ঈদেও বেচাকেনা নেই ঈশ্বরদীর বেনারসী পল্লীতে

উপজেলা প্রতিনিধি উপজেলা প্রতিনিধি ঈশ্বরদী (পাবনা)
প্রকাশিত: ১০:৫৬ এএম, ২৬ মার্চ ২০২৪

ঈশ্বরদী বেনারসী পল্লীতে ঈদের কর্ম ব্যস্ততা নেই। একসময়ের প্রাণচাঞ্চল্যে বেনারসী পল্লীর কারিগররা এবার ঈদ মৌসুমেও অলস সময় পার করছেন। দফায় দফায় সূতার দাম বৃদ্ধি ও দেশের বাজারে ভারতীয় শাড়ি সয়লাব হওয়ায় এবার বেনারসী শাড়ির চাহিদা কমেছে।

ব্রিটিশ আমলে গড়ে উঠা শত বছরের পুরানো ঈশ্বরদীর ঐতিহ্যবাহী বেনারসী পল্লী ঈদ এলেই তাঁতের খটখট শব্দ আর ক্রেতা-বিক্রেতাদের পথচারণায় মুখরিত হয়ে উঠতো। তবে এবার ঈদে ফতেহমোহাম্মদপুর এলাকার চিত্র পুরোটাই ভিন্ন। পৌর শহরের অবাঙালি অধ্যুষিত বেনারসী পল্লী ফতেহমোহাম্মদ এলাকায় কারিগরদের কাজের তৎপরতা নেই। ঈদকে ঘিরে বেনারসী পাড়ায় কোনো প্রাণচাঞ্চল্যতা নেই।

ঈদেও বেচাকেনা নেই ঈশ্বরদীর বেনারসী পল্লীতে

দক্ষ কারিগরের নিখুঁত বুননের জন্য এখানকার তাঁতের তৈরি বেনারসী শাড়ির ব্যাপক কদর ছিল। করোনা মহামারীর পর দফায় দফায় সূতার দাম বৃদ্ধি, শ্রমিক সংকট ও দেশীয় বাজারে ভারতীয় শাড়ির প্রভাবে বেনারসী পল্লী এখন হুমকির মুখে।

বেনারসী তাঁতের মহাজনরা জানান, এখানে একসময় ৪৫০টি বেনারসী কারখানা ছিল। হাজার হাজার কারিগর এ কাজে জড়িত ছিল। এখন মাত্র ৫০টি কারখানা চালু রয়েছে। ভারতীয় নিম্নমানের শাড়িতে দেশীয় বাজার সয়লাব ও দফায় দফায় সুতা, চমকিসহ তাঁত সামগ্রীর দাম বাড়ার লোকসানে পড়ে অনেকেই বেনারসী তাঁত শিল্প থেকে ধীরে ধীরে গুটিয়ে নিচ্ছেন।

ঈদেও বেচাকেনা নেই ঈশ্বরদীর বেনারসী পল্লীতে

ফতেহমোহাম্মদপুর লোকোসেড এলাকার শোভা সিল্কের কারিগর আব্দুল করিম জাগো নিউজকে জানান, আগে ঈদ এলেই দিনরাত কাজ করতে হতো। এখন আর সেই দিন নেই। আগে শাড়ির ব্যাপক চাহিদা ছিল এখন বাজারে ভারতীয় শাড়ির ঢুকে পড়ায় আমাদের শাড়ির চাহিদা কমে গেছে। ক্রেতারা শাড়ির মান এখন আর দেখে না তারা মেশিনে তৈরি মানহীন ভারতীয় শাড়ি বেশি কিনছে। ক্রেতারা বুঝতে চায় না আমাদের হাতে বুননের শাড়ির মান-গুণ সবই ভালো।

শামীম বেনারসীর কারিগর জাহিদুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ৩৫ বছর ধরে বেনারসী পল্লীতে তাঁতের কারিগর হিসেবে কাজ করছি। এবারের ঈদের মতো খারাপ সময় আগে কখনো দেখেনি। বেনারসি শাড়ি বেচাকেনা একেবারেই নেই। এভাবে চলতে থাকলে কারখানা বন্ধ হয়ে যাবে। এসবের মূল কারণ হচ্ছে ভারত থেকে অবাধে নিম্নমানের শাড়ি আসছে। এতে দেশী শাড়ির বাজার নষ্ট হচ্ছে।

শামীম বেনারসী কারখানার স্বত্বাধিকারী শামীম হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, বেনারসী শাড়ির ব্যবসা ধ্বংসের পথে। অন্য বছর ঈদে কমবেশি শাড়ির চাহিদা থাকতো এবার কোনো ধরনের চাহিদা নেই। ব্যবসা-বাণিজ্য খুবই খারাপ। কারিগরদের বেতন দিতে পারছি না। ভারতীয় শাড়ি বাজার দখল করে ফেলেছে। ভবিষ্যত যে কি তা বলতে পারছি না।

ঈদেও বেচাকেনা নেই ঈশ্বরদীর বেনারসী পল্লীতে

মদিনা বেনারসীর স্বত্বাধিকারী সেলিম হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ২২টি তাঁতের মধ্যে এখন মাত্র ৫টি চলছে। ঈদে শাড়ির কোনো চাহিদা ও অর্ডার নেই। আগে এখানকার শাড়ি টাঙ্গাইল ও ঢাকার মিরপুরের ব্যবসায়ীরা কিনতেন। এবার ঈদে তারা কোনো অর্ডার দেয়নি। আমার মতো অন্য মহাজনদেরও একই অবস্থা।

জাবেদ অ্যান্ড ব্রাদাস বেনারসী শাড়ির শো-রুমের স্বত্বাধিকারী জাবেদ হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ঈশ্বরদীর বেনারসী শাড়ির চাহিদা এখন কমে গেছে। আমাদের শো-রুমে বেনারসী শাড়ি থাকলেও তেমন বেচাকেনা নেই। ভারত থেকে আমদানি করা শাড়ি বেশি বেচাকেনা হচ্ছে।
ঈশ্বরদী বেনারসি তাঁতি সমিতির সভাপতি ওয়াকিল আলম বলেন, প্রতিবছর ঈদে বেনারসী শাড়ির যে চাহিদা ছিল এবার তার ৬০ ভাগ নেই। এখানকার বেশিরভাগ তাঁত বন্ধ হয়ে গেছে। কারিগরদের তৈরি বেনারসী শাড়ির গুণগত মান অত্যন্ত ভালো। তাই দাম ভারতের শাড়ির চেয়ে বেশি। কিন্তু শাড়ির ন্যায্য মূল্য পাচ্ছি না। ফলে অনেকেই বাধ্য হয়ে কারখানা বন্ধ করে দিয়েছে। কারিগররাও এ পেশা ছেড়ে দিচ্ছে।


শেখ মহসীন/এএইচ/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।