বাস দুর্ঘটনায় নিহত
সংসারের সচ্ছলতা ফেরাতে সৌদি গিয়ে লাশ হলেন রৌফ
সৌদি আরবে ওমরাহ হজের যাত্রীবাহী বাস দুর্ঘটনায় ১৮ বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন। এরমধ্যে নিহত রুক্কু মিয়া ওরফে মো. রৌফ মিয়ার বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার কাইয়ুমপুর ইউনিয়নের ওমরপুর গ্রামে। মৃত্যুর খবরে তার বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। পরিবারের দাবি, লাশ যেন দেশের মাটিতে ফিরিয়ে আনা হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রিকশাচালক ছিলেন রৌফ মিয়া। দুই ছেলে ও এক কন্যা সন্তানের জনক। একমাত্র কন্যা শিউলি আক্তারকে বিয়েও দিয়েছেন। বড় ছেলে সাইফুল ইসলাম (১৬) বাবার সঙ্গে সংসারে হাল ধরতে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালাতেন। সবার ছোট ছেলে হৃদয় স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে।
আরও পড়ুন: মাদারীপুরের রনির বাড়িতে চলছে শোকের মাতম
বড় ছেলে ও নিজে রিকশা চালিয়েও পরিবার নিয়ে চলতে কষ্ট হচ্ছিল রৌফ মিয়ার। পরিকল্পনা করেন বিদেশে গিয়ে টাকা উপার্জনের। স্থানীয় এনজিও থেকে ধারদেনা ও সুদে ৭ লাখ টাকা যোগাড় হলে তিন বছর আগে সৌদি আরবে পাড়ি জমান তিনি। দেশটির দাম্মাম এলাকায় রেস্টুরেন্টে সামান্য বেতনে পরিছন্নকর্মীর কাজ করতেন রৌফ। তিন বছর যাবত প্রবাসে থাকলেও এখনো শেষ হয়নি ঋণের বোঝা। তাই যাওয়ার পর আর দেশে আসেননি।
২৭ মার্চ বিকেলে ওমরাহর উদ্দেশ্যে বাসে মক্কা যাচ্ছিলেন রৌফ মিয়া। পথে একটি সেতুতে ধাক্কা খেয়ে উল্টে যায় বাসটি। যাত্রীবাহী বাসটির ব্রেক কাজ না করায় আসির প্রদেশ ও আবহা শহরের সংযোগ সড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে। এক পর্যায়ে বাসে আগুন ধরে ২২ জন নিহত হন। এদের ১৮ জনই বাংলাদেশি। রৌফ মিয়া ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান। সেখানকার এক স্বজনের মাধ্যমে তার পরিবার মৃত্যুর কথা জানতে পারেন।
আরও পড়ুন: সৌদি আরবে খোঁজ মিললো তুষারের, তবে জীবিত নয় মৃত
একদিকে প্রবাসে পরিবারের উপার্জনক্ষম মানুষটির মৃত্যু অপরদিকে মাথার ওপর ঋণের বোঝা। এসব চিন্তায় বাকরুদ্ধ পরিবারের মানুষগুলো।
নিহতের স্ত্রী মাসুমা বেগম বলেন, ‘পরিবারের সুখের জন্য সৌদি আরবে গিয়েছিলেন আমার স্বামী। বিদেশ যাওয়ার সময় যে ঋণ হয়েছিল তার সামান্য শোধ হয়েছে। সবকিছু যেন শেষ হয়ে গেছে। কীভাবে এই ঋণ শোধ করবো। কীভাবে ছেলে-মেয়ে নিয়ে বাঁচবো। এখন আমার স্বামীর মরদেহটি দেশে ফিরিয়ে আনার দাবি জানাই।
আরও পড়ুন: ছেলের শেষ ইচ্ছা পূরণ করে যেতে পারলেন না রনি
মেয়ে শিউলি আক্তার বলেন, ‘রওয়ানা হওয়ার ১০মিনিট আগে আব্বুর সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছিল। এরপর থেকে তার মোবাইলটি বন্ধ পাওয়া যায়৷ এখন একটাই দাবি, তার মরদেহটি যেন দেশের মাটিতে ফিরিয়ে আনা হয়।’
কসবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আমিনুল এহসান খান জাগো নিউজকে বলেন, সৌদি আরবে সড়ক দুর্ঘটনায় কসবা উপজেলার রুকু মিয়া নামের এক প্রবাসীর নিহতের খবরটি শুনেছি। বিষয়টি খুবই মর্মান্তিক। তার মরদেহ দেশে আনার বিষয়ে যোগাযোগ করা হচ্ছে।
আবুল হাসনাত মো. রাফি/এসজে/জিকেএস