ইউপি সদস্য আকলিমার থাকার ঘর নেই, অন্যের বাড়িতে মানবেতর জীবন

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি মানিকগঞ্জ
প্রকাশিত: ০৪:৪০ পিএম, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২২

দুইবারের ইউপি সদস্য। তবে নিজস্ব বাড়িঘর নেই। প্রায় দেড়যুগ ধরে বসবাস করেন অন্যের বাড়িতে। ছয়টি টিন দিয়ে নির্মিত জরাজীর্ণ ছাপরায় ছয় সদস্যের পরিবার নিয়ে মানবেতর দিন কাটছে। ভূমিহীনের তালিকায় নাম উঠলেও সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পে আশ্রয় পাননি।

এ চিত্র মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার তেওতা ইউনিয়ন পরিষদের ৪, ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত নারী সদস্য আকলিমা বেগমের। সহায়-সম্বল না থাকলেও পরোপকারী মানুষ হিসেবে আকলিমাকে নির্বাচিত করেন এলাকাবাসী।

Manik-(6)

তেওতা ইউনিয়নের কৃঞ্চপুর গ্রামে প্রতিবেশী মরণী হালদারের বাড়িতে বসবাস করেন ইউপি সদস্য আকলিমা বেগম।

সরেজমিন দেখা যায়, আকলিমা বেগমের থাকার একমাত্র ছাপরাটি জরাজীর্ণ। ঘরের বেড়া ভাঙাচোরা। কিছু অংশে পলিথিন দিয়ে ঘেরা। ঘরের সঙ্গে টয়লেট।পলিথিন দিয়ে টয়লেটের বেড়া দেওয়া হয়েছে। একটি টেবিল ছাড়া ঘরে কোনো আসবাবপত্র নেই। ওই ঘরেই স্বামীসহ আকলিমা বসবাস করেন। বারান্দায় স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে থাকেন তার ছেলে।

Manik-(6)

ইউপি সদস্য আকলিমা বেগমের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, একসময় তার বাড়িঘর ছিল। কিন্তু অসুস্থ স্বামীর চিকিৎসাসহ নানা সমস্যায় ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েন তিনি। একপর্যায়ে বাড়িঘর বিক্রি করে দিতে বাধ্য হন। এরপর প্রতিবেশী মরণী হালদারের বাড়িতে আশ্রয় নেন। সেখানে প্রায় দেড়যুগ ধরে বসবাস করছেন।রিকশাচালক ছেলের উপার্জনে কোনোমতে সংসার চললেও ঘর মেরামত করতে পারছেন না। মাঝে মধ্যেই বাড়ির মালিক তাকে জায়গা ছাড়তে চাপ দেন।

আকলিমা বেগম জাগো নিউজকে বলেন, ‘মানুষ আমাকে ভালোবাসে। তাই ইউপি সদস্য বানিয়েছেন। সারাদিন তাদের সুখ-দুখের কথা শুনি। বিপদে-আপদে পাশে দাঁড়াই। কিন্তু নিজের কষ্টের কথা কার কাছে বলবো? একটা ঘর আর জায়গার জন্য কয়েক বছর ধরে ঘুরছি। চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়—কেথাও ঘোরা বাদ দেইনি। তারা সবাই আশ্বাস দেন। কিন্তু একটু মাথা গোঁজার ঠাঁই পেলাম না। কপালে কষ্ট থাকলে কী করুম বাবা?’ বলেই কেঁদে ফেলেন তিনি।

Manik-(6)

আকলিমার পুত্রবধূ হাসনা বেগম বলেন, ‘ভাঙাচোরা ঘরে ঝড়বৃষ্টির সময় সব কিছু গুছিয়ে বসে থাকতে হয়। বৃষ্টির পানিতে সব নষ্ট হয়ে যায়। রান্নাঘর নাই।লাকড়ি রাখার জায়গা নাই। খুবই কষ্টে দিন কাটছে আমাদের।’

কয়েকজন প্রতিবেশী জানান, আকলিমা বেগম পরোপকারী মানুষ। এজন্যই সবাই তাকে ভোট দিয়ে ইউপি সদস্য বানিয়েছেন। কিন্তু তার ঘরবাড়ি না থাকায় খুবই মানবেতর দিন কাটছে। তার কষ্ট দূর করতে সরকারের কাছে ঘর ও জমি বরাদ্দের দাবি জানান তারা।

Manik-(6)

একই দাবি করেন তেওতা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মোশারফ হোসেন। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘ইউপি সদস্য আকলিমার করুণ দশা দেখা তাকে নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে গিয়েছিলেন। তিনি আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু এখনো সমস্যা সমধানের কোনো উদ্যোগ নেই।’

আকলিমার ওয়ার্ডে জমদুয়ারা বাজারে নির্মিত হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর উপহার আশ্রয়ণের ঘর। স্থানীয় সূত্র জানায়, এই প্রকল্পের মাটি ভরাট কাজের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন তিনি।

Manik-(6)

এ বিষয়ে শিবালয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. জাহিদুর রহমান বলেন, ‘ইউপি সদস্য আকলিমা বেগমের বিষয়টি আমি জানি। তিনি আমার কাছে এসেছিলেন। তার ভূমিহীন সার্টিফিকেট পেয়েছি। আমারা তাকে লিস্টেট (তালিকাভুক্ত) করার প্রক্রিয়ায় আছি। উপজেলা টাস্কফোর্স কমিটির মাধ্যমে আমরা তাকে তালিকাভুক্ত করে ঘর দেওয়ার ব্যবস্থা করবো।’

বি.এম খোরশেদ/এসআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।