খড়ের মূল্যবৃদ্ধি, বিপাকে গাইবান্ধার খামারিরা

গাইবান্ধা সদর উপজেলার প্রফেসর কলোনির যুবক কামরান পাঁচ বছর ধরে গরুর খামার করছেন। কিছুদিন আগে তার খামারে সাতটি গাভি ছিল। খামার থেকে যা আয় হয় তা দিয়ে চলে সংসার। তবে বর্তমানে খড় সংকট ও গো-খাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন তিনি। গরুগুলোকে পর্যাপ্ত খাবার দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাকে। তাই বাধ্য হয়ে গত এক মাসে একে একে খামারের পাঁচটি গাভি বিক্রি করে দিয়েছেন।
শুধু কামরান নয়, তার মতো অনেক খামারি গো-খাদ্যের দাম বাড়ায় গরু পালনে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। খাবারের যোগান দিতে না পেরে বাধ্য হয়ে গরু বিক্রি করে দিচ্ছেন অনেকে।
প্রফেসর কলোনির আরেক খামারি বাবু মিয়া বলেন, মাঠে আর আগের মতো ঘাস নেই। কয়েকমাস ধরে ভুসি, বুটের খোসা, ফিডের বেড়েই চলেছে। এবার খড়ের দামও বাড়ছে। খামারিরা কীভাবে গরু পালন করবে? গরু পালন করে আর লাভ নেই, তাই বিক্রি করে দিয়েছি।
জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, জেলায় ছোট–বড় মিলে দুগ্ধ খামার রয়েছে ১০ হাজার ৭৩০টি, গরু মোটাতাজাকরণ খামার রয়েছে ১০ হাজার ৬৪৩ টি, ছাগলের খামার আছে ৪ হাজার ৮৬৪ টি ও মুরগির খামার রয়েছে ৪ হাজার ৪৬টি। এছাড়া গৃহপালিত প্রায় ৯ লাখের বেশি গরু কৃষকদের ঘরে আছে।
খামারিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ভুসি, বুটের খোসা, ফিডের পাশাপাশি গরুর অন্যতম প্রধান খাদ্য খড়ের দাম বাড়ায় অনেক খামারি গরু বিক্রি করে দিচ্ছেন।
জেলার বিভিন্ন হাট-বাজার ঘুরে ক্রেতা ও বিক্রেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ভুসি বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৬৫ থেকে ৭০ টাকা, কিছুদিন আগে যা ছিল ৫০ টাকা। কলাইয়ের খুদ ও খৈল বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা কেজি, যা আগে ছিল ৫০ টাকা। প্রতি কেজি চালের খুদ বিক্রি হচ্ছে ৪৫ টাকায়, যা আগে ছিল ৩৫ টাকা। ধানের গুড়া ৫০ কেজির বস্তা বিক্রি হচ্ছে ৯৫০ থেকে ১০০০ টাকা, যা আগে ছিল ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা। ভুট্টার গুড়া বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা কেজি, যা আগে ছিল ৪০ টাকা। এছাড়া গরুর প্রধান খাদ্য খড়ের মণও বিক্রি হচ্ছে ১২০০ থেকে ১৩০০ টাকা।
কথা হয় সদর উপজেলার কামারজানি গো-ঘাট গ্রামের খামারি করিম মণ্ডলের সঙ্গে। তিনি বলেন, খড়ের দাম বেশি হওয়ায় গরু-বাছুর নিয়ে খুব বিপদে আছি। না পারছি বিক্রি করতে, না পারছি খাবার দিতে। এরকম অনেক খামারিই গরু নিয়ে বিপদে পড়েছে। কেউ কেউ গরু বিক্রি কর দিচ্ছে।
গোদারহাট গ্রামের শাহাজাহান মিয়া জানান, দেশি-বিদেশি মিলে তার পাঁচটি গরু রয়েছে। মাসখানেক ধরে তিনি খড় কিনে খাওয়াচ্ছেন। এতে করে তার ব্যয় হচ্ছে দ্বিগুণ। তিনি দাবি করেন, গরু বিক্রি করে লাভ তো দূরের কথা, দ্বিগুণ লোকসান গুনতে হবে।
কথা হয় ফুলছড়ি উপজেলার কালাসোনা চরের খামারি হাবিবুর রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘গরু না বেচি করমো কী বাহে? গরুর খাবারের জন্য আবাদের পল (খড়) আছিলো, ভুসির দাম বাড়লেও এতদিন কিছু মনে হয় নাই। পল কোনা শ্যাস হয়া ছয় টাকার পলের আঁটি এখন ১৪ থেকে ১৫ টাকা কেনা লাগতেছে। কেমনে গরু পালমো বাহে?’
সুন্দরগঞ্জের উপজেলার কাপাসিয়া চরের খামারি হায়দার আলী বলেন, ‘হামার (আমার) গরু মোটাতাজা করার ছোট একটা খামার আছে। এখন আর গরু মোটাতাজা করি পোষায় না। এবার তো খড়োত আগুন লাগছে। ঠিকমতো খাবার দিবার না পায়া গরুগুলা শুকি যাচ্ছে। উপায় না পায়া লস করি হলেও গরু বেচমো।’
সদর উপজেলার কাউন্সিলর বাজারের খড় ব্যবসায়ী মনজু মিয়া জানান, দিনাজপুর, বগুড়াসহ বিভিন্ন জেলা থেকে ট্রাকযোগে খড় নিয়ে এসে বিক্রি করতে হচ্ছে। আমদানি কম থাকায় ও ট্রাক ভাড়া দ্বিগুণ হওয়ায় বেশি দামে খড় বিক্রি করতে হচ্ছে।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মাসুদার রহমান বলেন, এবছর গাইবান্ধায় খড়ের সংকট দেখা দিয়েছে। এ নিয়ে বিচলিত না হয়ে ঘাস চাষের পরামর্শ দেন তিনি।
তিনি বলেন, দানাদার খাদ্যের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে হবে এবং খড়ের অপচয় রোধ করতে হবে।
এমআরআর/এএসএম