জোটেনি কোরবানির মাংস, ডাল-সবজিতেই ভরসা জেলে পরিবারের

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি বরগুনা
প্রকাশিত: ০২:২৩ পিএম, ১০ জুলাই ২০২২
ভাতের জন্য পানি গরম দিয়েছেন নারী

ঈদুল আজহার দিন সকালে সারাদেশের অলিতে গলিতে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে পশু কোরবানি দেওয়ার চিত্র থাকলেও তার উল্টোটা বরগুনার পাথরঘাটাসহ উপকূলীয় জেলে পাড়াগুলোতে। নামাজের মধ্যেই সীমাবদ্ধ যেন তাদের ঈদ। নামাজ শেষে পশু কোরবানি দিতে নয় জাল-নৌকা নিয়ে নদীতে গেছেন অনেক জেলে। আর সমুদ্রগামী জেলেরা কাটাচ্ছেন অলস সময়। অধিকাংশ ঘরের চুলায় আজও রান্না হয়েছে সামান্য ডাল ভাত।

একের পর এক নিষেধাজ্ঞা, জেলেদের জন্য আসা সহায়তা না পাওয়াসহ নানা কারণে ঈদ আনন্দ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন জেলেরা। সমুদ্রগামী জেলেদের রোজগার বন্ধ হয়ে আছে ২০ মে থেকে। কারণ সমুদ্রে চলছে ৬৫ দিনের জন্য সব ধরনের মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা। কোরবানি দেওয়া তো দূরের কথা জেলেরা এখন পরিবারের সদস্যদের জন্য তিনবেলা ডাল-ভাত জোগাড় করতেই হিমশিম খাচ্ছে। ধার দেনায় জর্জরিত তারা সবাই।

বিষখালী নদীর বাঁধ সংলগ্ন ছোট একটি ঘরে সমুদ্রগামী জেলে সিরাজ উদ্দিনের স্ত্রী রান্না করছেন ঈদের দিনটিতে। তবে তার রান্নায় কোনো মাংস নেই, রয়েছে ডাল, সবজি ও ভাত।

জোটেনি কোরবানির মাংস, ডাল-সবজিতেই ভরসা জেলে পরিবারের

কান্নাজড়িত কণ্ঠে জাগো নিউজকে তিনি বলেন, ‘গ্রামের দু-একটি বাড়িতে দেওয়া হয়েছে কোরবানি। এখনো তাদের কাছ থেকে কোরবানির মাংস পাইনি। বাজারে যে দামে মাংস বিক্রি হয় তা কেনার সামর্থ্য নেই। ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পর কোনো চাল সহায়তাও পাইনি। তাই এখন তিন ছেলে-মেয়েকে নিয়ে খেয়ে বাঁচাই দায়।’

জোটেনি কোরবানির মাংস, ডাল-সবজিতেই ভরসা জেলে পরিবারের

কাঁধে জাল নিয়ে বিষখালী নদীপাড়ের ছোট রাস্তাটি ধরে হেঁটে চলা জেলে মুনসুর মোল্লার সঙ্গে কথা হয় জাগো নিউজের। তিনি বলেন, ‘এক সময় বছরের ৩৬৫ দিনই নদী ও সমুদ্রে মাছ ধরতাম। বর্তমানে মা ইলিশ সংরক্ষণে ২২ দিনের জন্য সমুদ্র ও নদীতে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার। সেই নিষেধাজ্ঞা শেষ করার ৮ থেকে ১০ দিনের মধ্যেই আবার জাটকা সংরক্ষণে উপকূলীয় নদী ও সমুদ্র মোহনায় দেওয়া হয় ২৪২ দিনের জন্য নিষেধাজ্ঞা। এর কিছুদিনের মধ্যেই আসে ৬৫ দিনের জন্য সমুদ্রে মাছ ধরার ওপর আরেক নিষেধাজ্ঞা। সব মিলিয়ে বছরের ৩৬৫ দিনের ৩২৯ দিনই কোনো না কোনো নিষেধাজ্ঞা চলতে থাকে সমুদ্র বা নদীতে। তাই বারবারই বেকার হয়ে পরিবার নিয়ে থাকতে হয় অর্ধাহারে অনাহারে।’

জোটেনি কোরবানির মাংস, ডাল-সবজিতেই ভরসা জেলে পরিবারের

তিনি আরও বলেন, ‘যেখানে পেটের ক্ষুধা, সেখানে আনন্দ বা উৎসব যেন কালো ছায়া।’

পাথরঘাটা মৎস্যজীবীদের নেতা বাংলাদেশ ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি মোস্তফা চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, ‘কখোনো সমুদ্রগামী জেলেরা বেকার থাকে আবার কখনো নদীতে মাছ ধরা জেলেরা বেকার থাকে। তবে প্রকৃত জেলেরা সহায়তা পায় না। জনপ্রতিনিধিরা প্রতিবারই কিছু জেলেদের সঙ্গে ভিন্ন পেশার কাছের লোকদের দিয়ে দেন সহায়তা। ফলে নিষেধাজ্ঞার সময় বছরজুড়েই করুণ অবস্থা চলতে থাকে জেলেদের। তাই এখন শুধু ঈদ নয় কোনো উৎসবই আনন্দ নিয়ে আসে না জেলেদের জন্য।’

জোটেনি কোরবানির মাংস, ডাল-সবজিতেই ভরসা জেলে পরিবারের

পাথরঘাটা উপজেলা চেয়ারম্যান মোস্তফা গোলাম কবির জাগো নিউজকে বলেন, প্রতিটি ইউনিয়নে যে পরিমাণ জেলে আছে তার অর্ধেকও বরাদ্দ দেওয়া হয় না। তাই বরাদ্দ পাওয়া সহায়তা বিতরণে প্রতিবার অভিযোগের শেষ থাকে না জেলেদের। সমস্যা সমাধানে বরাদ্দ বাড়ানোর চেষ্টা করে যাচ্ছি। তবে ইউপি সদস্যরা মাঝে মধ্যে স্বজনপ্রীতি করে জেলেদের বাইরে ভিন্ন পেশার মানুষদের সহায়তা দিচ্ছেন বলে অভিযোগ আসে। তা বন্ধে চেয়ারম্যানদের সচেতন হতে বলা হয়েছে।

এসজে/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।