গান গেয়ে অন্ধত্ব জয়ের পথে লিটন দাশ

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি সাতক্ষীরা
প্রকাশিত: ০৩:৪১ পিএম, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

হাজারও প্রতিবন্ধকতা উপেক্ষা করে নিজ স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে এগিয়ে যাচ্ছেন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী অদম্য কণ্ঠের অধিকারী লিটন দাশ। অন্ধত্ব তাকে হার মানাতে পারেনি। চোখের দৃষ্টি না থাকলেও অন্তরের আলো দিয়ে গান নিজের মতো করে অর্জন করে ছড়িয়ে দিচ্ছেন সবার মাঝে। চলমান সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসন আয়োজিত ‘সাতক্ষীরার কণ্ঠে’ অংশগ্রহণ করেছেন লিটন দাশ। তার স্বপ্ন গানের প্রতিভার বিকাশ ঘটিয়ে ভালো মাপের শিল্পী হওয়া।

প্রতিভাবান লিটন দাশ থাকেন সাতক্ষীরা জেলার তালা উপজেলায়। জেলার তালা উপজেলার তালা সদর ইউনিয়নের খানপুর তার জন্মভিটা। দিনমজুর পরিমল দাশ ও পূর্ণিমা দম্পতির সন্তান লিটন দাশ। দরিদ্র পরিবারে চার ভাইবোনের মধ্যে সবার বড় তিনি। তার বাকি তিন ভাইবোনের বিয়ে হয়ে গেছে।

আরও পড়ুন- সুন্দরবনের গহীনে পথ হারানো ১০ পর্যটক উদ্ধার

লিটনের এক ভাই জানান, বাবা বয়সের ভারে এখন আর আগের মতো কাজ করতে পারেন না। সংসারে উপার্জনক্ষম ব্যক্তি বেকার হয়ে পড়ায় খেয়ে না খেয়ে দিন কাটছে পরিবারের বাকি সদস্যের। যার কারণে বর্তমানে লিটন দাশ হাট-বাজারে গান গেয়ে টাকা উপার্জন করে সংসার চালাচ্ছেন। আবাদ উপযোগী কোনো জমি-জমা তাদের নেই। আছে শুধু ৪ শতক বসতভিটা।

jagonews24

পরিবার সূত্রে জানা যায়, অদম্য কণ্ঠের অধিকারী লিটন জন্মান্ধ না। ৬ বছর আগে তার বড় ধরনের অসুখ দেখা দেয়। পরে ভুল চিকিৎসার কারণে তাকে দু’চোখ হারাতে হয়। বাবা গরিব দিনমজুর হওয়ায় চিকিৎসা করানোর সাধ থাকলেও সাধ্য হয়নি আর।

অদম্য কণ্ঠের অধিকারী লিটন দাশের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ছোট থেকে ইচ্ছা আমি জীবনে গান গেয়ে বড় কিছু করবো। কিন্তু অভাবের কারণে আমি আমার প্রতিভার বিকাশ ঘটাতে পারিনি। আমি আমার প্রতিভার বিকাশ ঘটানোর জন্য গ্রামেগঞ্জে হাট-বাজারে গান গেয়ে মানুষের মন জয় করা শুরু করি।

তিনি আরও বলেন, গানই আমার জীবন। গান নিয়েই আমি বড় হতে চাই। আমি আমার এ দু’চোখ ভরে আবারও সুন্দর পৃথিবীটা দেখতে চাই আমার গানের প্রতিভার বিকাশ ঘটিয়ে।

আরও পড়ুন- ইছামতির বাঁধে ফাটল, ভাঙন আতঙ্ক

এ সময় তিনি ‘সাতক্ষীরার কণ্ঠে’ সুযোগ করে দেওয়ার জন্য জেলা প্রশাসককে ধন্যবাদ জানান।

