পটুয়াখালীর পরিত্যক্ত কৃষি বিমানবন্দর নিয়ে টানাটানি
পটুয়াখালী-বরিশাল মহাসড়কের পাশে বদরপুর এলাকায় ১৩ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত কৃষি বিমান অবতরণ কেন্দ্র। পাকিস্তান আমলে নির্মিত এ বিমানবন্দরটি একসময় কৃষি মন্ত্রণালয় ব্যবহার করতো ফসলের মাঠে কিটনাশক ম্প্রে করার কাজে। সেখানে তখন হরহামেশা বিমানের ওঠানামা ছিল। সচল ছিল বিমানবন্দর। তবে সেসব দিন এখন অতীত। স্বাধীনতা পরবর্তীকালে কয়েক বছর কৃষিজমিতে বিমান থেকে কিটনাশক স্প্রে করা হলেও বর্তমানে এর প্রচলন নেই। সে কারণে গত কয়েক দশক ধরে অনেকটা পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে কৃষি বিমান অবতরণ কেন্দ্রটি।
পরিত্যক্ত এ বিমান অবতরণ কেন্দ্র নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে রয়েছে নানা পরিকল্পনা, প্রস্তাব ও দাবি। জেলাবাসীর চাওয়া, সেখানে একটি পূর্ণাঙ্গ বিমানবন্দর নির্মাণ করা হোক। আর কৃষি বিভাগ চাচ্ছে সেখানে বৃহদাকৃতির হর্টিকালচার সেন্টার নির্মাণ করতে। নৌ বাহিনী এ জায়গাটিকে নিজেদের সম্পত্তি হিসেবে কাজে লাগাতে চায়।
সম্প্রতি পটুয়াখালী খামার বাড়ির সাবেক উপপরিচালক হৃদয়েশ্বর দত্তের সঙ্গে কৃষি বিমান অবতরণ কেন্দ্রের বিষয়ে কথা হলে তিনি জাগো নিউজকে জানান, পাকিস্তান সরকারের সময় এটি নির্মাণ করা হয়। তখন বিমান থেকে ফসলের মাঠে কিটনাশক স্প্রে করা হতো। কৃষি মন্ত্রণালয়ের নিজস্ব ছোট আকৃতির বিমান এবং পাইলট ছিল, তারা খামার বাড়িতেই বসতো। তিনি যখন দায়িত্বে ছিলেন তখন নৌ বাহিনী এ স্থাপনাটি নেওয়ার জন্য একটি প্রস্তাব দিয়েছিল। এ বিষয়ে তিনি নিজেই একটি প্রতিবেদন কৃষি মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছিলেন।
আরও পড়ুন: কবে চালু হবে শমশেরনগর বিমানবন্দর?
ওই প্রতিবেদনে জেলা খামার বাড়ির সাবেক এ কর্মকর্তা উল্লেখ করেছিলে, নৌ বাহিনী যে পরিমাণ জমি নেবে সমপরিমাণ জমি অন্য কোনো এলাকা থেকে কৃষি মন্ত্রণালয়কে যেন দেওয়া হয়। কারণ, বরিশালের রহমতপুরে যে কৃষি বিমান অবতরণ কেন্দ্র ছিল সেটিকে যখন পূর্ণাঙ্গ বিমানবন্দর করা হয় তখন এর বদলে পটুয়াখালীতে এই কৃষি বিমান অবতরণ কেন্দ্রটি নির্মাণ করা হয়েছিল।

তিনি আরও জানান, বেশ কয়েক বছর আগে এখানে একটি হর্টিকালচার সেন্টার তৈরি করার জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। যেহেতু এটি মহাসড়কের পাশে এবং উঁচু জমি সে কারণে এখানে হর্টিকালচার সেন্টার করলে লাভজনক হতো। তবে নৌবাহিনী এ জায়গাটি নেওয়ার জন্য প্রস্তাব পাঠালেও হর্টিকালচার সেন্টার ভবন নির্মাণ করা যায়নি।
পটুয়াখালী খামার বাড়ির উপপরিচালক নজরুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, কৃষি বিমান অবতরণ কেন্দ্রটি এখনো কৃষি মন্ত্রণালয়ের কৃষি সম্প্রসার অধিদপ্তরের মালিকানায় রয়েছে। আমরা নিয়মিত সরকারকে খাজনা পরিশোধ করছি। মন্ত্রণালয় এখানে একটি নার্সারি করতে চাচ্ছে। তবে সাময়িক সময়ের জন্য বিমানবন্দরটি নৌবাহিনী ব্যবহার করছে। আমাদের যদি প্রয়োজন হয় কিংবা কোনো স্থাপনা নির্মাণ করতে হয় তখন আমরা এটি কাজে লাগাবো।
আরও পড়ুন: বিমানবন্দরে চলে অসামাজিক কার্যকলাপ

তবে এই কেন্দ্রটিকে কীভাবে একটি পূর্ণাঙ্গ অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দর হিসেবে ব্যবহার উপযোগী করা যায় সে বিষয়ে সরকারকে পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানাচ্ছেন জেলার সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।
পটুয়াখালী জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও ব্যবসায়ী নেতা অ্যাড. হাফিজুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, বিমানবন্দরটি কাউকে না দিয়ে তা যদি অভ্যন্তরীর রুটে ফ্লাইট পরিচালনার উপযোগী করা যায় তবে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ উপকৃত হবে। পটুয়াখালীতে পায়রা সমুদ্রবন্দর, তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র, কুয়াকাটা পর্যটন নগরীসহ ইপিজেডের কাজ চলমান। সে কারণে দেশি-বিদেশি পর্যটক ও ব্যবসায়ীদের আরও আকৃষ্ট করতে সেখানে একটি অভ্যন্তরীর বিমানবন্দর প্রয়োজন। যেহেতু এই কেন্দ্রটি শহরঘেঁষা লাউকাঠী নদীর তীরে ফলে এখানে পূর্ণাঙ্গ বিমানবন্দর করা হলে মানুষের দারুণ সাড়া পাওয়া যাবে।
আব্দুস সালাম আরিফ/এমকেআর/জেআইএম