নীলফামারীতে নৌকার মাঝি হলেন যারা

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি নীলফামারী
প্রকাশিত: ০৫:২৪ পিএম, ২৭ নভেম্বর ২০২৩

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে থেকে চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করেছে ক্ষমতাসীন দলটি। এতে নীলফামারী-১ আসনে বীর মুক্তিযোদ্ধা আফতাব উদ্দিন সরকার, নীলফামারী-২ আসনে আসাদুজ্জামান নূর, নীলফামারী-৩ আসনে অধ্যাপক গোলাম মোস্তফা এবং নীলফামারী-৪ আসনে জাকির হোসেন বাবুলকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।

রোববার (২৬ নভেম্বর) বিকেলে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এ নামগুলো ঘোষণা করেন।

এবারের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নীলফামারীর চারটি আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপত্র তুলেছিলেন ৩৮ জন। এরপর জেলায় শুরু হয় চুলচেরা বিশ্লেষণ। কে বাদ পড়ছেন আর কে হচ্ছেন নৌকার মাঝি এ নিয়ে সব জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বিকেলে দলীয় মনোনয়ন ঘোষণা করেন।

নীলফামারী-১ (ডোমার-ডিমলা)

এ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আফতাব উদ্দিন সরকার। তিনি ১৯৭৩-১৯৮৩ সাল পর্যন্ত ডিমলা সদর ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান ছিলেন। ১৯৮৭ সালের প্রথম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তিনি ডিমলা উপজেলার প্রথম উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন এবং ১৯৯০ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৯ সালে পুনরায় উপজেলা পরিষদ নির্বাচন হলে তিনি আবারও উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। আফতাব ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নীলফামারী-১ (ডোমার ডিমলা) আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন লাভ করেন এবং নির্বাচনে তিনি ২ লাখ ৩ হাজার ৭২৭ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন।

নীলফামারী-২ (সদর উপজেলা)

নৌকা প্রতীকের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পাওয়া আসাদুজ্জামান নূর এই আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য। ১৯৬৩ সালে তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নে যোগদানের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে রাজনীতিতে যোগদান করেন আসাদুজ্জামান নূর। ১৯৬৫ সালে তিনি নীলফামারী কলেজের ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। তিনি পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংস্কৃতিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছেন তিনি। পরবর্তীতে দেশ স্বাধীনের পর কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগদান করেন। দীর্ঘদিন প্রত্যক্ষ রাজনীতি থেকে নিজেকে বিরত রেখে সংস্কৃতি কর্মী হিসেবে নানান সামাজিক-সাংস্কৃতিক আন্দোলনে নিজেকে নিয়োজিত রাখেন এবং স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবীতে শহীদ জননী জাহানারা ইমামের সঙ্গে আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন।

১৯৯৮ সালের মাঝামাঝি পর্যায়ে তিনি আবারও প্রত্যক্ষ রাজনীতিতে যুক্ত হন এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। ২০০২ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হন এবং পরবর্তীতে ২০০৯ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদকের দায়িত্ব লাভ করেন।

আসাদুজ্জামান নূর নীলফামারী-২ আসন থেকে ২০০১, ২০০৮ এবং ২০১৪ সালে সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন। ৯ম জাতীয় সংসদের বিভিন্ন সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে সদস্য হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করবার পর ১২ জানুয়ারি গঠিত মন্ত্রিসভায় সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন তিনি। ২০১৮ সালের একাদশ নির্বাচনে তিনি একই আসন থেকে পুনরায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

নীলফামারী-৩ (জলঢাকা)

আসনে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক গোলাম মোস্তফা। ২০১৪ সালের নির্বাচনে জয়ী অধ্যাপক গোলাম মোস্তফা জলঢাকা ডিগ্রি কলেজে শিক্ষকতার পেশা এবং রাজনীতির পাশাপাশি স্থানীয় একটি পত্রিকার সম্পাদক। একইসঙ্গে জলঢাকা প্রেস ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। আশির দশকে ছাত্র রাজনীতিতে তিনি রংপুর কারমাইকেল কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন।

নীলফামারী-৪

এ আসনে এবার আওয়ামী লীগের প্রার্থী ঘোষণায় চমক দিয়েছে কেন্দ্র। সৈয়দপুর ও কিশোরগঞ্জ উপজেলা নিয়ে নীলফামারী-৪ আসন। প্রার্থী নির্বাচনে সৈয়দপুর উপজেলাকে বেশি গুরুত্ব দেয় রাজনৈতিক দলগুলো। তবে এবার আওয়ামী লীগ কিশোরগঞ্জ উপজেলার দলীয় সভাপতি জাকির হোসেন বাবুলকে মনোনয়ন দিয়ে চমক দিয়েছে।

এদিকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে গত ১৮ থেকে ২১ নভেম্বর পর্যন্ত চার দিনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন ৩ হাজার ৩৬২ জন মনোনয়নপ্রত্যাশী। মনোনয়ন ফরম বিক্রি করে দলটির আয় হয়েছে ১৬ কোটি ৮১ লাখ টাকা।

নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী নির্বাচনে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন ৩০ নভেম্বর, মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই হবে ১ থেকে ৪ ডিসেম্বর, মনোনয়ন আপিল ও নিষ্পত্তি ৬ থেকে ১৫ ডিসেম্বর, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ১৭ ডিসেম্বর। প্রতীক বরাদ্দ হবে ১৮ ডিসেম্বর এবং নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা ১৮ ডিসেম্বর থেকে ৫ জানুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত চলবে। ভোটগ্রহণ ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে। সংসদ নির্বাচনের জন্য ৬৬ জন রিটার্নিং কর্মকর্তা এবং ৫৯২ জন সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার নিয়োগ চূড়ান্ত করা হয়েছে।

এফএ/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।