খাঁচায় মাছচাষের স্বপ্ন আর সফল হলো না চাষিদের

জাগো নিউজ ডেস্ক
জাগো নিউজ ডেস্ক জাগো নিউজ ডেস্ক ঈশ্বরদী (পাবনা)
প্রকাশিত: ১২:১৭ পিএম, ১০ আগস্ট ২০২২

পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলায় পদ্মা নদীতে ভাসমান খাঁচায় মাছচাষ করে দিন বদলের স্বপ্ন দেখেছিলেন চাষিরা। মাছচাষের নতুন এই পদ্ধতি দেখে বেকার যুবকরাও আগ্রহী হয়েছিলেন। কিন্তু করোনার ভয়াল থাবা ও মাছের খাদ্যের মূল্যবৃদ্ধিতে একের পর এক বন্ধ হয়ে যাচ্ছে নদীতে ভাসমান খাঁচায় মাছচাষ।

উপজেলার পদ্মা নদীর পাঁচটি স্থানে খাঁচায় মাছচাষ শুরু হলেও এখন শুধুমাত্র লক্ষ্মীকুণ্ডা ইউনিয়নের দাদাপুরের একটি ছাড়া অন্যগুলো সব বন্ধ হয়ে গেছে।

fish7

উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে ঈশ্বরদী উপজেলায় পদ্মা নদীতে বাণিজ্যিকভাবে ১০৪টি ভাসমান খাঁচায় মাছ চাষ শুরু হয়। সেসময় উপজেলা মৎস্য অফিস থেকে ভাসমান খাঁচায় মাছ চাষে তরুণ মৎস্যচাষীদের উদ্বুদ্ধ করা হয়।

পাশাপাশি ভাসমান খাঁচা তৈরি ও মাছের পোনা দিয়ে সহযোগিতা ছাড়াও চাষিদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। কিন্তু পরবর্তীতে মাছের খাদ্যের অধিক মূল্য, শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধি ও খাঁচা তৈরির সরঞ্জামের দাম বেড়ে যাওয়ায় খাঁচায় মাছচাষে উৎসাহ হারিয়ে ফেলছেন এখানকার মৎস্যচাষিরা। পাশাপাশি আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ে পুঁজি হারিয়ে অনেকে মাছচাষ বন্ধ করে দিয়েছেন। অতি দ্রুত কার্যকর কোনো পদক্ষেপ না নিলে সম্ভাবনাময় এই মাছচাষ পদ্ধতি ঈশ্বরদীতে বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে।

fish7

সাঁড়া ইউনিয়নের মাজদিয়া বড়পাড়ার খাঁচায় মাছচাষি নাসির উদ্দিন জানান, ২০১৮ সালে মৎস্য সমিতি গঠন করে মাজদিয়ায় খাঁচায় মাছচাষ শুরু হয়। প্রথম বছর কিছুটা লাভ হলেও করোনা শুরু হওয়ার পর থেকেই লোকসান হতে থাকে। একপর্যায়ে বিনিয়োগের সাড়ে তিন লাখ টাকা সবই লোকসানের খাতে চলে গেলে ২০২১ সালে মাছচাষ বন্ধ হয়ে যায়।

fish7

মাজদিয়া মৎস্য সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক নবিউল ইসলাম জাগো নিউজকে জানান, মাজদিয়া বড়পাড়ায় ২৭টি খাঁচায় মাছচাষ শুরু হয়। প্রথম বছরের সফলতার স্বীকৃতি স্বরূপ উপজেলা মৎস্য অফিস থেকে পদক দেওয়া হয়। ২০২০ সালে করোনা শুরুর পর মাছের দাম কমে যাওয়ায় লোকসান হতে শুরু হয়। এরপর ২০ হাজার তেলাপিয়া মাছের পোনা বিক্রি করে ৮০ হাজার টাকা ক্ষতি হয়। জাল ছিঁড়ে মাছ নদীতে ভেসে যাওয়ায় লোকসানের পরিমাণ বেড়ে যায়। ক্রমাগত লোকসানে সমিতির সদস্যরা খাঁচায় মাছচাষের উৎসাহ হারিয়ে ফেলেন।

সাঁড়া ইউপি চেয়ারম্যান ও মাজদিয়া মৎস্য সমিতির সভাপতি এমদাদুল হক রানা সরদার জাগো নিউজকে বলেন, ২০১৮ সালে এলাকার বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে একটি সমিতি গঠন করে খাঁচায় মাছচাষ শুরু করি। আরামবাড়িয়া, মাজদিয়া স্কুলপাড়া ও মাজদিয়া বড়পাড়ায় ৮৪টি খাঁচা তৈরি করে শুরু হয় মাছচাষ। প্রথম বছর সফলতা পেলেও পরের বছর থেকেই লোকসান শুরু হয়। সমিতির ৩৪ সদস্যের মধ্যে অনেকেই মাছচাষের প্রতি অনিহা প্রকাশ করতে থাকেন। একপর্যায়ে বন্ধ হয়ে যায় মাছচাষ।

fish7

উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা শাকিলা জাহান জাগো নিউজকে জানান, মাছের খাদ্যের দাম বেড়ে গেছে। এর প্রভাব মাছ চাষের ওপর পড়েছে। খাঁচায় মাছচাষিদের তেলাপিয়া মাছের পাশাপাশি গ্লাসকার্প ও স্বরপুঁটি মাছ চাষ করতে হবে। এসব মাছের খাদ্য হিসেবে ফিডের পাশাপাশি ন্যাচারাল খাবার দেওয়া যায়। আমি আশাবাদী যেসব স্থানে খাঁচায় মাছচাষ বন্ধ রয়েছে সেগুলো পুনরায় চালু হবে।

এফএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।