ঝালকাঠিতে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন প্রকৌশলী শাহনেওয়াজ
ঢাকায় গ্যাসলাইন বিস্ফোরণে অগ্নিদগ্ধ প্রকৌশলী শাহীন শাহনেওয়াজের দাফন ঝালকাঠিতে সম্পন্ন হয়েছে। সোমবার সন্ধ্যায় অ্যাম্বুলেন্সযোগে ঝালকাঠিতে এসে পৌঁছে তার মরদেহ।
রাত সোয়া ৮টায় কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দানে তার নামাজে জানাজা শেষে পৌর গোরস্থানে দাফন করা হয়েছে। নামাজে জানাজায় রাজনীতিক, আইনজীবী, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ অংশ নেয়।
উল্লেখ্য, শুক্রবার গ্যাসের লাইনে অগ্নিদগ্ধ হয়ে উত্তরার ১৩ নম্বর সেক্টরের ৩ নম্বর রোডের একই পরিবারের ৫ জন অগ্নিদগ্ধ হয়। কিছুক্ষণের মধ্যেই ঢাকার বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় প্রকৌশলীর দুই সন্তান সারলিন ও জায়ান। হাসপাতালে সংকটাপন্ন অবস্থায় চিকিৎসাধীন শাহনেওয়াজের স্ত্রী সুমাইয়া আক্তার। কেবল আশঙ্কামুক্ত তাদের আরেক সন্তান জারিফ বিন নেওয়াজ। পরিবারটির এমন করুণ পরিণতি স্বজন-শুভাকাঙ্ক্ষী কেউ মেনে নিতে পারছেন না।
শাহনেওয়াজের ভাগিনা নাজমুস সাকিব বলেন, ফ্ল্যাটটির পশ্চিম দিকে রয়েছে ডাইনিং রুম ও ছোট্ট রান্নাঘর। পুরো ফ্লোরে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে তাদের ব্যবহৃত জিনিসপত্র। ঘরের আসবাব থেকে সবই পুড়ে গেছে। পড়ে রয়েছে ১৪ মাস বয়সী জায়ানের খেলনা। বিছানায় রয়েছে শাহনেওয়াজের বেঁচে যাওয়া ছেলে জারিফের বই, স্কুলব্যাগ ও অভাগা দম্পতির বিয়ের অ্যালবাম। পাশের টেবিলে শাহনেওয়াজের আমেরিকান দূতাবাসের প্রত্যয়নপত্র। মিটসেফে শতবর্ষপূর্তি উপলক্ষে ঝালকাঠি উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র শাহনেওয়াজকে দেয়া একটি স্মারক ক্রেস্ট। এই স্কুল থেকেই ১৯৮৩ সালে এসএসসি পাস করেছিলেন তিনি। এ সবই এখন ধ্বংস হয়ে যাওয়া পরিবারটির স্মৃতিচিহ্ন।
শাহনেওয়াজের চাচাতো ভাই কামাল খলিফা জানান, গত শুক্রবার সকালে ৮০০ বর্গফুটের ফ্ল্যাটের উত্তর-পশ্চিম দিকের ছোট্ট রান্নাঘরে গ্যাসের বিস্ফোরণ ঘটে। মুহূর্তেই সেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে পুরো ঘরে। সেই আগুনই ছারখার করে দিল পরিবারটিকে। গ্যাসের লাইনের সংযোগটি ছিল রান্নাঘরের উত্তর দিকে। তবে গ্যাসের চুলাটি সেখানে নেই। পুলিশ সেটি আলামত হিসেবে জব্দ করেছে। রান্নাঘরের দক্ষিণ পাশেই ডাইনিং রুম। ওই রুমের পশ্চিম দিকে একটি ডাইনিং টেবিল। সেখানে ছড়িয়ে রয়েছে পোড়া জিনিসপত্র। দক্ষিণ পাশে রয়েছে একটি বিছানা। বিছানাটিও পুড়ে ছারখার হয়ে গেছে। তবে পূর্ব দিকের রুম দুটি তালাবদ্ধ অবস্থায় রয়েছে। পুরো ঘরের দেয়ালে এখনও লেগে রয়েছে শাহনেওয়াজের পরিবারের সদস্যদের ছিন্নভিন্ন অংশ।
সুমাইয়ার অবস্থার অবনতি, খুঁজছেন স্বামী-সন্তানদের:
শাহনেওয়াজের ভাতিজা রাহাত মেহেদী জানান, সুমাইয়ার অবস্থার অবনতি হয়েছে। তার পুরো শরীর ফুলে গেছে। একটু পরপরই অচেতন হয়ে যাচ্ছেন। জ্ঞান ফিরলেই স্বামী-সন্তানদের খোঁজ করছেন।
এদিকে, শাহনেওয়াজের মেজছেলে জারিফ বিন নেওয়াজকে রোববার ধানমন্ডির সিটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তার অবস্থা আশঙ্কামুক্ত। সে তার বাবা-মা ও ভাইদের কাছে যেতে চাইছে। হাত-পায়ের কিছু অংশ দগ্ধ হওয়ায় তার যন্ত্রণা হচ্ছে।
মো.আতিকুর রহমান/বিএ