রোজার চাহিদা পূরণে দিন-রাত ব্যস্ত মুড়িগ্রামের কারিগররা

জাহিদ পাটোয়ারী
জাহিদ পাটোয়ারী জাহিদ পাটোয়ারী , কুমিল্লা
প্রকাশিত: ১২:৫০ পিএম, ২৩ মার্চ ২০২৩

বছর ঘুরে দরজায় কড়া নাড়ছে পবিত্র মাহে রমজান। আর বাকি মাত্র একদিন। রমজানে ইফতারের অন্যতম অনুষঙ্গ হলো মুড়ি। এ উপলক্ষে কুমিল্লার হাতে ভাজা মুড়ির চাহিদা রয়েছে দেশব্যাপী। তাই রমজানে ইফতারের চাহিদা মেটাতে দিন-রাত ব্যস্ত সময় পার করছেন জেলার বরুড়ায় মুড়িগ্রাম খ্যাত লক্ষ্মীপুরের মুড়ি ব্যবসায়ীরা। ঘরে ঘরে চলছে যেন মুড়ি ভাজার উৎসব।

গ্রামের ৪০টি পরিবার প্রতিদিন মোট প্রায় দেড় হাজার কেজি মুড়ি উৎপাদন করে। হাতে তৈরি এখানকার মুড়ি স্বাদে অনন্য হওয়ায় যাচ্ছে ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, ফেনী, চাঁদপুর, নোয়াখালীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়। প্রাকৃতিক উপায়ে তৈরি হওয়ায় হাতে ভাজা এ মুড়ির চাহিদা দিনদিন বাড়ছে।

jagonews24

সরেজমিন লক্ষ্মীপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, রমজান উপলক্ষে রান্নাঘরে ব্যস্ত সময় পার করছেন নানা বয়সী নারীরা। পুরুষ সদস্যরা এ মুড়ি বাজারজাতকরণের লক্ষ্যে বাড়ির উঠানে ওজন করে বস্তাভর্তি করছেন। প্রতিদিন ভোর থেকে শুরু হয় মুড়ি ভাজা, চলে মধ্য দুপুর পর্যন্ত। পরবর্তীকালে এসব মুড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয় পাইকারদের কাছে। গত ৬০ বছর ধরে চলছে এই কর্মযজ্ঞ। যে কারণে স্থানীয়ভাবে গ্রামটি মুড়িগ্রাম নামে পরিচিতি পেয়েছে।

লক্ষ্মীপুর গ্রামের মানিক পাল জানান, তাদের গ্রামে প্রায় ৪০টি পরিবার বাণিজ্যিকভাবে হাতে ভাজা মুড়ি উৎপাদন করে থাকে। একটি পরিবার প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৩৭ থেকে ৪০ কেজি মুড়ি উৎপাদন করেন। প্রতি কেজি মুড়ি পাইকারের কাছে বিক্রি হয় ১০০ থেকে ১২০ টাকায়। প্রতি মণ মুড়িতে লাভ হয় প্রায় ৬০০ টাকা। বাজারে এই মুড়ি বিক্রি হয় ১৪০ থেকে ১৬০ টাকা কেজি।

শেফালী রাণী পাল জানান, ভোর তিনটা থেকে তারা মুড়ি ভাজার কার্যক্রম শুরু করেন। বিরতিহীনভাবে চলে দুপুর একটা পর্যন্ত। এ কাজে একসঙ্গে অন্তত আট থেকে ১০ জন লোক কাজ করেন।

মানিক, নেপাল, অর্জুন ও কামালসহ একাধিক মুড়ি ব্যবসায়ী জানান, প্রায় ৬০ বছর ধরে লক্ষ্মীপুর গ্রাম থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে মুড়ি সরবরাহ করা হয়। তারা বংশ পরম্পরায় এ পেশাটি টিকিয়ে রেখেছেন। সরকারিভাবে আর্থিক সহযোগিতা পেলে নতুন প্রজন্ম এই পেশায় আরও উৎসাহী হবে।

jagonews24

কুমিল্লা নগরীর চকবাজার, রাজগঞ্জ, রাণীর বাজার ও বাদশামিয়ার বাজারের মুড়ি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রমজানে হাতে ভাজা মুড়ির চাহিদা বেশ তুঙ্গে থাকে। বিশেষ করে লক্ষ্মীপুর গ্রামের মুড়ি বেশি খোঁজ করেন ক্রেতারা। তাই বাধ্য হয়ে সেখান থেকে মুড়ি আনতে হয়। এই মুড়ির দামও বেশি। খুচরা প্রতিকেজি মুড়ি বিক্রি করা হয় ১৪০ থেকে ১৬০ টাকা পর্যন্ত।

এ বিষয়ে বরুড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মেহেদী হাসান জাগো নিউজকে বলেন, লক্ষ্মীপুর গ্রামে মুড়ি উৎপাদনের বিষয়ে আমরা অবগত আছি। এখন পর্যন্ত তাদের পক্ষ থেকে স্থানীয় প্রশাসনের কাছে কোনো ধরনের সহযোগিতা চাওয়া হয়নি। তাদের চাহিদার কথা লিখিতভাবে আমাদের জানানো হলে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সাধ্যমতো চেষ্টা করা হবে।

জাহিদ পাটোয়ারী/এমআরআর/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।