সৌদিতে সড়ক দুর্ঘটনা
ছেলের শেষ ইচ্ছা পূরণ করে যেতে পারলেন না রনি

ছেলের শেষ ইচ্ছা পূরণ করতে পারেননি ইমাম হোসেন রনি (৪০)। ছেলের আবদার ছিল তার জন্য একটি ব্যাটারিচালিত বাইসাইকেল কিনে দিতে হবে। বাবা তার ছেলেকে আশ্বাসও দিয়েছিলেন। কিন্তু সৌদি আরবে ওমরাহ করতে গিয়ে মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ১৩ বাংলাদেশির মধ্যে রনিও ছিলেন।
বুধবার (২৯ মার্চ) দুপুরে গাজীপুর মহানগরীর মুদাফা এলাকায় রনির বোনের বাসায় গেলে এমন কথাই জানালো রনির ছেলে ইসমাইল হোসেন (১১)।
ইসমাইল জানায়, দুর্ঘটনার এক ঘণ্টা আগেও তার বাবার সঙ্গে কথা হয়। তার বাবা বলেছিলেন ওমরাহ পালন শেষে কাজে যোগ দিয়ে তার জন্য সাইকেল কিনে দেবেন।
এদিকে, সোমবার সৌদি আরবে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত টঙ্গীর ইমাম হোসেন রনির মৃত্যুর খবর তাদের বাড়িতে পৌঁছালে পরিবারের সদস্যদের মধ্যে কান্নার রোল পড়ে যায়।
সরেজমিন টঙ্গী পশ্চিম থানার মুদাফা এলাকায় রনির বোনের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, স্বজনদের আহাজারি। রনির বাড়ি পাশের বড় দেওড়া ফকির মার্কেট এলাকায় হলেও তার নববিবাহিত দ্বিতীয় স্ত্রী, বাবা ও ছেলে ছিলেন বড়বোন হাজেরা খাতুন স্বপ্নার বাসায়।
ইমাম হোসেন রনির গ্রামের বাড়ি চাঁদপুর সদরে হলেও ফকির মার্কেট এলাকায় জমি কিনে বাড়ি করেছেন রনির বাবা আব্দুল লতিফ। তিনি একটি টেক্সটাইল মিলের শ্রমিক ছিলেন। ছয় বছর আগে ধারদেনা ও ঋণ করে ছেলেকে সৌদি আরব পাঠান। তিন ভাই ও দুই বোনের মধ্যে ইমাম হোসেন রনি দ্বিতীয়।
রনির বোন সীমা আক্তার জানালেন, ছয় বছর হলো রনি সৌদি আরবে থাকেন। দুই মাসের ছুটিতে গত ফেব্রুয়ারি মাসের ৫ তারিখ দেশে এসে তিনি নিজ বাসায় ওঠেন এবং ৭ তারিখে শিমু আক্তারকে (২৫) বিয়ে করেন। দেড় বছর আগে প্রথম স্ত্রী মলি আক্তার রনিকে তালাক দিয়ে চলে যান। রনির প্রথমপক্ষের স্ত্রীর একমাত্র ছেলে ইসমাইল হোসেন তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে। প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হওয়ার পর রনির ছেলে ইসমাইল দাদার সঙ্গেই থাকে। রনির মা বেঁচে নেই।
রনির ভাই হোসেন আলী জসিম জানান, ২৫ মার্চ সৌদি আরব যাওয়ার জন্য ভাইকে বিমানবন্দরে দিয়ে আসি। ঠিকঠাকমতো রনি সৌদি আরবের আবা কামিজ শহরে পৌঁছান। সৌদি থেকে দেশে আসার আগেই রনি ওমরাহ পালনের জন্য আবেদন করেন। দেশে আসার পর তিনি ওমরাহ পালনের জন্য মোবাইলফোনে মেসেজ পান। পরে তিনি ২৫ মার্চ সৌদি আরব চলে যান এবং ২৭ মার্চ ওমরাহ পালনের জন্য পবিত্র মক্কা নগরীতে যাওয়ার সময় সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করেন। ১ এপ্রিল কাজে যোগদানের কথা ছিল তার।
রনির ভাই আলী হোসেন বাবলুর স্ত্রী হাজেরা আক্তার বলেন, রনি অনেক ভালো ছিল। বিদেশে থাকা অবস্থায় দেড় বছর আগে তার প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হয়েছে। যেহেতু ইসমাইলের মায়ের অন্যত্র বিয়ে হয়ে গেছে তাই তার ছেলেকে দেখাশোনার জন্য দ্বিতীয় বিয়ের করতে ৫ ফেব্রুয়ারি দেশে আসেন। পরে চাকরি ও ওমরাহ করতে ২৫ মার্চ দেশ ত্যাগ করেন। আর বিয়ে করার দেড় মাসের মাথায় মারা গেলেন রনি।
রনির বোন হাজেরা বেগম স্বপ্না বলেন, আমার ভাইয়ের সঙ্গে শেষ কথা হয় সোমবার ইফতারের ১০ মিনিট আগে। ভাই বলেছিল, ওমরাহ শেষে কাজে যোগ দেবে। বাংলাদেশে ইফতারের সময় হয়ে গেছে বলে ফোন রেখে দেয় ভাই। তারপর সোমবার সকাল ৮টার দিকে সৌদিতে অবস্থানরত আমার স্বামী শাহজাহানের মাধ্যমে ভাইয়ের মৃত্যুর সংবাদ পাই।
রনির বাবা আব্দুল লতিফ বলেন, মা হারা ছেলেকে হারিয়েছি। এখন তার ছেলেকে কে দেখবে। ছেলেকে দেখাশোনার জন্যই রনি বিয়ে করেছিল। এখন রনি নেই, ছেলের ভবিষ্যৎ নিয়ে খুব দুশ্চিন্তায় আছি।
খুব দ্রুত যেন রনির মরদেহ দেশে আনা হয় সেজন্য সরকারের কাছে আবেদন জানিয়ে তিনি বলেন, আমি শেষবারের মতো ছেলের মুখটা দেখতে চাই।
টঙ্গী পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহ আলম বলেন, নিহতের মরদেহ দেশে আসার পর সরকারি নির্দেশনা অনুসারে সব কাজ শেষ করা হবে। আমরা মরদেহ দেশে আসার খবরাখবর রাখছি।
মো. আমিনুল ইসলাম/এমআরআর/এএসএম