এক বছরেও নির্মাণ হয়নি ঝালকাঠির নৌ পুলিশ-ফায়ার স্টেশন

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি ঝালকাঠি
প্রকাশিত: ০৮:৩৬ এএম, ০৯ জানুয়ারি ২০২৩

ঝালকাঠিতে লঞ্চে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পর পাঁচ নদীর মোহনায় নৌ পুলিশ ক্যাম্প ও ফায়ার সার্ভিস স্টেশন নির্মাণের দাবি উঠেছিল। দেখতে দেখতে পার হয়ে গেছে একটি বছর। কিন্তু এখনো চালু হয়নি কোনো ফায়ার সার্ভিস স্টেশন। এতে করে ক্ষোভ বাড়ছে এলাকাবাসী ও নৌ-পরিবহন চালকদের। শৈত্যপ্রবাহ ও কুয়াশার কারণে নৌ পথে দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন তারা।

দ্বিতীয় কলকাতা খ্যাত ঝালকাঠির ব্যবসায়ীদের মালামাল খালাস করা হয় বাসন্ডা নদী থেকে। এছাড়াও ঝালকাঠির সুগন্ধা নদী থেকে বিষখালী নদী হয়ে দক্ষিণাঞ্চলে, বাংলার সুয়েজখাল খ্যাত গাবখান নদী হয়ে মংলা বন্দরে যাত্রী ও মালবাহী নৌ-যান চলাচল করছে। এসব কারণে অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকি ও জানমালের নিরাপত্তা রক্ষার্থে সুগন্ধা, বিষখালী, গাবখান, ধানসিঁড়ি এবং বাসন্ডা নদীর মোহনায় নৌ পুলিশ ক্যাম্প ও ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন নির্মাণের দাবি করা হয়েছিল।

জানা গেছে, ২০২১ সালের ২৩ ডিসেম্বর ঢাকা থেকে বরগুনার উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসা লঞ্চটিতে ২৪ ডিসেম্বর ভোরে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এতে ঘটনাস্থলে দগ্ধ হয়ে মৃত্যু হয়েছে ৩৬ জনের, নদী থেকে মৃত উদ্ধার করা হয় চারজনকে, বরিশাল ও ঢাকা হাসপাতালে মৃত্যু হয় সাতজনের। মোট ৪৭ জন নিহত হয়েছেন। সেই অগ্নিকাণ্ডের পর গুরুত্বপূর্ণ ঢাকা-ঝালকাঠি-বরগুনা-মোংলায় নৌ ফায়ার স্টেশন ও নৌ পুলিশ ক্যাম্প স্থাপনের দাবি জানিয়ে আসছেন এলাকাবাসী ও নৌযানকর্মীরা। তবে ঘটনার একবছর পার হলেও সেই দাবি বাস্তবায়িত হচ্ছে না।

সুগন্ধা নদী তীরের বাসিন্দারা বলেন, ঢাকা-ঝালকাঠি-বরগুনা-মোংলা নৌ পথে প্রতিদিন যাতায়াত করে যাত্রীবাহী লঞ্চ ও পণ্যবাহী জাহাজ। খুলনা ও মোংলায় যেতে গাবখান কৃত্রিম চ্যানেল রয়েছে। তাই অবিলম্বে সুগন্ধা, বিষখালী ও গাবখান নদীর মোহনায় একটি নৌ ফায়ার স্টেশন ও নৌ পুলিশ ক্যাম্প স্থাপন করতে হবে।

ঝালকাঠি পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও সুগন্ধা নদী তীরের বাসিন্দা হুমায়ুন কবির সাগর বলেন, আমরা আগুন দেখেই ট্রলার নিয়ে উদ্ধারকাজে অংশ নেই। আমাদের ঘরে তাদের আশ্রয় দিয়েছি। অগ্নিদগ্ধ লোকজনকে হাসপাতালে পৌঁছে দিয়েছি। সেই ভয়াবহ দিনের কথা যখনই মনে পড়ে, তখনই চমকে উঠি। জরুরি ভিত্তিতে নৌ ফায়ার স্টেশন ও নৌ পুলিশ ক্যাম্প নির্মাণ প্রয়োজন।

ঝালকাঠির ফারহান-৭ লঞ্চের ঘাট সুপারভাইজার মঞ্জুরুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, ঝালকাঠি থেকে যাত্রীবাহী লঞ্চ ও পণ্যবাহী অসংখ্য জাহাজ চলাচল করে। এখানে গাবখান চ্যানেল রয়েছে। এই চ্যানেল দিয়ে খুলনা, মোংলা ও কলকাতায় অনেক নৌযান চলাচল করে। এছাড়া বরগুনা, পাথরঘাটা, বরিশাল ও ঢাকায় পণ্য ও যাত্রীবাহী নৌযান চলাচল করে। গুরুত্বপূর্ণ এই পয়েন্টে একটি নৌ ফায়ার স্টেশন ও নৌ পুলিশ ক্যাম্প স্থাপন জরুরি।

ঝালকাঠি ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার শফিকুল ইসলাম বলেন, আমরা লঞ্চে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে নৌ ফায়ার স্টেশনের জন্য আবেদন করেছি। কিন্তু এক বছরেও তা বাস্তবায়িত হয়নি। আমাদের চেষ্টা রয়েছে, যেন ঝালকাঠিতে একটি নৌ ফায়ার স্টেশন হয়। এতে ডুবুরিদলও থাকবে। দুর্ঘটনা ঘটলে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছানো যাবে।

ঝালকাঠি সদর উপজেলার দিয়াকুল গ্রামের বাসিন্দা ও অভিযান-১০ এ আগুনের ঘটনায় যাত্রীদের উদ্ধারকারী রিনা বেগম বলেন, সেই দিনের ভয়াল ঘটনা এখনো চোখের সামনে ভাসে। চোখে পানি এসে যায়। কত মানুষকে আমরা নদী থেকে উদ্ধার করে বাড়িতে আশ্রয় দিয়েছিলাম। তাদের কাপড়, খাবার দিয়েছি।

একই গ্রামের শিরিন আক্তার বলেন, ‘আমাদের বাড়ির পুরুষরা সবাই সেদিন নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়ে উদ্ধারকাজে অংশ নেয়। আর নারীরা তাদের বাড়িতে আশ্রয় দিয়ে, কাপড় দিয়ে সহযোগিতা করি। ঘরে যা রান্না করা ছিল, তা দিয়েই সকালে তাদের খাবার দিই। চোখের সামনে জ্বলছিল লঞ্চটি।

দিয়াকুল গ্রামের আবুল হোসেন বলেন, আমি শিশু, বয়স্ক ব্যক্তিসহ কয়েকজনকে নদী থেকে উদ্ধার করে তীরে উঠিয়েছি। সেদিনের কান্নার আওয়াজ আজও শুনতে পাই। এখানে যদি ফায়ার স্টেশন ও নৌ পুলিশ ক্যাম্প থাকতো তাহলে এতো পরিমাণে ক্ষতি হতো না। ওই ঘটনার সচেতনতা থেকে যদি ফায়ার স্টেশন ও নৌ পুলিশ ক্যাম্প স্থাপন করা না হয় তাহলে পরবর্তীতেও বিপদ হতেই পারে।

আতিকুর রহমান/জেএস/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।