসকারীদের কাছে ডিজিটাল সেবা পৌঁছে দিয়েছি। তাই আমাদের মানবিক দাবি ছিল, অভিজ্ঞতা ভিত্তিতে কর্মরত উদ্যোক্তাদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে হিসাব সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে নিয়োগ পাওয়া কিন্তু আমাদের কষ্ট কেউ বুঝেনি।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিদায়ী জেলা প্রশাসক সরোজ কুমার নাথ জানান, সরকার নতুন পদ সৃষ্টি করেছেন। তাদের বেকার করেননি। তাদের চাকরি রয়েই গেছে। কাউকে বলা হয়নি কর্মসংস্থান ছাড়তে। তাদের দাবি ছিল কম্পিউটার অপারেটর পদে তাদের চাকরি স্থায়ীকরণের। হাইকোর্টের আদেশে ঝিনাইদহে ১৫ জনের চাকরি হয়েছে আর যারা বাদ আছে তাদের পর্যায়ক্রমে হবে।

আব্দুল্লাহ আল মাসুদ/এসজে/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।