কচুরিপানার জটে অনাবাদি ১০ হাজার বিঘা জমি

আমিন ইসলাম জুয়েল আমিন ইসলাম জুয়েল , জেলা প্রতিনিধি ,পাবনা
প্রকাশিত: ০৫:০৭ পিএম, ২৪ জানুয়ারি ২০২৩

পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার ছয়টি বিলের ১০ হাজার বিঘা জমি পাঁচ বছর ধরে অনাবাদি পড়ে আছে। ধানের ভান্ডার হিসেবে খ্যাত বিলপাড়ের এসব জমি সারাবছর কচুরিপানা ও বিভিন্ন ঘাসে ভরে থাকে। ফসলের জমি পরিষ্কারের খরচ না ওঠায় ‘পতিত’ রাখতে বাধ্য হচ্ছেন কৃষকরা। ফলে এসব উর্বর জমি এখন শুধুই গরু-ছাগল চড়ানোর উপযোগী।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আর-আতাইকুলা ইউনিয়নের গ্যারকা, বয়সা, পচাশিঙা, মোল্লাগাড়া, ডিবিরগাড়া, মিরধাগাড়ি বিলপাড়ের জমি তিন ফসলি। এক সময় পেঁয়াজ, রসুন, ধান, পাটসহ নানা ধরনের ফসল ফলানো হতো। কিন্তু ছয় বছর ধরে জমিগুলোতে কচুরিপানা ও বিভিন্ন ঘাসে ছেয়ে গেছে। চাষিরা এক বছর পরিষ্কার করলে আবারো একই অবস্থা তৈরি হয়। খরচ বাড়ায় তারা চাষাবাদ বন্ধ রেখেছেন।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, বিলপাড়ের উঁচু এলাকায় হরেক রকম ফসলের চাষ হচ্ছে। অন্যদিকে নিচু অংশের হাজার হাজার বিঘা ফসলি জমিতে কচুরিসহ বিভিন্ন ঘাসে ছেয়ে আছে। বছরের পর বছর অনাবাদি থাকায় কচুরি ও ঘাসের বড় বড় স্তূপ হয়েছে। জমির এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত ছাগল আর গরু চড়াতে দেখা গেছে।

আরও পড়ুন: কুয়াশা-শীতে নষ্ট হচ্ছে বোরো ধানের বীজতলা, বিপাকে কৃষক

কৃষকরা জানান, বর্ষা মৌসুমে এসব জমি প্লাবিত হয়। তখন মরা কচুরিপানা সজীব হয়ে ওঠে। বর্ষার পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নিচু এলাকায় কচুরিপানা জমতে থাকে। নানারকম ঘাসেও ভরে যায় নিচু জমিগুলো।

কচুরিপানা ও ঘাস অপসারণ করতে ১৫-১৮ জন শ্রমিক প্রয়োজন। একজন শ্রমিকের মজুরি ৫০০-৬০০ টাকা। এক বিঘা জমি পরিষ্কার করতে ১০ হাজার টাকা খরচ হয়। অথচ সারা বছর ফসল আবাদ করে বিঘাপ্রতি ১০ হাজার টাকা লাভও থাকে না। এর ওপর অনেক ফসল চাষ করে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্তও হন। লোকসান এড়াতে এসব জমি পতিত ফেলে রেখেছেন তারা।

মাধপুর নতুনপাড়া গ্রামের কৃষক আজগর আলী বলেন, ‘বিলে আমার চার বিঘা জমি। পাঁচ বছর ধরে জমি অনাবাদি। আমি চরম আর্থিক সমস্যায় পড়েছি। তাই কচুরিপানা পরিষ্কার করতে পারছি না।

আরও পড়ুন: বোরো মৌসুমের শুরুতেই রাজশাহীতে লোডশেডিং, ভোগান্তিতে কৃষক

চরপাড়া গ্রামের চাষি শাহজাহান আলী বলেন, বন্যার পানি নেমে গেলে পানিতে ভেসে আসা কচুরিপানা জমিতে আটকে থাকে। নিজেদের চেষ্টায় প্রথম এক বছর পরিষ্কার করলেও পরে আর্থিক ক্ষতি হওয়ায় আর পরিষ্কার করতে পারিনি।

সোহরাব আলী বলেন, জমি পরিত্যক্ত পড়ে আছে। এখন ভ্যানের চাকায় জীবিকা চলে।

চাষি শহীদুল ইসলাম বলেন, বিলে অন্যদের মতো আমার জমিও ৫ বছর ধরে অনাবাদি। ফসল আবাদ করতে না পারায় চরম ক্ষতির মুখে পড়েছি।

