সাতক্ষীরা বড়বাজার

জায়গা না থাকায় রাস্তা বন্ধ করে বসছে কাঁচাবাজার

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি সাতক্ষীরা
প্রকাশিত: ০৫:২৪ পিএম, ২৫ ডিসেম্বর ২০২২

সাতক্ষীরা শহরের প্রাণকেন্দ্র প্রাণসায়র খালপাড়ের সুলতানপুর বড়বাজার। এটি জেলার সবচেয়ে পুরাতন পাইকারি ও খুচরা বাজার। প্রতিদিন কয়েক কোটি টাকার শাকসবজি, ফল, মাছ-মাংসসহ সব ধরনের নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী কেনাবেচা হয় এই বাজারে।

বাজারে মাছ-মাংস ও চাল বিক্রেতাদের জন্য নির্ধারিত সরকারি টিনশেড থাকলেও কাঁচাবাজারের জন্য কোনো নির্ধারিত স্থান না থাকায় পৌরসভার চলাচলের রাস্তার ওপর চলে কাঁচাবাজার। সড়কের দুইপাশে বেশিরভাগ জায়গা দখল করে বসানো হয়েছে এসব দোকান। এতে প্রতিদিন সড়কে যানজট সৃষ্টি হয়ে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে এলাকাবাসীকে।

ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, প্রতিবছর কোটি টাকা রাজস্ব দেওয়া হলেও সাতক্ষীরার সুলতানপুর বড়বাজারে কাঁচামাল বিক্রেতাদের জন্য কোনো শেড নির্মাণ করা হয়নি। নির্ধারিত স্থান না থাকায় কাঁচাবাজার চলে রাস্তার ওপর।

বড়বাজারের কাঁচামাল ব্যবসায়ী ইদ্রিস আলী জাগো নিউজকে বলেন, কাঁচামাল বেচাবিক্রির জন্য বাজারে কোনো নির্ধারিত জায়গা নেই। বাধ্য হয়ে অন্যের দোকানের সামনে মাসিক ভাড়া ও খাজনা দিয়ে রাস্তার ওপর ব্যবসা করতে হয়।

তিনি বলেন, সাতক্ষীরা বড়বাজারে প্রতিদিন প্রায় ৪০০ কাঁচামাল ব্যবসায়ী রাস্তার ওপর বসেই দুই কোটি টাকার পণ্য কেনাবেচা করেন। এছাড়া এখানকার আড়তগুলোতে যশোর, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদাহসহ বিভিন্ন জেলা থেকে সবজি ও ফল বিক্রি করতে আসেন ব্যবসায়ীরা।

কাঁচামাল ব্যবসায়ী মো. বাপ্পি জাগো নিউজকে বলেন, বাজারে আমাদের বসার কোনো জায়গা নেই। মাছ বাজারে টিনের শেড আছে, চাল বাজারের জন্যও শেড আছে। কিন্তু আমরা ব্যবসা করছি রাস্তার পাশে। এখানে যে দোকানের সামনে বসি, তাকে ভাড়া দেওয়া লাগে, আবার বাজারের ইজারাদারদের খাজনার টাকা দিতে হয়। ফলে আমরা রাস্তায় বসে পরিশ্রম করে যে টাকা আয় করি তার বড় একটি অংশ অন্যকে দিয়ে দিতে হয়।

তিনি বলেন, এভাবে রাস্তায় বসার কারণে অনেক সময় রোদে শাকসবজি শুকিয়ে যায় পচে যায়।

এদিকে, কাঁচামাল ব্যবসায়ী নেতারা বলছেন, এই বাজার থেকে কয়েকবছরে পৌরসভাকে কোটি টাকার রাজস্ব দেওয়া হয়েছে। অথচ বাজারের উন্নয়নে কোনো পদক্ষেপ নেই। বিষয়টি জনপ্রতিনিধি, পৌর মেয়রসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বারবার জানিয়েও কোনো সুরাহা হয়নি। ফলে দীর্ঘদিন ধরে ভোগান্তি নিয়েই খুচরা বিক্রেতাদের রাস্তার ওপর ব্যবসা করতে হচ্ছে।

সাতক্ষীরা কাঁচাবাজার সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহিম বাবু জাগো নিউজকে বলেন, গত কয়েক বছরে বড়বাজারের কেবল কাঁচামাল ব্যবসায়ীদের থেকে ৮০ লাখ টাকা রাজস্ব দেওয়া হয়েছে। চলতি অর্থবছরের ছয় মাসে ২০ লাখ টাকা রাজস্ব দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, বড়বাজারের রাস্তাটির অনেক খারাপ অবস্থা। এটি দীর্ঘদিনেও সংস্কার করা হয়নি। এছাড়া কাঁচাবাজারের জন্য সরকার নির্ধারিত কোনো জায়গা না থাকায় বাধ্য হয়ে রাস্তার পাশে বেচাকেনা করতে হয়। এসব দোকানে মূলত খুচরা ব্যবসায়ীরা বসেন। বড়বাজারের কাঁচামালের আড়তগুলো সব নিজস্ব জায়গায় বা অন্যের দোকান ভাড়া নিয়ে চলছে। কোনো আড়ত রাস্তার ওপর মালামাল কেনাবেচা করে না।

সাতক্ষীরা কাঁচাবাজার সমিতির সভাপতি কাজী কবিরুল হাসান বাদশা জাগো নিউজকে বলেন, সুলতানপুর বড়বাজারে প্রতিদিন কয়েক কোটি টাকার কাঁচামাল কেনাবেচা হয়। এখানকার খুচরা কাঁচামাল ব্যবসায়ীরা রাস্তার ওপর বসে ব্যবসা করেন। তাদের বসার জন্য কোনো সরকারি নির্ধারিত স্থান নেই। মাথার ওপর কোনো চাল নেই। এজন্য বাধ্য হয়ে রাস্তার ওপর বসতে হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে আমি একাধিকবার এমপি, পৌর মেয়রসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। তবে পৌর কর্তৃপক্ষ আমাদের আশ্বাস দিলেও তা বাস্তবায়ন হয় না।

এ বিষয়ে সাতক্ষীরা পৌরসভার প্যানেল মেয়র কাজী ফিরোজ হাসান জাগো নিউজকে বলেন, সুলতানপুর বড়বাজারের অধিকাংশ জায়গা জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে ইজারা নেওয়া। কাঁচাবাজারের জন্য কোনো জায়গা নেই। এছাড়া আমাদের পৌরসভার আর্থিক বরাদ্দ না থাকায় ইচ্ছা সত্ত্বেও অবকাঠামো নির্মাণ ও সম্প্রসারণ করা যাচ্ছে না। তবে জেলা প্রশাসন থেকে জায়গা বরাদ্দ পেলে আমরা কাঁচাবাজারের জন্য টিনশেড নির্মাণ করে দেব।

আহসানুর রহমান রাজীব/এমআরআর/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।