শত বছরের ঐতিহ্য কানাইলাল কুঞ্জ মেলা

উপজেলা প্রতিনিধি উপজেলা প্রতিনিধি কালীগঞ্জ (গাজীপুর)
প্রকাশিত: ০৬:১২ পিএম, ০৬ জানুয়ারি ২০২৩

গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার তুমলিয়া ইউনিয়নের চুয়ারিয়াখোলা গ্রামে বসে শ্রী কানাইলাল কুঞ্জ মেলা। এ বছর মেলাটি ১০১ বছরে পা দিলো। দুইদিনের এই মেলা বসে ইংরেজি নতুন বছর অর্থাৎ জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে এবং পৌষ মাসের শেষের দিকে।

Kaligonj-3

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার চুয়ারিয়াখোলা গ্রামের শ্রী শ্রী কানাইলাল মন্দির কমিটির উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী কুঞ্জ মেলার আয়োজন করা হয়। মেলার প্রথম দিন খাবার সামগ্রী ও দ্বিতীয় দিন মাছের পসরা নিয়ে বসেন বিক্রেতারা।

Kaligonj-3

রাধা-কৃষ্ণ যুগলের লীলাকীর্তি উপলক্ষে সনাতন ধর্মের লোকজন এ মেলার আয়োজন করেন। সনাতন ধর্মের লোকজন টানা ১৫ দিন নিরামিষ খান। মেলার শেষ দিন আমিষ খাদ্য গ্রহণ ও পূজা-অর্চনার মধ্য দিয়ে শেষ করেন তাদের আনুষ্ঠানিকতা। মেলায় জামাতা ও আত্মীয়-স্বজনকে আমন্ত্রণ করে আপ্যায়ন করার রেওয়াজও চলে এসেছে সেই প্রাচীনকাল থেকেই। বাড়িতে বাড়িতে বানানো হয় খই, মুড়কি, নারিকেল ও চালের নাড়ু। মেলা থেকে দই কিনে নিয়ে মুড়কি দিয়ে খাওয়ার রেওয়াজটিও ধরে রেখেছেন স্থানীয়রা।

Kaligonj-3

সরেজমিন শুক্রবার (৬ জানুয়ারি) সকালে মেলা প্রাঙ্গণে দেখা যায়, পণ্যের পসরা নিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ও স্থানীয় বিভিন্ন এলাকা থেকে এসেছেন শতাধিক ব্যবসায়ী। মিষ্টান্ন, খেলনা, চুড়ি, ফিতা, আলতা থেকে গৃহস্থালির বিচিত্র জিনিসের সমারোহ। মেলায় নিমকি-মুড়কি, ফুচকা-চটপটি, ঝালমুড়ি-চানাচুর, মিষ্টি ও জিলাপি বিক্রি করা হচ্ছে ৫০টিরও বেশি দোকানে। বিক্রিও হচ্ছে ভালো। মেলায় এসে ঘরে ফেরার পথে মিষ্টি, জিলাপি ও ফল নিয়ে যাচ্ছেন অনেকে। চলছে নাগরদোলা। আরও আছে হাতি, ঘোড়া, নৌকা ও নিশান টার্গেট।

ঢাকার ডেমরা থেকে কুঞ্জ মেলায় এসেছেন পঞ্চাশোর্ধ্ব ছাহেরা বেগম। তিনি জানান, এবারই প্রথম তিনি কুঞ্জ মেলায় এসেছেন। এরআগে বিভিন্ন জনের কাছে কুঞ্জ মেলার নাম শুনেছেন।

Kaligonj-3

নরসিংদী থেকে এসে খেলনা সামগ্রী বিক্রি করছেন আফজাল উদ্দিন (৫০)। তিনি বলেন, ‘আমি বেশ কয়েক বছর ধরেই এখানে আসি। পুরোনো ঐতিহ্য ধরে রেখেছে এখানকার কুঞ্জ মেলাটি। বেচাকেনা যাই হোক, একসঙ্গে এত দর্শনার্থী দেখে ভালোই লাগে।’

একই কথা বলেন দক্ষিণ চুয়ারিয়াখোলা গ্রামের চটপটি বিক্রেতা সুজন মিয়া (২৬), নরসিংদীর মনোহরদী থেকে নাগরদোলা নিয়ে আসা হানিফা (৩৫) ও কৃষ্ণ দাস (৪০)।

Kaligonj-3

উপজেলার জাঙ্গালিয়ার রয়েন থেকে শুভাস চন্দ্র দাস ও মোক্তারপুরের বাঘুন থেকে পরিমল চন্দ্র পাল মাটির তৈরি তৈজসপত্র নিয়ে এসেছেন। মাটির তৈজসপত্র কিনতে আসা অবলা রাণী দাস (৫০) জাগো নিউজকে বলেন, ‘শীতের সময় গ্রামে পিঠা খাওয়ার ধুম পড়ে যায়। তাই পিঠা তৈরির পাত্র কিনতে প্রতি বছর কুঞ্জ মেলায় আসি।’

Kaligonj-3

মেলায় বাঁশ-বেতের তৈরি জিনিসপত্র নিয়ে জামালপুর থেকে এসেছেন আকবর আলী (৪৯)। তার সঙ্গে আছেন একই এলাকার ধীরেন্দ্র (৪৮)। তারা প্রতি বছর এই মেলায় আসেন। তারা জাগো নিউজকে বলেন, ‘মেলায় আগে বাপ-চাচারা আসতেন। তাদের বয়স হয়ে যাওয়ায় তারা এখন আর আসেন না। তাই বংশ পরম্পরায় আমরা আসি।’

Kaligonj-3

শ্রী শ্রী কানাইলাল মন্দির ও মেলার আয়োজক কমিটির সভাপতি মুকুল চন্দ্র দে জানান, রাধা-কৃষ্ণের লীলাকীর্তি করতে গেলে তাদের সেবা করতে হয়। আর সেবা করতে গেলে মিষ্টি ও ফলসহ বিভিন্ন উপকরণ লাগে। সেই উপকরণের জোগান দিতেই শুরুতে ছোট্ট পরিসরে এই মেলার আয়োজন। তারপর থেকে দিনে দিনে এ আয়োজন বৃহৎ পরিসরে হচ্ছে। মেলা থেকে যে আয় হয় তা মন্দিরের কল্যাণ ট্রাস্টে জমা হয়।

তিনি আরও জানান, মেলা উপলক্ষে কোনো ঘোষণা দেওয়া হয় না। ১০১ বছর সময় ধরে এই দিনে মেলাটি বসে। মেলায় নিরাপত্তার জন্য স্বেচ্ছাসেবকরা কাজ করছেন।

Kaligonj-3

তুমলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুবকর বাক্কু মিয়া বলেন, গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী মেলার ইতিহাস ধরে রাখতে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে চলেছেন শ্রী শ্রী কানাইলাল মন্দির কমিটির সদস্যরা। প্রতিবছর তারা স্বেচ্ছাশ্রম দিয়ে অব্যাহত রেখেছেন এই মেলার আয়োজন।

আব্দুর রহমান আরমান/এসআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।