লিটন দাশ দুই সন্তানের বাবা। সন্তানদের সম্পর্কে লিটন বলেন, ‘আমি তাদের গানের মধ্য দিয়ে বড় করতে চাই। তারা যেন গান নিয়ে বড় হতে পারে। আমার মেয়েটা ভালো গান করে কিন্তু অভাবের কারণে আমি তাকে ভালো কোথাও গান শেখাতে পারছি না। আমি তাকে শিল্পকলা একাডেমিতে ভর্তি করাতে চাই, যদি আমাকে সবাই সাহায্য করেন।’

লিটন দাশের বাবা পরিমল দাশ জাগো নিউজকে বলেন, বাড়ির ভিটেটুকু ছাড়া কিছু নেই। আমি কাজ করতে পারি না। অন্ধ ছেলে গান গেয়ে যে টাকা উপার্জন করে তাই দিয়ে আমাদের সংসার চলে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির এ বাজারে ছেলের প্রতিবন্ধী ভাতা দিয়ে কোনোমতে খেয়ে না খেয়ে দিন পার করতে হচ্ছে। চিকিৎসকদের ভুল চিকিৎসার কারণে আজ আমার ছেলের দু’চোখ নষ্ট। এত অভাবের মধ্যে কীভাবে ছেলের চিকিৎসার স্বপ্ন দেখি।

jagonews24

লিটনের মা পূর্ণিমা দাশ কান্নাজড়িত কণ্ঠে জাগো নিউজকে বলেন, লিটন ভালোই ছিল ছোটবেলায়। একটি সমস্যা হওয়ার পর ভুল চিকিৎসায় ছেলেটার দুই চোখ আজ অন্ধ। আমার ছেলেটা ভালো গান গায়। সবাই আমার লিটনের জন্য আশীর্বাদ করবেন যেন সে তার প্রতিভার বিকাশ ঘটাতে পারে।

‘সাতক্ষীরার কণ্ঠ’র বিচারক বাংলাদেশ বেতারের কণ্ঠশিল্পী আবু আফফান রোজবাবু জাগো নিউজকে বলেন, লিটন অসাধারণ গান করে আমাদের মন জয় করেছে। আমার মনে হয়েছে আগামী রাউন্ডে সে আরও ভালোভাবে গান গাইবে। এমন প্রতিভার সন্ধানে জেলা প্রশাসন এই আয়োজন করেছে।

আরও পড়ুন- চিটাগুড়ের সঙ্গে ফিটকিরি মিশিয়ে তৈরি ’খাঁটি মধু’

জেলা শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক শেখ মোসফিকুর রহমান মিল্টন জাগো নিউজকে বলেন, সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসন ও জেলা শিল্পকলা একাডেমির উদ্যোগে প্রথমবারের মতো শুরু হয়েছে ‘সাতক্ষীরার কণ্ঠ’ নামে এই রিয়েলিটি শো। জেলার প্রান্তিক পর্যায় থেকে লুকায়িত প্রতিভার শিল্পীদের সন্ধানে এই আয়োজন। এই রিয়েলিটি শোতে সাতক্ষীরা জেলার প্রতিষ্ঠিত শিল্পী ব্যতীত ১৫ বছরের ঊর্ধ্বে যে কেউ অংশ নিতে পারবে।

সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির জাগো নিউজকে বলেন, সাতক্ষীরা জেলার অপ্রকাশিত কণ্ঠশিল্পীদের প্রতিভা তুলে ধরতে প্রথমবারের মতো এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রথম রাউন্ডে বাছাইকৃত শিল্পীদের নিয়ে জেলায় বড় একটি আয়োজনের মাধ্যমে জেলার সেরা তিন প্রান্তিক শিল্পীকে নির্বাচিত করে সম্মাননা ও পুরস্কৃত করা হবে।

প্রতিযোগিতার বিচারক হিসেবে রয়েছেন আবু আফফান রোজবাবু, নাসরিন খান লিপি, শামীমা পারভীন রত্না, শ্যামল কুমার সরকার, শহিদুল ইসলাম, মনজুরুল হক ও কামরুল ইসলাম।

আহসানুর রহমান রাজীব/এফএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।