নেত্রকোনায় ফসল রক্ষা বাঁধের ৮৫ শতাংশ কাজ শেষ
নির্ধারিত সময়ে নেত্রকোনায় হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণ কাজের ৮৫ শতাংশ শেষ হয়েছে। এখনো ১৫ শতাংশ কাজ বাকি। হাওড় থেকে পানি নামতে দেরি হওয়ায় কাজ শেষ করতে কিছুটা সময় লাগছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নীতিমালা অনুযায়ী, ১৫ ডিসেম্বর ফসল রক্ষা বাঁধের কাজ শুরু হয়ে ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে শেষ হওয়ার কথা ছিল। পরিস্থিতি বিবেচনায় এক সপ্তাহ সময় বাড়ানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক।
জেলা পাউবো ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, জেলার হাওরাঞ্চলে এবার ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণের জন্য ২০৬টি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এর জন্য ৪৩ কোটি ৮ লাখ টাকা বরাদ্দ চাওয়া হয়। প্রথমপর্যায়ে বরাদ্দ পাওয়া গেছে ২০ কোটি টাকা। গঠিত প্রকল্পগুলোর মধ্যে খালিয়াজুরীতে ১১৫টি, মদনে ২৪টি, মোহনগঞ্জে ২৫টি, কলমাকান্দায় ২৬টি প্রকল্প রয়েছে। এ পর্যন্ত গড়ে কাজের অগ্রগতি ৮৫ শতাংশ বলে জানায় পাউবো। এর মধ্যে খালিয়াজুরীতে ৮১ শতাংশ, মোহনগঞ্জে ৮৭ দশমিক শূন্য চার শতাংশ, আটপাড়ায় ৮০ শতাংশ, বারহাট্টায় ৮৩ দশমিক ৭ শতাংশ এবং মদন, কলমাকান্দা ও পূর্বধলায় ৮০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে।

আরও পড়ুন: বরাদ্দ শত কোটি থাকলেও কাজ শেষ নিয়ে শঙ্কা
তবে, যথাসময়ে বাঁধের কাজ শেষ না হওয়ায় যদি কোনো কারণে অকাল বন্যা হয় তবে ফসল বিপর্যয় ঘটতে পারে বলে শঙ্কা স্থানীয় কৃষকদের।
কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, জেলার হাওরাঞ্চলের ৪১ হাজার হেক্টর জমিতে এবছর ২ লাখ ৪৬ হাজার মেট্রিকটন ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর বাজার মূল্য ধরা হয়েছে প্রায় ৭৪১ কোটি ৬০ লাখ টাকা।
মোহনগঞ্জের গাগলাজুর এলাকার কৃষক ও স্থানীয় হাওড় রক্ষা পরিষদের সভাপতি কাজল চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, হাওরে বোরো ধান কৃষকদের একমাত্র ফসল। এই ফসলের ওপর ভিত্তি করেই কৃষকরা সারাবছরের সংসার খরচ চালান। তবে একবার ফসলহানি ঘটলে এর জের টানতে হয় সারাবছর।
তিনি আরও বলেন, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ায় অকাল বন্যা হলে বাঁধের ওপর চাপ পড়বে। গত বছরের শেষদিকে চরহাইজদা স্থায়ী বাঁধের কিছু অংশ ভেঙে গিয়েছিল। এটি এবার সময়মতো সংস্কার না হলে পুরো হাওরের ফসল ঝুঁকিতে থাকবে।
খালিয়াজুরী উপজেলা সদরের পিরানহাটি গ্রামের কৃষক মহসীন মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, এবার বাঁধের কাজের বেশ অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে। গতবছর হাওরের পানি নামতে কিছুটা দেরি হওয়ায় কাজ শুরু হতে বিলম্ব হয়েছিল। তবে, পানি আসতে এখনো একমাস দেরি আছে। আশা করছি, এর আগে কাজ শেষ হবে। তবে, কীর্তনখোলা বাঁধের সাত কিলোমিটার অংশে স্থায়ী বাঁধ দিলে হাওরাঞ্চলের ৪১ হাজার হেক্টর জমির ফসল রক্ষা হবে।
অন্যদিকে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ফসল রক্ষা বাঁধের প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির (পিআইসি) এক সদস্য বলেন, এ পর্যন্ত মাত্র কাজের ৩০ শতাংশ টাকা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আমরা কোনো কোনো বাঁধের ৮০-৯০ ভাগ কাজ শেষ করে ফেলেছি। এখন শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ করতে পারছি না।
তিনি আরও বলেন, সমস্যা হলো, গত বছরের বাঁধ নির্মাণ কাজের টাকা এখানো বাকি রয়েছে। সরকার দ্রুত টাকা না দিলে আমরা কাজ করে বিপদে পড়ি।
আরও পড়ুন: মার্চে হাওর রক্ষা বাঁধের কাজ শেষ হবে: পানি সম্পদ উপমন্ত্রী
এদিকে, বাঁধের কাজ দ্রুত শেষ করতে তোড়জোড় শুরু করেছে জেলা প্রশাসন ও পাউবো কর্তৃপক্ষ। স্থানীয়ভাবে কাজের মনিটরিং চলছে।

খালিয়াজুরী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুয়েল সাংমা বলেন, খালিয়াজুরীতে ১১৫টি পকল্পের কাজই ৮৫ শতাংশের বেশি শেষ হয়েছে। এখন শুধু স্লোভ করা ও ঘাস লাগানোর কাজ চলছে।
এ বিষয়ে নেত্রকোনা পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সারওয়ার জাহান জাগো নিউজকে বলেন, হাওরে পানি দেরিতে নামায় কয়েকটি বাঁধে কাজ শুরু করতে একটু দেরি হলেও আমরা দ্রুত কাজ শেষ করার চেষ্টা করছি। এরইমধ্যে গড়ে ৮৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়ে গেছে। খালিয়াজুরী উপজেলায় ৮৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। কৃষকদের শঙ্কার কোনো কারণ নেই।
তিনি আরও বলেন, বাঁধ সার্বক্ষণিক মনিটরিং করা হচ্ছে। এরইমধ্যে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হকসহ পাউবোর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জেলার বিভিন্ন হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধ পরিদর্শন করেন।
আরও পড়ুন: ব্যাংক ঋণে ‘ভোগান্তি’, এনজিওতে ঝুঁকছেন হাওরের কৃষক
নেত্রকোনার জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ জাগো নিউজকে বলেন, আমরা এবছর নির্ধারিত সময় ১৫ ডিসেম্বর কাজ শুরু করেছি। কিছু কিছু হাওরে পানি নামতে দেরি হওয়ায় কাজে কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে। আশা করছি, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে শতভাগ কাজ শেষ হবে।
এইচ এম কামাল/এমআরআর/জিকেএস