ঠিকাদারের অলসতায় ৩ বছরেও হয়নি ব্রিজ নির্মাণ

সৈয়দ এখলাছুর রহমান খোকন
সৈয়দ এখলাছুর রহমান খোকন সৈয়দ এখলাছুর রহমান খোকন হবিগঞ্জ
প্রকাশিত: ১১:৫১ এএম, ২৭ মার্চ ২০২৩

হবিগঞ্জের মাধবপুরে নির্মাণাধীন সেতুর কাজ বন্ধ রয়েছে ৩ বছর ধরে। বিকল্প একটি কাঠের সেতু দিয়ে শুধুমাত্র হেঁটে ও তিন চাকার যানে প্রতিদিন চলাচল করছেন চারটি ইউনিয়নের অন্তত ১০ হাজার মানুষ। এতে চরম ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। যেন ঠিকাদারের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছেন এসব এলাকার মানুষ।

হবিগঞ্জ এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল বাছির বলেন, ২৫ মিটার দীর্ঘ এ ব্রিজটি নির্মাণের জন্য ২০২০ সালে দরপত্র আহ্বান করা হয়। কার্যাদেশ দেওয়ার পরপরই করোনা মহামারি শুরু হওয়ায় কাজটি তখন শুরু করা যায়নি। করোনা মহামারি কমলে পরবর্তীতে ঠিকাদার কাজ শুরু করেন। বর্তমানে কাজের অগ্রগতি হয়েছে ৯২ শতাংশ। ইউল্যাব এবং এপ্রোচের কাজ বাকি আছে।

jagonews24

তিনি বলেন, কাজটি দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় ঠিকাদারকে কয়েক দফা নোটিশ দেওয়া হয়েছে। কিছুদিনের মধ্যেই ব্রিজটি চালু করা সম্ভব হবে বলে আমরা আশা করছি।

সরেজমিনে ঘুরে জানা যায়, ওই উপজেলার জগদীশপুর থেকে মনতলা আঞ্চলিক সড়কের কৃষ্ণপুর এলাকায় ছড়ার ওপর নির্মিত ব্রিজটি দীর্ঘদিনের পুরোনো। ফলে প্রায় ৩ বছর আগে ব্রিজটি ভেঙে পড়ে। তখন ওই ছড়ায় নতুন করে ব্রিজ নির্মাণের উদ্যোগ নেয় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর।

ব্রিজটি নতুন করে নির্মাণের জন্য ২০২০ সালের শুরুতে ২ কোটি ৩৯ লাখ টাকার দরপত্র আহ্বান করা হয়। ব্রিজটি নির্মাণের কাজ পায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হাসান কনস্ট্রাকশন। ২০২০ সালের মাঝামাঝি প্রতিষ্ঠানটি প্রথম দফায় ব্রিজ নির্মাণের কাজ করে। কিন্তু করোনা মহামারির কারণে পরে কাজটি বন্ধ রাখা হয়। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ২০২২ সালে দ্বিতীয় দফায় আবারও ব্রিজ নির্মাণের কাজ শুরু করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কিন্তু কয়েকদিন কাজ করার পরই অদৃশ্য কারণে কাজ বন্ধ করে জিনিসপত্র গুটিয়ে চলে যান ঠিকাদার। এরপর থেকে দীর্ঘদিন ধরে ব্রিজের নির্মাণ কাজ ঝুলে আছে।

কাজ শেষ না হওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েছেন ওই সড়কে চলাচলকারী জগদীশপুর, শাহজাহানপুর, চৌমুহনী ও বহরা ইউনিয়নের অন্তত ১০ হাজার মানুষ। অথচ ইউনিয়ন চারটি শীতকালীন সবজির জন্য বিখ্যাত। জেলার সবচেয়ে বেশি সবজি এ চারটি ইউনিয়নেই উৎপাদিত হয়। এসব সবজি পরিবহনের জন্য এটিই একমাত্র রাস্তা। ফলে ব্রিজটির কারণে এখানে উৎপাদিত পণ্য পরিবহনে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে কৃষকদের। পাশাপাশি বাড়ছে খরচও।

বহরা ইউপি চেয়ারম্যান মো. আলাউদ্দিন জাগো নিউজকে জানান, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নিজের ইচ্ছামতো কাজ করছে। অনেকদিন ধরে তিনি কাজটি বন্ধ রেখে চলে গেছেন। ফলে এসব এলাকার মানুষকে চলাচল করতে মারাত্মক দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এমনকি নির্মাণাধীন ব্রিজের পাশ দিয়ে ডাইভারসনও তিনি নির্মাণ করেননি। এ সড়কে চলাচলকারী গাড়ির চালকরাই এটি কোনো রকমে তৈরি করে চলছেন। অনেক সময় পানি এলে তা ভাসিয়ে নিয়ে যায়। পরে আবার তারা মেরামত করেন। ঠিকাদার নিজে কোনোদিন এসে দেখেননি। তাকে খুঁজেও পাওয়া যায় না। প্রকৌশলীরাও বলেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কথা শুনছে না।

jagonews24

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হাসান কনস্ট্রাকশনের স্বত্ত্বাধিকারী খায়রুল হাসান জাগো নিউজকে বলেন, নিয়ম অনুযায়ী একটি গার্ডার তৈরির ২৮ দিন পর এটির সাটারিং খুলতে হয়। ব্রিজটির কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। এখন আরও ৩ মাস সময় লাগবে এর পূর্ণতা পেতে।

মাধবপুর উপজেলা প্রকৌশলী মো. শাহ আলম জাগো নিউজকে বলেন, ব্রিজটির কাজের মেয়াদ বাড়ানোর পরও কমপক্ষে ৬ মাস আগে মেয়াদ শেষ হয়েছে। শেষ পর্যন্ত তাকে ২৮ দিনের মধ্যে কাজটি শেষ করার জন্য নোটিশ দেওয়ার পর আবারও কাজ শুরু করেছেন। এখন খুব বেশি কাজ নেই। রেলিং, ব্লক এবং এপ্রোচ রয়েছে। ঠিকাদারের অলসতার কারণেই মূলত কাজটি দেরি হচ্ছে। তবে আশা করছি দ্রুতই কাজটি শেষ হবে।

এফএ/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।