মুরাদের ভয়ংকর থাবার চিহ্ন ‘এখনো দগদগে’

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি জামালপুর
প্রকাশিত: ০৪:৪১ পিএম, ২৩ জানুয়ারি ২০২৫

ডা. মুরাদ হাসান পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের প্রভাবশালী নেতা। খুন, গুম, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, লুটপাট, টেন্ডারবাজি, জমি দখল, নির্যাতন এমন কোনো কর্মকাণ্ড নেই যা ডা. মুরাদ হাসান করেননি। ক্ষমতার দাপটে দলীয় শীর্ষপদ থেকে এমপি এমনকি প্রতিমন্ত্রীর পদও বাগিয়ে নেন। সর্বশেষ এক নায়িকার সঙ্গে বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে সবই হারাতে হয়েছে তাকে।

কিন্তু মুরাদের হিংস্র থাবা থেকে রেহাই পাননি জামালপুরের সরিষাবাড়ীর মানুষ। রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় সবই চালিয়ে গেছেন তিনি। এতো অপকর্মের পরও ধরাছোঁয়ার বাইরে সেই ডা. মুরাদ হাসান।

সময়টা ২০১৩ সালের ২৬ মার্চ। স্বাধীনতা দিবসে ফুল দেওয়াকে কেন্দ্র করে উপজেলার আরামনগর বাজারে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এসময় পৌর বিএনপির কর্মী বেলাল হোসেনকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করেন মুরাদ হাসান। অভিযোগ রয়েছে ২০১০ সালে ৪ সেপ্টেম্বর উপজেলার চরপাড়া এলাকার ছাত্রদল কর্মী মাসুদের হাত-পা ভেঙে যমুনা নদীতে ফেলে গুম করে মুরাদ বাহিনীর লোকজন।

স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, চাঁদাবাজি, লুটপাট, টেন্ডারবাজির মাধ্যমে ব্যাপক অর্থবিত্তের মালিক হন ডা. মুরাদ। উপজেলার তারাকান্দিতে বিলাসবহুল বাড়ি নির্মাণ করেন। জেলা শহরের কলেজ রোড়ে দুটি বহুতল ভবন ছাড়াও রাজধানী ঢাকায় একাধিক প্লট ও জমি রয়েছে তার।

ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে যমুনা সার কারখানার সব ব্যবসা-বাণিজ্য দখলে নেন মুরাদ হাসান। কারখানার সার সিন্ডিকেট, সিবিএ কমিটি, লোড-আনলোড, ট্রাক মালিক সমিতি, কারখানার অ্যামোনিয়া গ্যাস বিক্রি ছিল তার নিয়ন্ত্রণে।

প্রতিমন্ত্রী হয়ে ডা. মুরাদ হাসান বাড়ির কাজের লোক সাখাওয়াত হোসেন মুকুলকে দিয়ে গড়ে তোলেন সন্ত্রাসী ‘মুকুল বাহিনী’। এ বাহিনীর বিরুদ্ধে ডা. মুরাদের নির্দেশে টিআর-কাবিখা, কাবিটা প্রকল্প হরিলুট, অন্যের জমি দখল, মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ ও একাধিক পাটকল দখলে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।

মুরাদের নৃশংসতার কথা ভেবে এখনো আহাজারি করেন বেলালের স্ত্রী জহুরা বেগম। তার অভিযোগ হত্যাকাণ্ডের একযুগ পেরিয়ে গেলেও মুরাদের কারণে এতদিন প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। তার তিনি স্বামী হত্যার বিচার চান।

আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য বাবা অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান তালুকদারের পরিচয়ে ২০০৮ ও ২০১৮ সালে জামালপুর-৪ আসনে সংসদ সদস্য হন ডা. মুরাদ হাসান। এরপর ২০১৮ সালে তিনি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ও ২০১৯ সালে তথ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

সরিষাবাড়ি উপজেলা ছাত্রদলের সভাপতি বিদ্যুৎ আহমেদ বলেন, মুরাদ নিজের অনুসারীদের নিয়ে নিজস্ব সন্ত্রাসী বাহিনী গড়ে তুলেন। হত্যা-গুম-খুনসহ এমন কোনো অপকর্ম নেই যা এ বাহিনী করেনি। এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে মুরাদ বাহিনী।

এ বিষয়ে জেলা বিএনপির সহ-দপ্তর সম্পাদক জহুরুল ইসলাম পিন্টু বলেন, মুরাদের বিরুদ্ধে একাধিক হত্যা মামলা হয়েছে। এলাকার সার কারখানাসহ সব ধরনের বাণিজ্য তার নিয়ন্ত্রণে ছিল। তার ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পেতেন না।

সরিষাবাড়ি পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আশরাফ ফকির বলেন, বাড়ির কাজের লোক দিয়ে সন্ত্রাসী বাহিনী করে তিনি সব নিয়ন্ত্রণ করতেন। একাধিক নারী ও চিত্রনায়িকাদের সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্ক ও স্ত্রী নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে তার নামে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পরিবারকে নিয়ে অশালীন মন্তব্য করে সমালোচিত হন তিনি।

জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মো. ওয়ারেছ আলী মামুন বলেন, প্রকাশ্যে অস্ত্রবাজি, চাঁদাবাজি, মাদকসহ এমন কোনো খারপ কাজ নেই যার সঙ্গে মুরাদের সম্পৃক্ততা ছিল না। রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় তিনি এসব অপকর্ম করতেন।

পুলিশ সুপার সৈয়দ রফিকুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, মুরাদ হাসানের বিরুদ্ধে আদালতে হত্যা মামলাসহ একাধিক মামলা রয়েছে। এছাড়া অজ্ঞাতনামা বেশকিছু অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে রয়েছে। তাকে গ্রেফতার করে আইনের মাধ্যমে শাস্তি নিশ্চিত করা হবে।

এদিকে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে গা ঢাকা দিয়েছেন ডা. মুরাদ। প্রভাবশালী নেতারা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে পারলেও ডা. মুরাদ ব্যর্থ হয়েছেন বলে দলীয় একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।

আরএইচ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।