রাজশাহীতে মৌসুমি ইফতার ব্যবসায়ীদের মাথায় হাত
কয়েকদিন ধরেই রাজশাহীতে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বিরাজ করছে। এর মধ্যে চলছে রমজান মাস। কিন্তু অসহনীয় গরমের মধ্যে ইফতারি কেনাকাটায় কিছুটা সচেতন হয়েছেন রোজাদাররা।
মূলত ভাজাপোড়া থেকে মুখ ফিরিয়ে ফল ও স্বাস্থ্যসম্মত খাবারে ঝুঁকছেন অনেকে। আবার জিনিসপত্রের দাম বেশি হওয়ায় ইফতারে বাড়তি খরচের সামর্থ্য নেই অনেকের। ফলে ক্রেতার অভাবে লোকসানে পড়ছেন রাজশাহীর মৌসুমি ইফতার ব্যবসায়ীরা।
মঙ্গলবার (২৮ মার্চ) সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, রাজশাহী নগরীর প্রধান সড়ক থেকে শুরু করে পাড়া-মহল্লার গলি পথেও ইফতার সামগ্রী নিয়ে বসেছেন মৌসুমি দোকানিরা। মহানগরীর সাহেববাজার, আলুপট্টি, কুমারপাড়া, সোনাদিঘির মোড়, সিঅ্যান্ডবি মোড়, লক্ষ্মীপুর, কাদিরগঞ্জ, বিন্দুরমোড়, নিউমার্কেট, গণকপাড়াসহ বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন পসরা সাজিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে ইফতার।
ক্রেতাদের চাহিদার কথা মাথায় রেখেই দোকানগুলোতে রকমারি ইফতারি তৈরি হয়েছে এ বছরও। তবে ক্রেতা কম। অন্য বছর বিকেলেই ইফতারি শেষ হয়ে গেলেও এবার প্রতিটি দোকানেই থেকে যাচ্ছে। এছাড়া কারিগরদের বেতন ও তেলসহ সব জিনিসের দাম বেড়ে যাওয়ায় এবার শুরুতেই ধাক্কা খাচ্ছেন মৌসুমি ইফতার ব্যবসায়ীরা।
ইফতার কিনতে আসা নিউমার্কেট এলাকার ক্রেতা সুরুজ আলী বলেন, ‘এবার রোজার শুর থেকেই বেশ গরম। শুরুর এক-দুদিন ভাজাপোড়া দিয়ে ইফতার করেছি। এখন ওসব কমিয়ে স্বাস্থ্যসম্মত খাবারই খাচ্ছি। তবে কিছু তো লাগে। যেমন এখন জিলাপি কিনতে এলাম। এগুলো একটু না হলে আবার ইফতারি জমে না। কিন্তু আগের মতো বেগুনি পেঁয়াজু আর কিনি না।’
রাজশাহীর সাহেববাজারে নিমকি কিনছিলেন মাসুদ রানা। তিনি বলেন, ‘আগের মতো আর ইফতারি কিনি না। শুরুর দিকে এক-দুদিন করেছি। এতে গ্যাসের সমস্যা হয়েছে। তাই এখন এসব কেনা বাদ দিয়েছি।’
একই বাজারে ইফতারি কিনতে এসেছেন মেহেদী হাসান। তিনি বলেন, ‘বাজার করতেই তো সব টাকা শেষ। ইফতারি কিনবো কী দিয়ে। ইফতার সামগ্রীর দাম বেড়ে গেছে। আগে যেসব মালামাল কিনতাম পাঁচ টাকায় সেটা এখন কিনতে হচ্ছে সাত/আট টাকায়। আগে বেশি করে ইফতার কিনলেও এখন শুধু ছোলা-মুড়ি কিনি। বেশি কিছু কিনি না।’
রাজশাহী নগরীর নিউ মার্কেট এলাকায় সারা বছরই পুরি, শিঙাড়া, পেঁয়াজু বিক্রি করনে মো. জয়নাল। সবাই তাকে জয়নাল মামা নামেই চেনেন। তবে ভালো নেই তিনি।
জয়নাল বলেন, ‘প্রথম রোজা থেকেই লোকসান শুরু হয়েছে। প্রতিদিনই ২ হাজার টাকার ইফতারি থেকে যাচ্ছে। গত কয়েক বছরে এমন হাল হয়নি। অন্য বছর ইফতারি দিয়ে শেষ করতে পারি না। এবার তার উল্টো।’
তিনি আর বলেন, ‘সব জিনিসের দাম বাড়তি। এছাড়া মানুষ গরমের কারণে ভাজা পোড়া কম খেতে চাইছে। এসব কারণে আমাদের প্রতিদিন কারিগর ও অন্য লোকজনের খরচই উঠছে না।’
একই অবস্থা শালবাগান এলাকার দোকানি মো. মুস্তাকিমের। অন্য সময় তিনি চা বিক্রি করেন। রমজানে তিনি ইফতারি বিক্রি করেন। কিন্তু এবার ভাগ্য ভালো যাচ্ছে না। রমজানের শুরুতেই গরমের কারণে রাজশাহীতে মানুষ ইফতারি কম কিনছেন বলে জানিয়েছে তিনি।
মুস্তাকিম বলেন, ‘মানুষ কম কিনছে। প্রতিদিনই কোনো না কোনো কিছু থেকে যাচ্ছে। এগুলোতে আমাদের লোকসান হচ্ছে। ভাবছি আর কয়েকদিন দেখবো। এমন চলতে থাকলে ইফতার বিক্রি বন্ধ করে দেবো।’
সাখাওয়াত হোসেন/এসজে/এমআরআর/এএসএম