রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন

তথ্য যাচাই শেষে ফিরে গেলো মিয়ানমারের টেকনিক্যাল টিম

সায়ীদ আলমগীর
সায়ীদ আলমগীর সায়ীদ আলমগীর কক্সবাজার
প্রকাশিত: ০৭:০৬ পিএম, ২২ মার্চ ২০২৩

রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে প্রথম তালিকার ১৬৮ পরিবারের ৪৮০ জনের তথ্য যাচাই-বাছাই ও সাক্ষাৎকার শেষে মিয়ানমারে ফিরে গেছে ১৭ সদস্যের টেকনিক্যাল টিম। বুধবার (২২ মার্চ) সকাল ১০টার দিকে ১৭ সদস্যের প্রতিনিধি দলটি নৌযানে নাফনদী থেকে টেকনাফ চৌধুরী পাড়ার ট্রানজিট জেটিঘাট দিয়ে মিয়ানমারের উদ্দেশে রওনা দেয়।

কক্সবাজারের শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার কার্যালয়ের অতিরিক্ত কমিশনার মো. সামছু-দ্দৌজা এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে বাংলাদেশ থেকে দেওয়া রোহিঙ্গাদের প্রথম তালিকার যাচাই-বাছাই করতে মিয়ানমারের ১৭ সদস্যের একটি টেকনিক্যাল টিম ১৫ মার্চ সকালে টেকনাফ ট্রানজিট জেটিঘাট হয়ে বাংলাদেশে আসে। প্রতিনিধি দলটি বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারের কাছে পাঠানো প্রথম তালিকা থেকে গত ৭ দিনে ১৬৮ পরিবারের ৪৮০ জনের তথ্য যাচাই-বাছাই ও সাক্ষাৎকার প্রক্রিয়া শেষ করে। যাদের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করা হয়েছে তাদের থেকে বাংলাদেশের আশ্রয় শিবিরে জন্ম নেওয়া ওই পরিবারের শিশুদেরও নথিভুক্ত করেছে টেকনিক্যাল টিম। এসব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে বুধবার (২২ মার্চ) সকালে তারা নৌপথে মিয়ানমারের উদ্দেশে রওনা দেন।

টেকনাফে অবস্থিত ক্যাম্প-২৬ থেকে সাক্ষাৎকার দেওয়া মনোয়ারা বেগম (২৮) বলেন, মিয়ানমারের টেকনিক্যাল টিম তার কাছ থেকে জানতে চেয়েছে মিয়ানমারের রাখাইনে যেখানে বসবাস করতেন সেখানকার কোনো কাগজপত্র আছে কিনা। তাদের পূর্ব পুরুষদের নাম ঠিকানা ও তাদের বসতঘরের উত্তর-দক্ষিণ ও পুর্ব-পশ্চিমে কী ছিল। তাদের সব প্রশ্নের উত্তরসহ তাদের চাওয়া প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেখানো হয়েছে।

লেদা ক্যাম্পের হেড মাঝি নুরুল আমিন বলেন, প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার কথা বলে টিম পাঠানো মিয়ানমার সরকারের এক ধরনের নাটক। আফ্রিকার মুসলিম প্রধান দেশ গাম্বিয়া রোহিঙ্গাদের পক্ষে গণহত্যার অভিযোগ এনে জাতিসংঘের সর্বোচ্চ আদালত ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসে (আইসিজে) করা চলমান মামলাকে প্রভাবিতসহ বহির্বিশ্বকে দেখাতে নাটক শুরু করছে মিয়ানমার।

তিনি বলেন, আমরা অবশ্যই আমাদের নিজ দেশে ফিরতে চাই। তবে আমাদের নাগরিক অধিকার, নিরাপত্তা, মর্যাদা, হারিয়ে যাওয়া জায়গা-জমি ও রোহিঙ্গা হিসেবে স্বীকৃতি দিলেই মিয়ানমারে ফিরে যাবো।

২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমার সরকার রাখাইনে সেনা অভিযান শুরু করলে বাংলাদেশে পালিয়ে আসেন রোহিঙ্গারা। শেখ হাসিনা সরকার উখিয়া-টেকনাফের ৩৩টি ক্যাম্পে ৭ লাখের অধিক রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেয়। এর আগেও বিভিন্ন সময় বাংলাদেশে আসা আরও ৪ লাখ রোহিঙ্গা মিলিয়ে ১১ লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয় নেয়। বর্তমানে সাড়ে ১২ লাখ রোহিঙ্গার উপস্থিতি রয়েছে।

২০১৭ সালের ঘটনায় আন্তর্জাতিক মহলের চাপের মধ্যে মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে ২০১৭ সালের শেষের দিকে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি করলেও সেই প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া আর শুরু হয়নি।

তবে ২০১৯ সালে দু’দফা প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ নেওয়া হলেও রাখাইন রাজ্যের পরিবেশ নিয়ে শঙ্কার কথা তুলে ধরে ফিরতে রাজি হননি রোহিঙ্গারা। পরবর্তীতে প্রত্যাবাসনের জন্য বাংলাদেশ থেকে ৮ লাখের বেশি রোহিঙ্গার তালিকা মিয়ানমারের কাছে পাঠানো হয়। ওই তালিকা থেকে প্রত্যাবাসনের জন্য প্রাথমিকভাবে ১ হাজার ১৪০ জনকে বাছাই করে ৭১১ জন রোহিঙ্গাকে প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে মিয়ানমারের সম্মতি মিললেও বাকি ৪২৯ জনের ব্যাপারে আপত্তি ছিল।

নতুন করে আবারও প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ থেকে পাঠানো রোহিঙ্গাদের তালিকার তথ্য যাচাই-বাছাই করতে বুধবার (১৫ মার্চ) সকালে টেকনাফ জেটিঘাট হয়ে মিয়ানমারের ১৭ সদস্যের একটি টেকনিক্যাল টিম বাংলাদেশে আসে। এরপর টেকনাফ স্থলবন্দরের অভ্যন্তরে মালঞ্চ সম্মেলন কক্ষে মিয়ানমারের টেকনিক্যাল টিমের প্রধান মিনিস্ট্রি অব ফরেন অ্যাফেয়ার্সের মংডুর আঞ্চলিক পরিচালক অং মাইউ এর নেতৃত্বে ১৭ সদস্যের প্রতিনিধি দলটি তালিকাভুক্ত রোহিঙ্গাদের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করে।

এফএ/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।