আলফার সিইও’র যোগ্যতার প্রমাণ চায় আইডিআরএ


প্রকাশিত: ০৩:০৪ পিএম, ২৫ এপ্রিল ২০১৭

আলফা ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের প্রস্তাবিত মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. আপেল মাহমুদের যোগ্যতার প্রমাণ চেয়েছে বীমা খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডআরএ)। সম্প্রতি আইডিআরএ থেকে আলফা ইসলামী লাইফে এ সংক্রান্ত চিঠি পাঠানো হয়েছে।

চিঠিতে আপেল মাহমুদ কোন কোন কোম্পানিতে কাজ করেছেন তার প্রমাণ হিসেবে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির প্যাডে অভিজ্ঞতার বর্ণনা চাওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে বীমা কোম্পানিতে মুখ্য নির্বাহীর অব্যবহিত পরের পদে তিন বছর দায়িত্ব পালনের প্রমাণও পাঠাতে বলা হয়েছে।

এর আগে গত ১৩ এপ্রিল ‘অযোগ্য’ ব্যক্তিকে সিইও হিসেবে চায় আলফা লাইফ’ শিরোনামে জাগো নিউজে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। জাগো নিউজের ওই প্রতিবেদন এবং আলফা ইসলামী লাইফের মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পক্ষে করা অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আপেল মাহমুদের যোগ্যতার প্রমাণ চাওয়া হয়েছে বলে আইডিআরএ’র একটি সূত্র জানিয়েছে।

আইডিআরএ’র চেয়ারম্যান পদে চলতি দায়িত্বে থাকা গকুল চাঁদ দাস জাগো নিউজকে বলেন, আলফা ইসলামী লাইফের প্রস্তাবিত মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা আপেল মাহমুদের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। আপনাদের (জাগো নিউজ) নিউজও আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে।

তিনি বলেন, আপেল মাহমুদের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তার অব্যবহিত পরের পদে তিন বছর দায়িত্ব পালনের প্রমাণপত্রসহ তিনি কোন কোন কোম্পানিতে চাকরি করেছেন তার তথ্য চাওয়া হয়েছে। আলফা লাইফ থেকে জবাব আসার পর এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা পদে নিয়োগ পেতে হলে অবশ্যই আইনের সব শর্ত পূরণ করতে হবে। আইনের শর্ত পূরণ না করলে কাউকে সিইও হিসেবে অনুমোদন দেয়া হবে না।

আপেল মাহমুদের সঙ্গে এ বিষয়ে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জাগো নিউজকে বলেন, আইডিআরএ’র চিঠি আমি এখনও হাতে পাইনি। চিঠি হাতে পেলে তারপর কী জবাব দেব সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব।

প্রয়োজনীয় যোগ্যতা না থাকা সংক্রান্ত অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, আমি মোবাইলে এ বিষয়ে কোনো কিছু বলব না।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানা গেছে, আপেল মাহমুদ আলফা ইসলামী লাইফে অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে নিয়োগ পান ২০১৫ সালের জুলাইয়ে। ওই বছরের অক্টোবর থেকে তিনি কোম্পানিটির ভারপ্রাপ্ত মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

এর আগে তিনি ফারইস্ট ইসলামী লাইফে ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও হেড অব সার্ভিসিং পদে কর্মরত ছিলেন। আপেল মাহমুদ ফারইস্ট ইসলামী লাইফে চাকরি শুরু করেন ২০০৯ সালে সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে। এরপর ২০১৩ সালে তিনি ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর পদে পদোন্নতি পান। এর আগে তিনি হোমল্যান্ড লাইফে সহকারি ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে চাকরি করেন।

অর্থাৎ বীমা কোম্পানিতে মুখ্য নির্বাহীর কর্মকর্তার অব্যবহিত পরের পদে আপেল মাহমুদ দায়িত্ব পালন করেছেন দুই বছরেরও কম সময়। অথচ বীমা কোম্পানির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগ ও অপসারণ সংক্রান্ত প্রবিধানমালা ২০১২ অনুসারে সিইও হিসেবে নিয়োগ পেতে মুখ্য নির্বাহীর পরের পদে কমপক্ষে তিন বছর দায়িত্ব পালন করতে হবে।

এদিকে, ২০১৪ সালের ৯ সেপ্টেম্বর থেকে আলফা ইসলামী লাইফে নিয়মিত কোনো মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা নেই। এ সময়ে মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগে কোনো ব্যবস্থাও নেয়া হয়নি।

অথচ বীমা আইনের ৮০ (৪) ধারায় বলা হয়েছে, বীমা কোম্পানির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তার পদ তিন মাসের বেশি শূন্য রাখা যাবে না। তবে অপরিহার্য পরিস্থিতি বিবেচনা করে আইডিআরএ এ সময় আরও তিন মাস বাড়াতে পারে।

আইনের এ বিধানকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে প্রায় আড়াই বছর ধরে সিইও পদটি খালি রেখেছে আলফা ইসলামী লাইফ। তবে আইন লঙ্ঘন করলেও এতদিন প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপই গ্রহণ করেনি নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ।

আইডিআরএতে আলফা লাইফের মাঠপর্যায়ের কার্মকর্তা-কর্মচারীদের পক্ষ থেকে চেয়ারম্যান বরাবর করা এক অভিযোগে বলা হয়, প্রয়োজনীয় যোগ্যতা না থাকলেও আইডিআরএ’র একজন সিনিয়র কনসালটেন্ট আর্থিক সুবিধা পাওয়ার জন্য আপেল মাহমুদকে মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা পদে নিয়োগ দিতে চেষ্টা চালাচ্ছেন।

আলফা ইসলামী লাইফে দায়িত্বপালনকালে আপেল মাহমুদের বিরুদ্ধে নিয়োগ বাণিজ্য, অবৈধ কমিশন, আইডিআরএ’র নির্দেশনা অমান্য করে অনৈতিকভাবে প্রিমিয়াম সংগ্রহের অভিযোগ রয়েছে। ফারইস্ট ইসলামী লাইফে চাকরিকালেও তার বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে।

অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, সম্প্রতি আইডিআরএ’র কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা নানাভাবে সুবিধা নিয়ে ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে অযোগ্য ব্যক্তিদের বীমা কোম্পানির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তার মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে অবৈধভাবে নিয়োগ প্রদান করছে। এ ধরনের কার্মকাণ্ড বীমা খাতের উন্নয়নে অন্যতম বাধা হয়ে দাঁড়াবে।

এমএএস/জেএইচ/এমএআর/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।