শিশু মুসাফিরের মৃত্যু
তদন্ত কমিটি গঠন, সাংবাদিক দেখে হাসপাতাল ছাড়লেন চিকিৎসক
শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের চিকিৎসক শরীফ-উর রহমানের অবহেলায় মুসাফির নামে চার মাস বয়সী শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী তিন কার্য দিবসের মধ্যে তদন্ত কমিটিকে ঘটনার তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ) দুপুরে তদন্ত কমিটি গঠনের বিষয়টি নিশ্চিত করেন হাসপাতালটির তত্ত্বাবধায়ক ডা. হাবিবুর রহমান।
এর আগে গত বুধবার রাতে সদর হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় শিশু মুসাফিরের।
স্বজন ও হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, গত দুই দিন ধরে পেটে গ্যাস ও ঠান্ডাজনিত সমস্যা নিয়ে ভুগছিল শরীয়তপুর পৌর এলাকার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের রাজিব শেখ ও রুবিনা দম্পতির সন্তান মুসাফির। বুধবার (১৩ মার্চ) দুপুরে শিশুটিকে নিয়ে আড়াইশো শয্যা সদর হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে চিকিৎসা নিতে যান মা রুবিনা বেগম। এ সময় হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসকের দায়িত্ব পালন করছিলেন চিকিৎসক শরীফ-উর রহমান। তাকে শিশুটির অসুস্থতার বিষয়টি জানানো হলে তরল জাতীয় একটি ওষুধ লিখে দেন তিনি। ওষুধটি খাওয়ানোর পর আরও বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ে শিশু মুসাফির। বেশ কয়েকবার বমিও করে। অবস্থা খারাপ দেখে মা রুবিনা বেগম ও স্বজনরা জরুরি বিভাগে বেশ কয়েকবার চিকিৎসককে ডেকে আনতে যান। তবে চিকিৎসক শরীফ-উর রহমান বিষয়টি আমলে না নিয়ে চিকিৎসা সেবা দিতে আসেননি।
শিশুটির অবস্থা খারাপ হওয়া শুরু করলে কর্তব্যরত স্টাফ নার্স সীমা বৈদ্য প্রথমে ওয়ার্ডবয় ও শেষে আয়াকে পাঠান ডাক্তারকে ডাকতে। তবে সেসবেও কর্ণপাত করেননি চিকিৎসক শরীফ-উর রহমান। উপরন্তু শিশুটির অক্সিজেন মাস্ক খুলে তার কাছে নিয়ে যেতে বলেন। তবে শিশুর অবস্থা গুরুতর হওয়ায় অক্সিজেন খুলতে অপারগতা প্রকাশ করেন নার্স। এরপরও চিকিৎসক শরীফ উর রহমান শিশু মুসাফিরকে আর দেখতে আসেননি। একপর্যায়ে রাত ৮টার দিকে মারা যায় শিশু মুসাফির।

বিষয়টি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের নজরে আসলে বৃহস্পতিবার দুপুরে গাইনি বিশেষজ্ঞ হোসনে আরাকে প্রধান করে সিনিয়র কনসালটেন্ট (অর্থোপেডিক্স) আতিকুর রহমান ও আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) মিতু আক্তারকে সদস্য করে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটিকে আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি চিকিৎসক শরীফ-উর রহমানকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. হাবিবুর রহমান বলেন, শিশু মৃত্যুর ঘটনায় তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তাদের আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি চিকিৎসক শরীফ-উর রহমানকে কারণ দর্শানো নোটিশ দেওয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে শরীয়তপুর সিভিল সার্জন ডা. আবুল হাদি মোহাম্মদ শাহ পরান বলেন, শিশু মৃত্যুর বিষয়টি শুনে আমি হাসপাতালে গিয়েছি। যদি চিকিৎসকের অবহেলায় শিশুটির মৃত্যু হয়, তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে হাসপাতালের অভিযুক্ত চিকিৎসা কর্মকর্তা শরীফ-উর রহমান সাংবাদিকদের উপস্থিতি টের পেয়ে হাসপাতাল ত্যাগ করার চেষ্টা করেন। তাকে প্রশ্ন করা হলে উত্তর না দিয়ে দ্রুত মোটরসাইকেল যোগে হাসপাতাল ছেড়ে যান।
বিধান মজুমদার অনি/এফএ/এমএস