জয়পুরহাট চিনিকলের দুই কিলোমিটার বাইপাস সড়ক যেন মরণফাঁদ

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি জয়পুরহাট
প্রকাশিত: ০৫:০৩ পিএম, ২২ আগস্ট ২০২৩

বছরের পর বছর সংস্কার না হওয়ায় যেন মরণফাঁদ হয়ে দাঁড়িয়েছে জয়পুরহাট চিনিকলের বাইপাস সড়ক। দুই কিলোমিটার সড়কটিতে সৃষ্টি হয়েছে বড় বড় গর্ত। এতে প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে শতশত ভারী ট্রাকসহ অন্য যানবাহন। মাঝেমধ্যে ঘটছে দুর্ঘটনাও। চলাচলকারীদের দীর্ঘদিনের এই ভোগান্তি দেখার যেন কেউ নেই। তাই দ্রুত এই সড়কটি দ্রুত সংস্কারের দাবি তাদের।

জানা গেছে, প্রায় ষাটের দশকে জয়পুরহাট চিনিকলের নিজস্ব মালিকানা জমিতে আখসহ অন্য মালামাল পরিবহনের জন্য পাঁচ টন ধারণক্ষমতার দুই কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ করা হয়। যার বিস্তৃতি জয়পুরহাট শহরের স্টেডিয়াম মোড় থেকে জয়পুরহাট-পাঁচবিবি সড়কের কাশিয়াবাড়ি মোড় পর্যন্ত। সেই থেকে সড়কটিতে চিনিকলের অভ্যন্তরীণ যানবাহন চলাচল করে।

jagonews24

এছাড়া শহরে তীব্র যানজটের কারণে পাশের হিলি স্থলবন্দর থেকে পণ্য নিতে যাওয়া-আসার জন্য দিনে শতশত ভারী ট্রাক সড়কটি দিয়ে চলাচল করে। পাশাপাশি জয়পুরহাট শহরের পশ্চিমাঞ্চলের কয়েকটি গ্রামের লোকজন চলাচল করে আসছে এই সড়ক দিয়ে। অন্যদিকে, দেশের বৃহত্তম বারো শিবালয় শিব মন্দির রয়েছে বেল আমলা এলাকায়। ঐতিহাসিক এ মন্দির দেখতে প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পর্যটক ও ভক্তরা আসেন। সেখানে জয়পুরহাট শহর থেকে যেতে হলে এই সড়ক দিয়েই যেতে হয়। এতে দুর্ভোগ পোহাতে হয় তাদেরও।

স্থানীয়রা জানান, ধারণ ক্ষমতার বেশি ভারী ট্রাক এ পথে যাতায়াত করায় সড়কটির দুই কিলোমিটার অংশের বিভিন্ন স্থানে ভেঙে খানাখন্দে পরিণত হয়েছে। ফলে পুরো সড়ক চলাচল অনুপযোগী হয়েছে। খরা মৌসুমে যেমন ধুলাবালির ভোগান্তি, তেমনি চলমান বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টির কারণে সড়কের ভাঙা অংশগুলো ছোট ছোট ডোবায় পরিণত হয়েছে। শহর অতিক্রম করে জয়পুরহাটের পশ্চিমাঞ্চলে যোগাযোগের বিকল্প সড়ক না থাকায় ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন এ পথেই ভারী ট্রাকগুলো চলাচল করছে। যানবাহনের অতিরিক্ত চাপে দীর্ঘদিন থেকে সড়কটি অকেজো হয়ে পড়লেও সংস্কার না করায় ঝুঁকি বাড়ছে।

jagonews24

বেলআমলা এলাকার বাসিন্দা আলমগীর জাগো নিউজকে বলেন, কয়েক বছর থেকে সড়কটির বেহাল দশার কারণে চোখের সামনে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটতে দেখেছি। প্রতিদিন যাতায়াত করতে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়। কিন্তু দুঃখের বিষয় সড়কটি সংস্কারের কোনো উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি।

কাশিয়াবাড়ি রেল ক্রসিংয়ের গেট কিপার রমজান আলী জাগো নিউজকে বলেন, সড়কে বড় বড় গর্তের কারণে মাল বোঝায় ট্রাক চলাচল করার সময় প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে। বৃষ্টির পানিতে গর্তগুলোতে পানি জমে থাকায় পায়ে হেঁটেও চলাচল করা যায় না।

নওগাঁর থেকে আসা ট্রাকচালক হায়দার আলী জাগো নিউজকে বলেন, অতিরিক্ত যানজটের কারণে শহরের ভেতর দিয়ে ট্রাক নিয়ে যাওয়া যায় না। তাই বাধ্য হয়ে ঝুঁকি নিয়ে চিনিকল বাইপাস সড়ক দিয়ে চলাচল করতে হয়।

jagonews24

হিলি স্থলবন্দর থেকে পণ্য নিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ যাচ্ছিলেন আনোয়ার হোসেন। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, এই সড়ক দিয়ে চলাচল করতে অনেক সময় ট্রাকের পাতি ভেঙে যায়। কখনো টায়ার ফেটে যায়। এই ভোগান্তির সমাধান চাই।

মোটরসাইকেলচালক জাকির হোসেন বলেন, বৃষ্টির মধ্যে কয়েকদিন আগে এই সড়ক দিয়ে মোটরসাইকেল নিয়ে যাচ্ছিলাম। সেসময় গর্তের কারণে মোটরসাইকেলসহ আমি পড়ে গিয়েছিলাম। সরকারের কাছে দাবি সড়কটি যেন দ্রুত সংস্কার করা হয়।

জয়পুরহাট পৌরসভার স্থানীয় কাউন্সিলর ওলিউজ্জামান বাপ্পী বলেন, সড়কটির মালিকানা চিনিকলের। তাই পৌরসভার পক্ষ থেকে সড়কটি সংস্কার করা সম্ভব হচ্ছে না।

jagonews24

জয়পুরহাট সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সৌম্য তালুকদার জাগো নিউজকে বলেন, সড়কটি চিনিকল কর্তৃপক্ষের হওয়ায় এই সড়কের কোনো নম্বর নেই। আমাদের সড়কগুলোতে নিজস্ব কোড নম্বর থাকে। এটির না থাকায় সংস্কার হচ্ছে না।

এ বিষয়ে জয়পুরহাট চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আখলাছুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, চিনিকলের প্রয়োজনে পাঁচ টন ধারণক্ষমতার সড়কটিতে ২৫ থেকে ৩০ টন ধারণক্ষমতার ভারী ভারী ট্রাক চলাচল করায় বড় বড় গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। যা সংস্কার করার মতো অর্থ আমাদের নেই। সড়কটি সংস্কার করার বরাদ্দ যদি পাওয়া যায় তাহলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এমআরআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।