বিপৎসীমার ওপরে তিস্তা-ধরলার পানি
নদীতীরবর্তী এলাকায় বন্যা, নিরাপদ আশ্রয়ে ছুটছে মানুষ
উজানের ঢল আর ভারী বৃষ্টিপাতে তিস্তা ও ধরলা নদীর পানি বেড়েছে। এরমধ্যে তিস্তার পানি দোয়ানী ব্যারাজ পয়েন্টে বিপৎসীমার ৪০ সেন্টিমিটার এবং ধরলার পানি শিমুলবাড়ী পয়েন্টে বিপৎসীমার ২২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এ অবস্থায় এ দুই নদীতীরবর্তী এলাকায় দেখা দিয়েছে ভয়াবহ বন্যা। নির্ঘুম রাত কাটছে নদীপাড়ের মানুষের। বন্যার পানি ঘরবাড়িতে প্রবেশ করায় দুর্ভোগে পড়েছেন ওইসব অঞ্চলের প্রায় পাঁচ হাজার পরিবার।

শুক্রবার (১৪ জুলাই) সকাল ৬টায় দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের পয়েন্টে তিস্তার পানিপ্রবাহ রেকর্ড করা হয়েছে ৫২ দশমিক ৫৫ সেন্টিমিটার, যা বিপৎসীমার ৪০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে (স্বাভাবিক পানিপ্রবাহ ৫২ দশমিক ১৫ সেন্টিমিটার)। এতে লালমনিরহাটের পাঁচটি উপজেলার তিস্তা চরাঞ্চলের জনপদে প্রবেশ করেছে বন্যার পানি। বিভিন্ন সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন সেসব এলাকার বাসিন্দারা।
আরও পড়ুন: তিস্তায় পানি বেড়ে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত, বন্যার শঙ্কা
গতকাল বৃহস্পতিবার দিনগত রাত ৯টায় দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের পয়েন্টে তিস্তার পানিপ্রবাহ রেকর্ড করা হয়েছিল ৫২ দশমিক ৫২ সেন্টিমিটার, যা বিপৎসীমার ৩৭ সেন্টিমিটার ওপরে ছিল। রাতারাতি বন্যার পানি ঢুকে পড়ে জেলার পাটগ্রাম, হাতীবান্ধা, কালীগঞ্জ, আদিতমারী ও সদর উপজেলার চরাঞ্চলীয় এলাকাগুলোতে।

পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম ইউনিয়নের গুচ্ছগ্রাম যাওয়ার রাস্তা ভেঙে বানের পানি প্রবেশ করছে বাড়িঘরে। এতে ওই এলাকার প্রায় পাঁচশো পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
তিস্তার পানি বাড়ায় জেলার পাটগ্রামের দহগ্রাম, হাতীবান্ধার গড্ডিমারী, দোয়ানী, ছয়আনী, সানিয়াজান ইউনিয়নের নিজ শেখ সুন্দর, বাঘের চর, ফকিরপাড়া ইউপির রমনীগঞ্জ, সিংঙ্গীমারি ইউনিয়নের ধুবনী, সিন্দুর্না ইউপির পাটিকাপাড়া, হলদিবাড়ী, ডাউয়াবাড়ী, কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী, শৈইলমারী, নোহালী, চর বৈরাতি, আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা, কালমাটি, পলাশী এবং সদর উপজেলার ফলিমারীর চর, খুনিয়াগাছ, কুলাঘাট, মোগলহাট, বড়বাড়ি, রাজপুর, গোকুণ্ডা ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। ডুবে গেছে চলাচলের রাস্তা। দুর্ভোগ বেড়েছে বানভাসি মানুষের।
আরও পড়ুন: জুলাই মাসে বন্যার শঙ্কা, বেশি থাকতে পারে তাপমাত্রা
বন্যার পানি লোকালয়ে প্রবেশ করায় অনেকেই উঁচু স্থান ও বাঁধের রাস্তায় আশ্রয় নিতে শুরু করেছেন। চরগুলোতে নলকূপ ও টয়লেটে পানি ওঠায় বিশুদ্ধ পানির সংকট ও স্যানিটেশন সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে।

হাতীবান্ধা উপজেলার গড্ডিমারি ইউনিয়নের দোয়ানি গ্রামের বাসিন্দা আক্কাস আলী জাগো নিউজকে বলেন, গতকাল (বৃহস্পতিবার) বিকেল থেকে ঘরবাড়িতে বন্যার পানি ঢুকতে শুরু করে। শুক্রবার সকাল নাগাদ ঘরের ভেতর হাঁটু পানি। রান্নাবান্না বন্ধ। সবাই শুকনো খাবার খেয়ে আছি।
আরও পড়ুন: বাঁধ নিয়ে উত্তরে শঙ্কার মেঘ
গড্ডিমারি ইউনিয়ন পরিষদের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য জাকির হোসেন বলেন, বৃহস্পতিবার থেকে তিস্তার পানি প্রবেশ করে ইউনিয়নের প্রায় তিন হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়ছে। পানি শুধু বাড়ছে আর বাড়ছে। বন্যা শুরু হওয়ায় তিস্তাপাড়ের অনেক মানুষ দুশ্চিন্তায় নির্ঘুম রাত কাটিয়েছেন।

পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান হাবিব জাগো নিউজকে বলেন, ভারত থেকে আসা ঢলের পানির তোড়ে দহগ্রামের গুচ্ছগ্রাম যাওয়ার রাস্তাটি ভেঙে গিয়ে প্রায় হাজারখানেক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ছেন। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসককে জানানো হয়েছে।
আরও পড়ুন: বিপৎসীমার ওপরে তিস্তার পানি
লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীল কুমার বলেন, ভারত থেকে প্রচুর পরিমাণে পানি ছেড়ে দেওয়ায় তিস্তা ও ধরলার পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তিস্তাপাড়ের মানুষকে সতর্ক করা হয়েছে।
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্যাহ জাগো নিউজকে বলেন, জেলার পাঁচটি উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তাদের বানভাসি মানুষের সার্বিক খোঁজখবর রাখতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
রবিউল হাসান/এমকেআর/জিকেএস