অর্থনীতি সমিতির ১৭ লাখ ৩৮ হাজার কোটি টাকার বিকল্প বাজেট
আগামী ২০২১-২০২২ অর্থবছরের জন্য ১৭ লাখ ৩৮ হাজার ৭১৬ কোটি টাকার বিকল্প বাজেট প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি। বিশাল আকারের এ বাজেটে ঘাটতি ধরা হয়েছে ১ লাখ ৩৫ হাজার কোটি টাকা।
মঙ্গলবার (১ জুন) এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এ বিকল্প বাজেট প্রস্তাব তুলে ধরেন সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত।
‘কোভিড-১৯ ও আর্থ-সামাজিক মন্দা থেকে উত্তরণে বিকল্প বাজেট : ২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির প্রস্তাবনা’ শিরোনামে এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
সমিতির সভাপতি আবুল বারকাত বলেন, ‘আমরা মনে করি বাজেট হবে সম্প্রসারণমূলক। আমরা ১৭ লাখ ৩৮ হাজার ৭১৬ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব করেছি, যা বর্তমান সরকারের যে বাজেট চলছে তার তুলনায় ৩ দশমিক শূন্য ৬ গুণ বেশি।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের এ বিকল্প বাজেটের রাজস্ব আয় ধরা হয়েছে ১৬ লাখ ৩ হাজার ৭১৬ কোটি টাকা। অর্থাৎ মোট বাজেটের ৯২ দশমিক ২০ শতাংশ যোগান দেবে রাজস্ব খাত। এর মধ্যে ৭৯ শতাংশ হবে প্রত্যক্ষ কর। বাকি ২১ শতাংশ হবে পরোক্ষ কর।’
বাজেটের ঘাটতি ১ লাখ ৩৫ হাজার কোটি টাকা ধরা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এই ঘাটতি মেটাতে আমরা ব্যাংক ঋণ নেব না। সেই সঙ্গে কোনো বৈদেশিক ঋণ নেব না। কারণ ব্যাংকের ঋণ সরকারের জন্য না। ঘাটতি পূরণ হবে বন্ড বাজার, সঞ্চয়পত্র ও সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বে।’
এর মধ্যে বন্ড বাজার থেকে ৭০ হাজার কোটি টাকা আনা সম্ভব। যা ঘাটতির ৫১ দশমিক ৯০ শতাংশ পূরণ করতে পারে। সঞ্চয়পত্র বিক্রি থেকে ৪০ হাজার কোটি টাকা আসতে পারে। আর সরকারি-বেসরকারি অংশিদারিত্ব থেকে ২৫ হাজার কোটি টাকা আসতে পারে বলে মনে করেন বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সভাপতি।
বিকল্প বাজেট উপস্থাপনের সময় আবুল বারকাত বলেন, ‘কোভিড-১৯ বাংলাদেশকে উচ্চ আয় বৈষম্যের দেশ এবং বিপজ্জনক আয় বৈষম্যের দেশে রূপান্তর করে ছেড়েছে।’
এ সময় তিনি বলেন, ‘১৯৭২-৭৩ অর্থবছর থেকে ২০১৮-১৯ অর্থবছর পর্যন্ত মোট পুঞ্জিভূত কালো টাকার পরিমাণ হবে আনুমানিক ৮৮ লাখ ৬১ হাজার ৪৩৭ কোটি টাকা। একই সময়ে পাচার করা টাকার পরিমাণ হবে ৭ লাখ ৯৮ হাজার ৩২৭ কোটি টাকা। এখান থেকে সম্পদ কর ৫০ লাখ কোটি টাকা আহরণ সম্ভব। আর এক বছরে বিকল্প বাজেটের জন্য কমপক্ষে ১ লাখ কোটি টাকা আহরণ সম্ভব।’
আবুল বারকাত তার বিকল্প বাজেটে ধনীদের ওপর অধিক কর আরোপের প্রস্তাব করেন। এ ক্ষেত্রে তিনি ছয়টি প্রস্তাব দেন।
এর মধ্যে রয়েছে- ধনী-বিত্তশালীদের ওপর সম্পদ কর আরোপ করা, সুপার-ডুপার ধনীদের ক্ষেত্রে কর হার বাড়ানো, শেয়ারবাজার ও বন্ডবাজারে বড় বিনিয়োগের ওপর সম্পদ কর আরোপ করা, অতিরিক্ত মুনাফার ওপর কর আরও করা, কালো টাকা বাজেয়াপ্ত ও উদ্ধার করা এবং পাচার করা অর্থ উদ্ধার করা।
অর্থনীতি সমিতির বিকল্প বাজেটে শিক্ষাখাতে বরাদ্দ জিডিপির কমপক্ষে ৫ শতাংশ রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। সেই সঙ্গে করোনা প্রতিরোধ ও ব্যবস্থাপনা বিচার বিশ্লেষণ করে স্বাস্থ্যখাতে ‘জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা’ নামে নতুন একটি বিভাগ প্রতিষ্ঠার জন্য ৫০ হাজার কোটি টাকার বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে।
এমএএস/জেডএইচ/এমকেএইচ