বরিশাল বিসিক

ট্রেড লাইসেন্স জটিলতায় উৎপাদন ব্যাহত, লোকসানে ব্যবসায়ীরা

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি বরিশাল
প্রকাশিত: ০৭:২৪ পিএম, ০৮ জানুয়ারি ২০২৩

দীর্ঘদিন ধরেই ট্রেড লাইসেন্স জটিলতায় ভুগছে বরিশালের ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) এলাকার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো। প্রায় দুই বছর ধরে বরিশাল সিটি করপোরেশন থেকে কোনো ধরনের ট্রেড লাইসেন্স না দেওয়ায় থেমে আছে এই শিল্প এলাকার উন্নয়ন। এ কারণে পদ্মা সেতু চালুর ছয় মাস পরও শিল্পায়নে বিন্দুমাত্র অগ্রগতি নেই বরিশাল বিসিকে।

ব্যবসায়ীদের দাবি, ট্রেড লাইসেন্স জটিলতার কারণে তারা ব্যবসায়িক কোনো কার্যক্রমেই অগ্ৰসর হতে পারছেন না। ফলে একদিকে, যেমন বছরের পর বছর তাদের লোকসান গুনতে হচ্ছে, তেমনি ব্যবসায়িক উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।

অন্যদিকে, বরিশাল সিটি করপোরেশন বলছে, যারা হোল্ডিং ট্যাক্স দিচ্ছেন না তারা ট্রেড লাইসেন্স পাচ্ছেন না। এরইমধ্যে যারা হোল্ডিং ট্যাক্স দিয়েছেন তারা ট্রেড লাইসেন্স পেয়েছেন।

jagonews24

বিসিক শিল্প এলাকায় বরিশালের প্রথম গার্মেন্টস শিল্প উদ্যোক্তা নিমজার্ক ডিজাইনের স্বত্বাধিকারী তৌহিদুর রহমান জানান, ট্রেড লাইসেন্স না থাকায় তারা উৎপাদনে যেতে পারছেন না। দীর্ঘ দুই বছরের বেশি সময় ধরে ট্রেড লাইসেন্স সমস্যা সমাধানের অপেক্ষায় আছেন এ ব্যবসায়ী। দ্রুতই ট্রেড লাইসেন্স জটিলতার সমাধান চান তিনি।

তৌহিদুর রহমান বলেন, একটি ব্যবসার মূল ভিত্তি হলো ট্রেড লাইসেন্স। এ লাইসেন্স না পেলে বিএসটিআই সনদ, পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমোদনের আবেদন করা যায় না।

আরেক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বিএমসি টেক্সটাইল মিল লিমিটেডের কর্মকর্তা খাইরুল হাসান জানান, তাদের প্রতিষ্ঠান কমফোর্টার উৎপাদনকারী (ফাইবার দিয়ে কম্বল জাতীয় পণ্য তৈরি)। এ শিল্পপ্রতিষ্ঠানটিও উৎপাদনে যাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে। কিন্তু ট্রেড লাইসেন্স জটিলতার কারণে তারাও উৎপাদনে যেতে পারছেন না। তাদের কাছে ঢাকার ট্রেড লাইসেন্স থাকলেও তা বরিশালে কোনো কাজে আসছে না। ফলে নানামুখী সংকটের সম্মুখীন হচ্ছেন।

বিসিকের ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা জামাল হোসেন জানান, দীর্ঘদিন ঢাকার গাজীপুরে লন্ড্রি সাবান ও ডিটারজেন্ট পাউডার উৎপাদন কারখানা চালিয়েছেন। পরে ব্যবসা স্থানান্তর করে ২০২০ সালে আসেন নিজ এলাকা বরিশালের বিসিক শিল্প এলাকায়।

তিনি দাবি করেন, বরিশালে এসেই ট্রেড লাইসেন্স জটিলতার সম্মুখীন হতে হয়েছে। দুই বছর ঘুরেও ট্রেড লাইসেন্সের অভাবে উৎপাদনে যেতে পারেননি তিনি।

