মেয়ের বোন ক্যানসার চিকিৎসায় দিনমজুর বাবার সাহায্যের আকুতি

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি ঝিনাইদহ
প্রকাশিত: ১১:৪০ এএম, ০৮ অক্টোবর ২০২২
ক্যানসার আক্রান্ত সুমাইয়া ও তার মা

আমি অসুস্থ হওয়ার পর থেকে আর স্কুলে যেতে পারি না। আমি বন্ধুদের সঙ্গে আবার স্কুলে যেতে চাই, পড়ালেখা করতে চাই। বন্ধুরা খেলাধুলা করে, হেঁটে বেড়ায়, আমি তো পারি না। আমি ঠিকঠাক দাঁড়াতেই পারি না।

ডাক্তাররা আমাকে বলেছেন, আমার পায়ে অপারেশন করতে হবে। যদি না করতে পারি, তাহলে পা কেটে ফেলতে হবে। আমার বাবা দিনমজুর। অপারেশনের টাকা জোগাড় করতে পারছেন না। টাকার জন্য কী আমি আর বন্ধুদের সঙ্গে খেলতে পারবো না? স্কুলে যেতে পারবো না?

এভাবেই মলিন চেহারায় কথাগুলো বলছিল বোন ক্যানসারে আক্রান্ত ঝিনাইদহ জেলার সদর উপজেলার গোপীনাথপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী সুমাইয়া (১১) ।

জানা গেছে, সুমাইয়ার বাবা মো. ফারুক মুন্সীর গ্রামের বাড়ি কুমড়াবাড়ি হলেও তিনি দীর্ঘ ২০ বছর ধরে শহরে দিনমজুরের কাজ করতেন। পাশপাশি একটি ভাড়া বাসায় স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে বসবাস করতেন।

মেয়ে অসুস্থ হওয়ার পর থেকে তারা সদর উপজেলার গান্না ইউনিয়নের আলামপুর গ্রামে সুমাইয়ার মামার বাড়িতে বসবাস করছেন।

আলামপুর গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, দুই কক্ষের আধাপাকা একটি বাড়িতে বসবাস করছেন তারা। বাড়ির উঠানের একপাশে বসে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে কী যেন ভাবছেন সুমাইয়ার বাবা। এদিকে ঘরে দুপুরের খাবার না থাকায় সুমাইয়ার মা লাভলি খাতুন সজনেপাতা জোগাড় করে এনেছেন। সেগুলো তেলে ভেজে দুপুরের খাবারের বন্দোবস্ত করছেন তিনি।

সুমাইয়ার বাবা মো. ফারুক মুন্সী বলেন, আমি গরিব মানুষ, দিন আনি দিন খাই। শহরের একটি বাসায় ভাড়া থাকতাম। ছেলে-মেয়েকে গোপীনাথপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াতাম। বর্তমানে টাকার অভাবে তাদের লেখাপড়া বন্ধ হয়ে গেছে।

‘মেয়েটা ছোট থেকেই মাঝেমধ্যে বলতো, আব্বু আমার পায়ে ব্যথা করছে। পায়ের মধ্যে চাবাচ্ছে, কামড় দিচ্ছে। আমার পা টিপে দাও। আবার মাঝেমধ্যে বলতো, পায়ে শক্তি পাচ্ছি না। আমি ভাবতাম, ওর হয়তো বাতের সমস্যা আছে। এজন্য মাঝেমধ্যে পা টিপেও দিতাম।’

ফারুক মুন্সী বলেন, হঠাৎ একদিন হাঁটতে গিয়ে পড়ে যায় সুমাইয়া। এতে বাম পায়ের হাঁটুর নিচে চোট লাগে। এরপর থেকে আর উঠতে পারে না, দাঁড়াতেও পারে না। এমন অবস্থায় ওকে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে ডাক্তাররা পরীক্ষা করে জানান, ওর পায়ের হাড় নষ্ট হয়ে গেছে।

