নেপিয়ার চাষে সচ্ছলতা ফিরেছে আব্দুল হকের


প্রকাশিত: ০৬:৩০ এএম, ০৯ মার্চ ২০১৬

আধুনিক প্রযুক্তিতে চাষ-আবাদের ফলে বর্তমানে সব ধরনের জমিতে প্রায় সারা বছর বিভিন্ন ফসলের চাষ হচ্ছে। যার কারণে দিন দিন কমে যাচ্ছে পতিত জমির পরিমান। পাওয়া যাচ্ছে না আগের মত গোচারণ ভূমি। ফলে দেখা দিচ্ছে গবাদী পশুর সবুজ খাদ্যের অভাব। গবাদী পশুর এ সবুজ খাদ্যের চাহিদা পূরণে ব্যক্তিগত প্রয়োজন মেটানোর পাশাপাশি অনেকে ব্যবসায়িকভাবে নেপিয়ার ঘাসের চাষ করছেন এবং এর ফলে লাভবানও হচ্ছেন।

এ চাষ লাভজনক হওয়ায় ঝিনাইদহ জেলার ৬ উপজেলায় প্রায় অর্ধশতাধিক লোক বাণিজ্যিকভাবে সবুজ ঘাস নেপিয়ার চাষ করছেন। জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার আড়ুয়াশলুয়া গ্রামের আব্দুল হক তাদেরই একজন। আব্দুল হকের ৭ বিঘা জমির নেপিয়ার ঘাস উপজেলার ৩ ইউনিয়নের প্রায় ৮০ পরিবারের গবাদি পশুর সবুজ ঘাসের চাহিদা পূরণ করে। সবুজ ঘাসের যোগানদাতা আব্দুল হক নগর চাপরাইল এলাকায় "আমাদের ঘাসওয়ালা" হিসেবে পরিচিত।

নেপিয়ার চাষী আব্দুল হকের সাথে কথা বলে জানা যায়, নিয়ামতপুর ইউনিয়নের নগর চাপরাইল, বলাকান্দর, অনুপমপুর, হরিগোবীন্দপুর, আড়ুয়াশলুয়া, মস্তবাপুর, রায়গ্রাম ইউনিয়নের রায়গ্রাম, সিংঙ্গি বাজার, ভাটাডাঙ্গা, বনখির্দ্দা, গোমরাইল, ইছাখালি মালিয়াট ইউনিয়নের মলি­কপুর গ্রামসহ বিভিন্ন গ্রামের মানুষ তার কাছ থেকে তাদের গবাদি পশুর ঘাস ক্রয় করে থাকেন। নিয়ামতপুর ইউনিয়নের নগর চাপরাইল বাজারে প্রতিদিন কমপক্ষে ১৫০ আটি ঘাস বিক্রি হয়। প্রতি আটি ঘাস ১০টাকা দরে বিক্রি করা হয়। এই ঘাস বিক্রির আয়ে দরিদ্র আব্দুল হকের ৪ সদস্যের পরিবারে সচ্ছলতা এসেছে বলে তিনি জানান।

আব্দুল হক জানান, তার নিজের কোনো আবাদি জমি নেই। পরের জমি বর্গা নিয়ে তিনি চাষ শুরু করেন। প্রথম বছর ১ বিঘা জমি ৮ হাজার টাকা দিয়ে বর্গা নিয়ে নেপিয়ার ঘাসের চাষ করেন। এ ঘাস চাষ লাভজনক হওয়ায় তিনি চাষের জমি বাড়িয়ে বর্তমানে ৭ বিঘা জামিতে ঘাস চাষ করছেন।

তিনি জানান প্রথম বছর ১ বিঘা জমিতে ঘাসের চারা, জমি প্রস্তুত, সেচ ও সার বাবদ ঘাস চাষে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা খরচ হয়। দ্বিতীয় বছর থেকে শুধুমাত্র ঘাসের পরিচর্যা, সেচ ও সার বাবদ বছরে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা খরচ করতে হয়। ১ বিঘা জমি থেকে প্রতি বছর ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকার ঘাস বিক্রি করা যায়। সাধারণত ঘাস লাগানোর ৪৫ দিন পর থেকে ঘাস কাটার উপযোগি হয় বলে তিনি জানান।

তিনি আরো জানান, বর্ষা মৌসুমে ও ঈদুল আযহার পূর্ব পর্যন্ত ঘাসের চাহিদা বেশি থাকে। চাহিদা থাকলেও পৌষ মাঘ মাসে ঘাসের বৃদ্ধি কমে যাওয়ায় সেসময় ঘাস বিক্রি থেকে আশানুরুপ আয় হয় না।

বর্তমানে ৭ বিঘা জমিতে নেপিয়ার ঘাসের চাষ করে ৪ সদস্যের পরিবারের ব্যয়ভার মেটানোর পরও কিছু টাকা সঞ্চয়ের সুযোগ হয় তার। ঘাস চাষের আয় থেকে বিগত ৩ বছরের জমানো টাকা দিয়ে একমাত্র ছেলেকে নগর চাপরাইল বাজারে ৮০ হাজার টাকা ব্যয়ে একটি কম্পিউটারের দোকান করে দিয়েছেন। এছাড়াও ঘাস পরিবহনের জন্য ৩০ হাজার টাকা ব্যয়ে একটি স্যালো ইঞ্জিন চালিত করিমন গাড়ি কিনেছেন।

কালীগঞ্জ উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা. মিহির কান্তি বিশ্বাস জানান, গবাদী পশুর জন্য নেপিয়ার ঘাস পুষ্টিকর খাদ্য। এ চাষে খুব বেশি খরচ হয় না। দিন দিন গোচারণ ভূমি কমে যাওয়ায় সবুজ ঘাসের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ কারণে যে কেউ স্বল্প পুঁজি নিয়ে এ ঘাসের চাষ করে ভালো মুনাফা অর্জন করতে পারে।

এফএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।