বরিশাল বিসিক সূত্রে জানা গেছে, ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে এমন দুর্ভোগে রয়েছেন বিসিকের ৭৬ জন পুরোনো ব্যবসায়ী। তারা দুই বছর ধরে ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন করতে পারছেন না। এছাড়া ১৯ জন নতুন উদ্যোক্তা ট্রেড লাইসেন্সের আবেদন করে বসে আছেন। বর্তমানে এখানে চালু থাকা শিল্প ইউনিটগুলোও চলছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। বহুমুখী সমস্যার কারণে এরইমধ্যে অনেকেই তাদের ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছেন।

সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা যায়, হোল্ডিং ট্যাক্স নিয়ে জটিলতা থাকায় বরিশাল সিটি করপোরেশন (বিসিসি) দুই বছর আগে বিসিক ব্যবসায়ীদের নতুন ট্রেড লাইসেন্স দেওয়া ও পুরাতনদের নবায়ন বন্ধ করে দিয়েছিল। তবে এরইমধ্যে তা পুনরায় চালু করা হয়েছে।

এ বিষয়ে বিসিক শিল্প মালিক সমিতির কোষাধ্যক্ষ নাজমুন নাহার রিনা বলেন, ট্রেড লাইসেন্স জটিলতার কারণে আমার প্রতিষ্ঠান এখন বন্ধের পথে। প্রতিষ্ঠান বন্ধ হলে শুধু আমার একার লোকসান হবে না, প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শত শত শ্রমিক বেকার হয়ে পড়বেন।

তিনি আরও বলেন, শিল্পনগরের মালিক হচ্ছে বিসিক। হোল্ডিং ট্যাক্সও পরিশোধ করবে তারা।

বিসিক শিল্প মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ইব্রাহিম খান জানান, সিটি করপোরেশন থেকে ট্রেড লাইসেন্স না দেওয়ায় তারা ব্যবসায়িকভাবে বছরের পর বছর লোকসান গুনছেন। তাছাড়া বিসিক শিল্পনগরী শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীনে। সিটি করপোরেশনের সঙ্গে এর কোনো সম্পৃক্ততা নেই।

jagonews24

তিনি বলেন, এই শিল্প এলাকার জন্য বিসিক কর্তৃপক্ষকে বার্ষিক আড়াই ভাগ হারে সার্ভিস চার্জ দেওয়া হচ্ছে। তাই আলাদাভাবে সিটি করপোরেশনকে হোল্ডিং ট্যাক্স দেওয়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই।

এ বিষয়ে বরিশাল সিটি করপোরেশনের ট্রেড লাইসেন্স শাখার সুপারিনটেনডেন্ট কাজী মোয়াজ্জেম হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, সম্প্রতি একটি মিটিংয়ের মাধ্যমে বিসিক কর্তৃপক্ষ ও সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ সমাধানে এসেছে। এরই ধারাবাহিকতায় যেসব ব্যবসায়ীরা প্লটের নামে হোল্ডিং ট্যাক্স দিচ্ছেন, তাদের ট্রেড লাইসেন্স দেওয়া হচ্ছে। এরইমধ্যে কয়েকজন ব্যবসায়ী এই সুবিধা নিয়েছেন।

এ প্রসঙ্গে বরিশাল বিসিকের উপ-মহাব্যবস্থাপক জালিস মাহমুদ জাগো নিউজকে বলেন, শিল্প আইন অনুসারে বিসিক কর্তৃপক্ষ অথবা প্লট মালিক পৃথকভাবে হোল্ডিং ট্যাক্স দিতে পারেন। তবে এ বিষয়ে যে সমস্যা ছিল খুব শিগগির তা সমাধান হবে বলে আশা করছি।

তিনি আরও বলেন, পদ্মা সেতুর পর নতুন নতুন ব্যবসায়ী বিসিকে আবেদন করছেন। তাদের আবেদনগুলো যাচাই-বাছাই শেষ হয়ে বরাদ্দের জন্য চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। ভোলার গ্যাস বরিশাল এলে বিসিক আরও সমৃদ্ধ হবে।

এমআরআর/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।