ডাক্তার আমাকে বকাবকি করে বলেন, এত দেরি করে কেন এসেছেন? মেয়ের পা নষ্ট হয়ে গেছে। ডাক্তারের কাছে পরামর্শ চাইলে তিনি ঢাকায় নিয়ে যেতে বলেন। তখন আমি মনে করি, সদর হাসপাতালে চিকিৎসা ভালো হয়নি। পরে শহরের ইসলামী হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানকার ডাক্তারও একই কথা বলেন ও ঢাকার মহাখালী ক্যানসার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন।

তিনি বলেন, ইসলামী হাসপাতাল থেকে মহাখালী ক্যানসার হাসপাতালের সিরাজুল ইসলাম নামের এক ডাক্তারকে দেখানোর কথা বলে দেওয়া হয়। মেয়েকে সেখানে নিয়ে গেলে ডাক্তার অনেক পরীক্ষা দেন। সে সময় আনুষঙ্গিক খরচসহ ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা খরচ হয়ে যায়।

এরপর ডাক্তার জানান, সুমাইয়ার পায়ের হাড় নষ্ট হয়ে গেছে। জায়গায় জায়গায় ছিদ্র হয়ে গেছে। এমনকি, টিউমার থেকে বোন ক্যানসারে রূপান্তরিত হয়েছে। এখন সেগুলো কেটে হাড়ের ছিদ্রের মধ্যে রিং বসাতে হবে। আর এ অপারেশনে ব্যয় হবে ২ লাখ ৭৫ হাজার টাকা।

ফারুক মুন্সী বলেন, ডাক্তার তিন মাস সময় দিয়েছেন। এর মধ্যে অপারেশন করাতে না পারলে মেয়েটার পা রক্ষা করা সম্ভব হবে না। দুই মাস পার হয়ে গেছে, কিন্তু টাকা এখনো জোগাড় করতে পারিনি। মাত্র ১০ হাজার টাকা আছে।

‘আমি গরিব মানুষ। পরিবারের জন্য খাবারই জোটাতে পারছি না, এত টাকা কোথায় পাবো? মেয়েকে কীভাবে সুস্থ করব?

তিনি আরও বলেন, মেয়ের চিকিৎসার জন্য সাহায্য চাইতে গেলে সবাই আমাকে বলে, জোয়ান মানুষ সাহায্য চাচ্ছেন কেন? আবার অনেকে ৫-১০ টাকা করে দিচ্ছেন। তবে এখন লজ্জ্বায় আর কোথাও যাচ্ছি না। মানুষ নানা রকম কথা বলে। আমি সমাজের বিত্তবানদের কাছে সাহায্যের আবেদন জানাচ্ছি। তারা একটু সহযোগিতা করলে আমার মেয়েটা সুস্থ হয়ে উঠবে।

সুমাইয়ার মা লাভলি খাতুন বলেন, মেয়ের মুখের দিকে তাকাতে পারি না। তাকালেই খুব খারাপ লাগে। ও হাঁটতে পারে না, স্কুলে যেতে পারে না। সবসময় শুয়ে থাকে। কাত হয়ে শুতে পারে না, বসতেও পারে না। কী করে বাঁচাবো আমাদের মেয়েটাকে। ঢাকার ডাক্তাররা বলেছেন, টাকা হলে চিকিৎসা হবে। মেয়েটা আমার আবার আগের মতো হয়ে যাবে।

প্রতিবেশীরা বলন, পরিবারটি অনেক অসহায়। মেয়ের চিকিৎসা করার কোনো সাধ্য তাদের নেই। সমাজে অনেক বিত্তবান মানুষ আছেন। তারা যদি একটু এগিয়ে আসেন, তাহলে মেয়েটা সুস্থ স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে পারবে।

গান্না ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আতিকুল হাসান মাসুম বলেন, আমি মেয়েটির বাড়িতে গিয়ে দেখে এসেছি, কিছু সহযোগিতাও করেছি। তবুও তার চিকিৎসার জন্য অনেক টাকার প্রয়োজন। সমাজের বিত্তবানরা যদি এগিয়ে আসেন, তাহলে সঠিক চিকিৎসা পেয়ে শিশুটি আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে পারবে।

সুমাইয়ার মা লাভলি খাতুনের মোবাইল ফোন নম্বর: ০১৯৯৮৪১০৫৫৮

আব্দুল্লাহ আল মাসুদ/এসএএইচ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।