নড়াইলে রেকর্ড পরিমাণ সরিষা আবাদে ভাগ্য খুলেছে মৌচাষিদের

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি নড়াইল
প্রকাশিত: ১২:০৮ পিএম, ২৮ জানুয়ারি ২০২৩

ভোজ্যতেলের চাহিদা মেটাতে সরিষা চাষে ঝুঁকেছেন চাষিরা। এরই ধারাবাহিকতায় এবার নড়াইলে সরিষা চাষ হয়েছে রেকর্ড পরিমাণ। একই সঙ্গে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় সরিষার আবাদও ভালো হয়েছে। এতে করে লাভবান হচ্ছেন মৌচাষিরাও। এবার এ জেলার ৭০ জন মৌচাষি দেড় হাজারের বেশি মধু আহরণ করতে পারবেন।

কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এবছর জেলায় সরিষার চাষ হয়েছে নয় হাজার ২১৫ হেক্টর জমিতে। গত বছর হয়েছিল সাত হাজার ৮০ হেক্টর জমিতে। এ বছর দুই হাজার ১৩৫ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ বেড়েছে। যা এ জেলায় রেকর্ড পরিমাণ বলে উল্লেখ করেছে কৃষি অধিদপ্তর। তবে সবচেয়ে বেশি চাষ হয়েছে সদরের দেবভোগ, উজিরপুর, বড়েন্দার, বীড়গ্রাম, মিতনা, শাহাবাদ, সিঙ্গা, লোহাগড়ার লাহুড়িয়া, এড়েন্দা, ইতনা, কালিয়ার চাঁচুড়ী, কলাবাড়িয়া ও জয় নগর মাঠে।

আরও পড়ুন: দেশে ভোজ্যতেলের আমদানিনির্ভরতা কমাবে সরিষা

সদরের মিতনা গ্রামের কৃষক সুফল বিশ্বাস বলেন, এবারই প্রথম দুই বিঘা জমিতে সরিষার চাষ করেছি। এক সপ্তাহ পর সরিষা উঠে গেলে বোরো ধানের আবাদ করবো। আশা করছি দুবিঘা জমিতে ১৫ মণ সরিষা উৎপাদন হবে।

jagonews24

নড়াইল পৌর এলাকার কৃষক সংগঠক সায়েদ আলী শান্ত বলেন, ভোজ্যতেলের দাম বাড়ায় এবারই প্রথম ২৫ শতাংশ জমিতে বীনা-১৪ জাতের সরিষার চাষ করেছি। এবার কৃষকরা যেখানেই সুযোগ পেয়েছেন সেখানেই সরিষার চাষ করেছেন। অনুকূল আবহাওয়া ও রোগবালাই কম হওয়ায় সরিষার ফলনও বেশ ভালো হয়েছে।

সদরের শেখাটি ইউনিয়নের উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা দেবদাস কর বলেন, এবার শেখাটি
ইউনিয়নের দেভভোগসহ কয়েকটি বিলের সরিষা ক্ষেতে যশোরের বসুন্দিয়া ও নড়াইলের তিনজন
মৌচাষি মৌবাক্স নিয়ে হাজির হয়েছে।

আরও পড়ুন: সরিষায় স্বপ্ন বুনছেন চাষিরা

নড়াইল জেলা মধু চাষি সমিতির সভাপতি কাওসার আহম্মেদ বলেন, এবার সদরের সিঙ্গিয়া মাঠে মৌবাক্স নিয়ে এসেছি। এখানে সরিষার দানাও পুষ্ট হয়েছে এবং মধুর ফলনও বেড়েছে। এবার ৭০ জনের বেশি মৌচাষি জেলার বিভিন্ন মাঠে গড়ে পাঁচ হাজার ৬০০ মৌবাক্স নিয়ে হাজির হয়েছেন। এবার সিরাজগঞ্জ, ঝিনাইদহ, সাতক্ষীরা ও যশোর থেকেও মৌচাষি এসেছেন। শুধু সরিষা মৌসুমেই ৭০জন চাষি গড়ে ২০-২৫ মন মধু আহরণ করবেন। এতে দেড় হাজারের বেশি মণ মধু উৎপাদন হবে।

jagonews24

তিনি আরও বলেন, সরিষা চাষিরা এক ধরনের ভিটামিন ওষুধ স্প্রে করছে। ফলে অসংখ্য মাছি ও মা মাছিও মরে যাচ্ছে, যা মৌচাষের জন্য ভীষণ ক্ষতিকর। আমরা বিষয়টি কৃষক এবং কৃষি বিভাগকে জানালেও কোনো লাভ হচ্ছে না।

আরও পড়ুন: কৃষিকে ভালোবাসতে সরিষা মাঠে মিলনমেলা

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর নড়াইলের উপ-পরিচালক দীপক কুমার রায় বলেন, নড়াইলে ৯৬ লাখ লিটার ভোজ্যতেলের চাহিদা রয়েছে। সেখানে এবার আশা করা যাচ্ছে ৬০ লাখ লিটার ভোজ্যতেল উৎপাদন সম্ভব হবে। তেলের পাশাপাশি সরিষার খৈল মাছের খাবার ও ফসলি জমিতে সার হিসেবে ব্যবহৃত হবে। ফলে কৃষকরা বাড়তি আয় করতে পারবেন। এ ধারা অব্যাহত থাকলে কয়েক বছরের মধ্যে নড়াইল ভোজ্যতেলে স্বয়ংসম্পূর্ণতা সম্ভব।

হাফিজুল নিলু/জেএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।