কুড়িগ্রামে নদীভাঙন
‘ঘরের চালা সরাই নিয়া স্কুল মাঠত থুচি, কোটেই থাকমো জানি না’

টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে ধরলা, ব্রহ্মপুত্র ও তিস্তায় দেখা দিয়েছে নদীভাঙন। এতে করে নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার ঘড়িয়াল ডাঙা ইউনিয়ন ও উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের ১০ বসতভিটাসহ শতাধিক বিঘা আবাদি জমি। হুমকিতে রয়েছে কমিউনিটি ক্লিনিক, বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র, মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ভূমি অফিসসহ বসতি ও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা।
সরেজমিনে দেখা যায়, সদর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের খুদিরকুটি ব্যাপারীপাড়া ও মোগলবাসা ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর সিতাইঝাড় গ্রামে ধরলার তীব্র ভাঙনে দুদিনে শত শত বিঘা জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। ওই এলাকার আব্দুস সাত্তার, জোবেদ আলী, আ. করিম বাদশা, লুৎফর মুন্সি, দেওয়ান আলী, মোহাম্মদ আলী, রোস্তমের বসতভিটা ও আবাদি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। বসতভিটা হারিয়ে দিশেহারা পড়েছেন নদীপাড়ের বাসিন্দারা। একই সঙ্গে আতঙ্কে দিন পার করেছে আরও শতাধিক পরিবার।
আরও পড়ুন: ২ সপ্তাহে পদ্মায় বিলীন ৫০ বিঘা জমি, ভাঙন রোধের দাবিতে মানববন্ধন
সিতাই ঝাড় গ্রামের ভিটেমাটি হারা জোবেদ আলী বলেন, গতরাতে আমার বাড়িঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। হঠাৎ ভাঙন শুরু হওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছি। নিজের জমি জমা না থাকায় কোথায় ঠাঁই নেব জানি না। আপাতত পরিবার নিয়ে আত্মীয়ের বাড়িতে উঠেছি। আল্লাহ জানে কপালে কি আছে।
ভাঙনের শিকার আরেক দিনমজুর সামেদ আলী বলেন, ‘চারটা ঘরের চালা সরাই নিয়া স্কুল মাঠত থুচি। ভিটার অর্ধেক গেইছে। যে স্রোত পড়ছে নগদ বাকিকোনাও যায়। একজনের কাছত ঘর তুলি থাকার জন্য জমি চাছি। না দিলে কোটেই থাকমো জানি না।( চারটি ঘরের চালা খুলে স্কুলের মাঠে রেখেছি। ভিটার অর্ধেক নদী গর্ভে চলে গেছে। প্রবল স্রোতে বাকিটুকুও না চলে যায় সে চিন্তায় আছি। একজনের কাছে ঘর তোলার জন্য জমি চেয়েছি, না দিলে কোথায় থাকবো জানিনা)।’
বেগম গঞ্জ ইউনিয়নের স্থানীয় ইউপি সদস্য শফিকুল ইসলাম বলেন, কয়েকদিন ধরে ভাঙন চলছে। ৪ নম্বর ওয়ার্ডের স্কুল সংলগ্ন ২৯টি পরিবার বসতভিটা হারিয়েছে। ভাঙনের তীব্রতা বেড়েই চলছে। কিন্তু পরিবারগুলোর পুনর্বাসনের কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।তবে ভাঙন ঠেকাতে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কর্তৃপক্ষ তাৎক্ষণিক দুই হাজার বস্তা জিও ব্যাগ ফেলার অনুমতি দিয়েছে। আগামী মঙ্গলবার থেকে জিও ব্যাগ ডাম্পিংয়ের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আরও পড়ুন: ভাঙন আতঙ্কে মেঘনা তীরের লাখো মানুষ
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, রাজারহাট ঘড়িয়াল ডাঙা ইউনিয়ন, উলিপুর বেগমগঞ্জ ও সদর উপজেলার মোগলাবাসা ধরলার বাম তীরে প্রায় তিন কিলোমিটার অংশে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতো বড় অংশে জরুরি প্রতিরক্ষা কাজ করার বরাদ্দ নেই। আমরা তাৎক্ষণিক ২-৩ হাজার জিও ব্যাগ সরবরাহের উদ্যোগ নিয়েছি। স্কুল, কমিউনিটি ক্লিনিকসহ স্থাপনাগুলো রক্ষায় আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।
ফজলুল করিম ফারাজী/জেএস//এমএস