কমমূল্যে অর্ডার নিচ্ছেন গার্মেন্টস মালিকরা
অস্থিরতার সুযোগ নিয়ে বিদেশী বায়াররা তৈরি পোশাক খাতে অর্ডার বাতিলের পাশাপাশি ন্যায্য মূল্য থেকে উদ্যোক্তাদের বঞ্চিত করছেন। উদ্যোক্তারা জানান, টিকে থাকতে তুলনামূলক কম মূল্যেই অর্ডার নিতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। ব্যাপক হারে অর্ডার কমে গেছে, বায়াররা বাংলাদেশ সফরের বিষয়ে সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। ফলে গড়ে ৬ শতাংশ পর্যন্ত মূল্যছাড় দিতে বাধ্য হচ্ছেন মালিকরা। এজন্য ইউরো জোনের একক মুদ্রা ইউরোর দরপতন ও চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতারকে দায়ী করছেন তারা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যে কোনো অস্থিরতারই সুযোগ নিয়ে থাকে বিদেশী বায়াররা। অনেক প্রতিবন্ধকতায় বড় বড় কিছু গার্মেন্ট সামাল দিতে পারলেও ছোটদের অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। এজন্য কমপক্ষে কারখানা চালু রাখতে গিয়ে ন্যায্য মূল্যের চেয়ে কম দামেই পণ্য সরবরাহে রাজি হতে হয়।
তৈরি পোশাক খাতের দুই সংগঠন বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ সূত্রে জানা গেছে, বিদেশী বায়াররা রফতানি আদেশ আগের দামের চেয়ে কম দিচ্ছেন। মালিকরা গড়ে ৬ শতাংশের বেশি মূল্যছাড় দিতে বাধ্য হচ্ছেন। অর্ডার কমে যাওয়ায় মালিকরা সামর্থ্য অনুসারে মূল্যছাড় দিচ্ছেন। এতে ছোট ছোট মালিকদের অবস্থা দিন দিন আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে।
সূত্র জানায়, তৈরি পোশাক খাতে প্রায় ২০ কোটি ডলার মূল্যছাড় দিতে হয়েছে- যা অর্থের পরিমাণে দাঁড়ায় ১৬শ’ কোটি টাকা। মূল্য ছাড়ের বিষয়টি স্বীকার করে বিকেএমইএ’র প্রথম সহ-সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম যুগান্তরকে বলেন, বিদেশী বায়াররা মূলত রাজনৈতিক অস্থিরতার সুযোগ নিচ্ছেন। এছাড়া ইউরোর দরপতনকেও ওসিলা হিসেবে দেখাচ্ছেন। তিনি বলেন, যে পরিমাণ অর্ডার আসার কথা ছিল তার ৪০ শতাংশ একেবারেই হারিয়েছে বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা। যেসব অর্ডার পেয়েছে তাতে আবার ছাড় দিতে হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, নিরাপদ কর্ম পরিবেশ (কমপ্লায়েন্স) নিশ্চিত করতে এ খাতে হাজার হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ হয়েছে। বেড়েছে শ্রমিকদের বেতন ও মজুরি। এ অবস্থায় বায়ারদের উচিত ছিল পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়ে সহযোগিতা করা। কিন্তু তারা তা দেয়নি। বরং আগে যে মূল্যে পণ্য রফতানি করতাম, এখন তার চেয়ে কম মূল্য পাচ্ছি।
বিজিএমইএ সূত্র জানায়, ইউরোপীয় ইউনিয়নের ক্রেতাদের কাছে আগে যে জিন্স প্যান্ট ১৮ ডলার বিক্রি হতো- এখন তার দাম ১২ ডলারের বেশি পাওয়া যাচ্ছে না। এছাড়া ১০ ডলার মূল্যের পোলো টি-শার্টের অর্ডার নিতে হচ্ছে মাত্র সাড়ে চার ডলার দামে। তাতে উৎপাদন খরচ তোলাই কঠিন হয়ে পড়বে। এতে কেবল শ্রমিকদের বেতন কষ্ট করে দেয়া সম্ভব। ব্যবসা ধরে রাখতেই এত ঝুঁকি নেয়া বলে জানান তারা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রফতানিকারকদের সংগঠন ইএবি সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী যুগান্তরকে বলেন, এটা সব সময় বায়াররা করে থাকে। প্রতিযোগিতামূলক বাজারে টিকে থাকতে আমরা কম মূল্যেই অর্ডার নিয়ে থাকি। না হলে বায়াররা অন্যত্র চলে যাওয়ার হুমকি দেয়। তিনি বলেন, এমনিতেই অর্ডার কমে গেছে। এই অবস্থায় গার্মেন্ট বন্ধ হয়ে যাওয়ার হাত থেকে বাঁচতে চাইলে যেভাবেই হোক অর্ডার ধরে রাখতে হবে। তবে মূল্য ছাড়ের বিষয়টি উদ্যোক্তারা নিজেদের সাধ্য মতো দিচ্ছে বলে তিনি জানান।
উল্লেখ্য, চলতি অর্থবছরে পোশাক শিল্প রফতানির ২৭ বিলিয়ন ডলার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তা অর্জন করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়বে। জানুয়ারি মাসের ৫ তারিখ সমাবেশ করার অনুমতি না পাওয়ায় অনির্দিষ্টকালের অবরোধের ডাক দেয় ২০ দলীয় জোট- যা এখনও চলছে। বিজিএমইএ প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে তৈরি পোশাক খাতে এ পর্যন্ত ক্ষতির পরিমাণ ৩০ হাজার কোটি টাকা। এ অবস্থায় ক্ষতিপূরণ ও বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে ইতিমধ্যে অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন রফতানিকারকরা। সূত্র : যুগান্তর
এসএইচএ/এআরএস/এমএস