পদ্মবিলা গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক আব্দুল আজিজ বলেন, এক বিঘা জমি থেকে কচুরিপানা পরিষ্কার করতে প্রায় ৮-১০ হাজার টাকা খরচ হয়। কিন্তু এ টাকা খরচ করার সামর্থ্য নেই অধিকাংশ কৃষকের।

আরও পড়ুন: ভুট্টাক্ষেতে মেসির প্রতিকৃতি

স্থানীয় ইউপি সদস্য শাহীন সর্দার জাগো নিউজকে বলেন, বিপদগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন বিলপাড়ের চাষিরা। আমাদের বিল পরিষ্কারে ব্যবস্থা নিতে বলেন। কিন্তু আমাদের পক্ষে কিছু করা সম্ভব নয়। তবে সরকার উদ্যোগ নিয়ে বিলের সব জমি একসঙ্গে পরিষ্কার করলে কচুরিপানা নির্মূল হতে পারে।

স্থানীয় পরিবেশকর্মী আব্দুল খালেক খান জাগো নিউজকে বলেন, জেলার উৎপাদিত ধানের বিরাট অংশ গ্যারকা বিল থেকে আসে। কচুরিপানার জটে খাদ্য উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এছাড়া ঐতিহ্যবাহী বিল তার যৌবন হারাচ্ছে। এতে হুমকির মুখে পড়েছে জীববৈচিত্র্য।

তিনি আরও বলেন, বর্ষা এলেই কৃষকদের মধ্যে কচুরিপানা নিয়ে আতঙ্ক বিরাজ করে। বর্ষার পর তাদের জমি পতিত থাকে।

বিলপাড় এলাকার বাসিন্দা এবং কৃষি বিশেষজ্ঞ ড. আব্দুস সালাম জাগো নিউজকে বলেন, বেশ কয়েকটি বিলের প্রায় ১০ হাজার বিঘা জমি পাঁচ বছর ধরে অনাবাদি থাকায় চাষিরা চরম ক্ষতির মুখে পড়েছেন। খাদ্য উৎপাদনে একটা নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।

তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান অনুযায়ী সব জায়গায় ফসল উৎপাদন চলমান রাখার জন্য সাঁথিয়ার এ বিলগুলোর জমি চাষযোগ্য করা জরুরি। এজন্য সরকারিভাবে একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হলে কৃষক মুক্তি পাবেন। দীর্ঘ বছরের দুর্ভোগ থেকে এলাকায় খাদ্য উৎপাদনও বাড়বে।

পাবনার সাঁথিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সঞ্জীব কুমার গোস্বামী জাগো নিউজকে বলেন, মাঠকর্মীদের মাধ্যমে বিষয়টি জেনেছি। পতিত জমির পরিমাণ তালিকা করা হয়েছে। জমিগুলো আবাদের জন্য কৃষকদের বলা হয়েছে। তবে কচুরিপানা পরিষ্কার করতে অনেক খরচ হবে। এ বিষয়ে চাষিদের আর্থিক সহায়তার চেষ্টা করা হচ্ছে।

সাঁথিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাসুদ হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, কৃষি বিভাগের মাধ্যমে পতিত জমির তালিকা সংগ্রহ করেছি। চাষিদের আর্থিক সহায়তার জন্য একটি প্রকল্প বাস্তবায়নের চেষ্টা চলছে।

সাঁথিয়া উপজেলা কৃষি অফিসার সঞ্জীব কুমার গোস্বামী জানান, মাঠকর্মীদের মাধ্যমে বিষয়টি জেনেছি। পতিত জমির পরিমাণ তালিকা করা হয়েছে। এসব জমি যোগ্য করতে কৃষকদের বলা হয়েছে। তবে কচুরি পরিষ্কার করতে বেশ শ্রমিক খরচ হবে। এ ব্যাপারে চাষিদের আর্থিক সহায়তার চেষ্টা চলছে।

সাঁথিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুদ হোসেন জানান, কৃষি বিভাগের মাধ্যমে পতিত জমির তালিকা সংগ্রহ চলছে। চাষিদের আর্থিক সহায়তায় একটি প্রকল্প বাস্তবায়নের চেষ্টা করছি।

এসজে/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।