কারাবন্দি ছিলেন ২৪ বছর

কম্পিউটার দোকানে জাহাঙ্গীরের নতুন জীবনের সূচনা

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি লক্ষ্মীপুর
প্রকাশিত: ০৯:৪২ এএম, ২৭ মার্চ ২০২৩

কারাগার শাস্তির স্থান নয়, সংশোধনাগার। তাই কারাগারে নতুন জীবন গঠনে বন্দিদের বিভিন্ন ধরনের কাজের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। কারামুক্ত হয়ে প্রশিক্ষণ অনুযায়ী কাজ করে নতুন জীবনের সূচনা করেছেন অনেকেই। আবার কারাগারে প্রশিক্ষণকালে কাজের দক্ষতা, আচার-আচরণে মুগ্ধতা ছড়াতে পারলেই মিলছে সরকারি সহায়তাও। তেমনি সরকারি সহায়তা পেয়ে কম্পিউটার দোকানে নতুন জীবনের সূচনা করেছেন লক্ষ্মীপুরের জাহাঙ্গীর আলম।

তিনি সদর উপজেলার উত্তর মহাদেবপুর গ্রামের মো. মজিবুল হকের ছেলে। স্ত্রী হত্যার দায়ে তিনি যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত হয়ে ২৪ বছর আড়াই মাস কারাবন্দি ছিলেন। কারাগারে কম্পিউটার প্রশিক্ষণে জীবনকে নতুন করে সাজানোর লক্ষ্যে নিজেকে প্রমাণ করেছেন। এতে সরকারি সহায়তায় তাকে একটি কম্পিউটার দোকান উপহার দেওয়া হয়।

কারা সূত্র জানায়, স্ত্রী ফাতেমা বেগমকে হত্যার দায়ে ১৯৯৮ সালের ১৬ অক্টোবর কারাবন্দি হন জাহাঙ্গীর। ২০০১ সালে লক্ষ্মীপুর জজ আদালত স্ত্রী হত্যার দায়ে তার মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন। পরে উচ্চ আদালতে আপিল করলে রায় সংশোধন করে বিচারক তার যাবজ্জীবন দেন।

২৪ বছর আড়াই মাস কারাভোগ শেষে তিনি গেলো জানুয়ারি মাসে মুক্ত হন। তবে কারাবন্দি থাকাকালে কম্পিউটার প্রশিক্ষণে কৃতিত্ব দেখিয়েছেন জাহাঙ্গীর। প্রায় ৭-৮ মাস আগে জেলা প্রশাসক (ডিসি) আনোয়ার হোসেন কারাগার পরিদর্শনে যান। তখন গ্রাফিক্সে জাহাঙ্গীরের আঁকা পদ্মাসেতুর ডিজাইন তার নজরে আসে।

জেলা প্রশাসকের মতে, ‘পদ্মাসেতুর গ্রাফিক্সটি অসাধারণ হয়েছে। এটি নতুন জীবন গঠনে জাহাঙ্গীরের জন্য এটি নবসূচনা হতে পারে।’ এ সময় সঙ্গে থাকা জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক নুরুল ইসলাম পাটওয়ারীকে বিষয়টি নিয়ে বিবেচনার জন্য বলেন জেলা প্রশাসক। সে লক্ষ্যেই জাহাঙ্গীর কারামুক্ত হওয়ার পর সমাজসেবা অধিদফতরের অপরাধী সংশোধন ও পুনর্বাসন সমিতির আওতায় কম্পিউটারের দোকানের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়।

jagonews24

জেলা সমাজসেবা কার্যালয় সূত্র জানায়, অপরাধীদের সংশোধনের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় সমাজসেবা অধিদপ্তর বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। সমাজসেবা অধিদপ্তরের অপরাধী সংশোধন ও পুনর্বাসন সমিতির আওতায় জাহাঙ্গীরকে কম্পিউটার দোকানের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

বুধবার রায়পুর উপজেলার সোনাপুর ইউনিয়নের রাখালিয়া বাজারে জাহাঙ্গীরের ‘বিসমিল্লাহ টেলিকম অ্যান্ড ফটোশপ’ দোকানের উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক আনোয়ার হোছাইন আকন্দ। এরআগে ২০২১ সালের ৮ ডিসেম্বর যাবজ্জীবন সাজা শেষে মিলন কামাল নামে একজনকে সদর উপজেলার ভবানীগঞ্জ ইউনিয়নের আবদুল্লাহপুর গ্রামে সেলুন দোকান উপহার দেওয়া হয়েছে।

জাহাঙ্গীর আলম বলেন, যেদিন বিচারক আমাকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছেন, সেদিনই আমি মরে গেছি। আল্লাহ রহম করায় আমি বেঁচে আছি। পরে আপিল করলে উচ্চ আদালত আমার যাবজ্জীবন দিয়েছেন। আমি অপরাধের সাজা পেয়েছি। কারাগারে থাকাকালে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ নিয়েছি। সরকার আমাকে একটি কম্পিউটার দোকান উপহার দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সংশ্লিষ্টদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। বাকি জীবন ভালোভাবে কাটাতে চাই।

জেলা কারাগারের জেল সুপার নজরুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, কারাগার শাস্তির স্থান নয়। কারাগার এখন সংশোধনাগার। কারাগারে বন্দিরা নিজেদেরকে সংশোধন করতে কাজ করছেন। লক্ষ্মীপুরে এ নিয়ে কারামুক্ত দুই ব্যক্তিকে কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করে জীবনকে নতুন করে সাজানোর ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে। আশা করছি জাহাঙ্গীরের ভবিষ্যৎ জীবন উজ্জ্বল হবে। তবে চারপাশের মানুষজন তাকে সহযোগিতা করতে হবে। অপরাধীকে নয়, অপরাধকে ঘৃণা করতে হবে। জাহাঙ্গীরের প্রতি কেউ বৈরী আচরণ না করে তাকে সবাই সহযোগিতা করতে হবে।

লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক আনোয়ার হোছাইন আকন্দ জাগো নিউজকে বলেন, দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের কারাগারে বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ ও জীবিকা নির্বাহের জন্য সরঞ্জামাদি দিয়ে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে সরকার সমাজসেবা বিভাগের মাধ্যমে অপরাধী সংশোধন ও পুনর্বাসন সমিতির মাধ্যমে বন্দিদের এ সেবা দিয়ে আসছে। বাড়ি ফিরে কাজ করে সম্মানের সঙ্গে বেঁচে থাকতে একজন কয়েদির জন্য সরকারের পক্ষ থেকে এটি অনেক বড় উপহার। জীবনের ২৪টি বছর কারাবন্দি থেকে নিজেকে সংশোধনের চেষ্টা করেছেন জাহাঙ্গীর। ভবিষ্যতকে সুন্দর করে সাজাতে তাকে সহযোগিতা প্রয়োজন।


কাজল কায়েস/এসজে/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।