অবৈধ নিয়োগে ৭ বছরে ইসলামী ব্যাংকের ক্ষতি ১০ হাজার কোটি টাকা

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১০:৪৪ এএম, ০৪ অক্টোবর ২০২৫

ইসলামী ব্যাংকের মালিকানা দখলে রাখার পর এস আলম গ্রুপের কুশলতায় ব্যাংকটির সেবার মান ও নিরাপত্তা হুমকির মুখে ফেলেছে। গত কয়েক বছরে কোনো বিজ্ঞপ্তি বা পরীক্ষা ছাড়া অনিয়ম করে নিয়োগ করা হয়েছে এমন চিহ্নিত ব্যক্তির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮ হাজার ৩৪০ জন। তাদের মধ্যে অনেকেরই ভুয়া সার্টিফিকেট। এ রকম অনেকে চাকরিচ্যুত হয়েছেন, অন্যান্য ভুয়া সনদধারীদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা চলমান। ব্যাংকটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, শুধু অবৈধ ও অনিয়মের মাধ্যমে গত ৭ বছরে ক্ষতির পরিমাণ ১০ হাজার কোটি টাকার বেশি।

ব্যাংকটির একাধিক কর্মকর্তারা জাগো নিউজকে জানান, এস আলম সম্পর্কিত লুটপাটের তথ্য প্রকাশের পর থেকেই ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা বেড়েছে। গত কয়েক বছর ধরে চট্টগ্রামের পটিয়া এলাকায় কিছু লোকশ্রেণি ঠিকাদারি বা নিত্যকর্মের যোগ্যতাসম্পন্ন নয়—তবু মোটা অঙ্কের বিনিময়ে তাদের ব্যাংকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

এসব নিয়োগে কয়েকশ কোটি টাকার অনিয়ম ঘটেছে বলেও দাবি করা হয়। ব্যাংকের পদ্ধতিগত যোগ্যতা যাচাই দ্রুত কার্যকর করার লক্ষ্যে সম্প্রতি একটি বিশেষ দক্ষতা পরীক্ষা নেওয়া হলে তা বয়কট করে সাবেক কর্মকর্তা-চাকরিচ্যুতরা। তাদের ছেলেমেয়ের আন্দোলন ও বিপথগামী নানা রকম অপপ্রচারের মধ্য দিয়ে চলেছে—এদের হাতেই শুক্রবার ভোরে ব্যাংকের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ হ্যাক করা হয়। হ্যাকাররা পেজের প্রোফাইল ও কভার ছবি পরিবর্তন করে হুমকিপূর্ণ বার্তা প্রকাশ করে বলে জানানো হয়েছে।

ব্যাংক সূত্রে বলা হয়, বিদ্রোহী ও অবৈধভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের জন্য ভল্ট ও ক্যাশ কাউন্টারের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হচ্ছে। একই সঙ্গে তাদের আচরণ ও অতিরিক্ত অধিকার দাবির কারণে ভাড়া করা নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েও শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

ব্যাংক কর্মকর্তারা ইঙ্গিত দেন যে, কিছু বিদ্রোহী কর্মী সন্ত্রাসী কার্যক্রমের জন্য উসকানি দিচ্ছে এবং প্রয়োজনে ক্যাশ কাউন্টার বা ভল্ট আক্রমণের প্রয়াস চালাতে পারে।

একই সময় আর্থিক ক্ষতির পরিসংখ্যানে বলা হচ্ছে—এস আলমের দ্বারা ব্যাংক থেকে নামে-বেনামে প্রায় ১ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা তোলা হয়েছে এবং অবৈধ নিয়োগ ও অনিয়মের কারণে গত ৭ বছরে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকারও বেশি ক্ষতি হয়েছে। বিচার ও পুনরুদ্ধারের চেষ্টা চলমান আছে।

অন্যদিকে এস আলমের নিয়োগ করা কর্মকর্তাদের কর্মকাণ্ড ব্যাংকের সেবা মানকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে; গ্রাহকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার, আঞ্চলিক ভাষায় কর্মকাণ্ড এবং তদনুযায়ী সেবা দানে অবহেলা গ্রাহক অসন্তোষ বাড়িয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

চাকরিচ্যুত এক কর্মকর্তা বলেন, আমি কুড়িগ্রামের রকমারি শাখায় কর্মরত ছিলাম। কোনো কারণ ছাড়াই চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। এখনো অনেকেই ব্যাংকে রয়েছেন। কিন্তু চাকরিচ্যুতদের কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার দায় আমরা গ্রহণ করবো না।

এ বিষয়ে বিশ্লেষকদের বলেন, এস আলম একা ব্যাংক খাত নয়, পুরো সিস্টেমকে দুর্বল করে দিয়েছে। ইসলামি ব্যংক পুনরায় স্বচ্ছ ও শক্ত অবস্থানে ফিরতে হলে ব্যাপক সংস্কার ও ব্যয় নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ নিতে হবে।

সম্প্রতি অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশ (এবিবি)-র চেয়ারম্যান ও সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসরুর আরেফিন এক অনুষ্ঠানে জানান, এস আলম একাই পুরো ব্যাংকখাতের জন্য সমস্যা সৃষ্টি করেছে। ইসলামী ব্যাংককে ঘুরে দাঁড়াতে হলে উন্নত ব্যবস্থাপনা ও ব্যয়হ্রাস নিশ্চিত করতে হবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ব্যাংকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জাগো নিউজকে বলেন, বিদ্রোহী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিদ্রোহী মনোভাব ও ব্যাংকের অনির্দিষ্ট আমানত আচরণের ফলে ভল্ট বা ক্যাশ কাউন্টার নিরাপদ নয়। এসব বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত না নিলে ঝুঁকি বাড়বে।

এদিকে সমাজে ক্ষোভও দেখা দিয়েছে। এক গ্রাহক আমিনুল ইসলাম তার ফেসবুক পোস্টে লিখেন, পটিয়ার অবৈধ নিয়োগরাই চাকরি রক্ষার আন্দোলন করছেন। কিন্তু যে ডাকাত সর্দার এস আলম ব্যাংক থেকে কোটি কোটি টাকা পাচার করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে কেন আন্দোলন হয় না?

ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বলছে, ফেসবুক পেজ হ্যাক এবং নিরাপত্তা হত্যা-হুমকির বিষয়গুলোর তদন্ত চলছে এবং গ্রাহক সুরক্ষা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগুলো নেওয়া হবে।

ইএআর/এমআইএইচএস/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।