করোনার নতুন ধরনের প্রভাব শেয়ারবাজারে?
করোনার নতুন ধরন ওমিক্রন নিয়ে শেয়ারবাজারের কিছু বিনিয়োগকারীর মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। এতে কিছু বিনিয়োগকারী শেয়ার বিক্রির চাপ বাড়িয়েছেন। ফলে সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস রোববার লেনদেনের শুরুতে শেয়ারবাজারে মূল্য সূচকের বড় পতন দেখা যাচ্ছে।
প্রথম আধঘণ্টাপ্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেনে অংশ নেওয়া বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমেছে। সেই সঙ্গে লেনদেনেও ধীরগতি দেখা যাচ্ছে।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের পাশাপাশি অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) প্রথম ঘণ্টার লেনদেনে সূচকের নিম্নমুখী প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। সেই সঙ্গে দাম কমার তালিকায় নাম লিখিয়েছে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান।
এদিন শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হওয়ার আগেই বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউজে করোনার নতুন ধরন নিয়ে আলোচনা করতে দেখা যায়। আর লেনদেন শুরু হতেই বিনিয়োগকারীদের একটি অংশ শেয়ার বিক্রির চাপ বাড়ান। ফলে লেনদেন শুরু হতেই সূচক ঋণাত্মক হয়ে পড়ে।
তবে শেয়ারবাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, শেয়ারবাজারে এই দরপতনের পেছনে করোনার নতুন ধরনের তেমন প্রভাব নেই। মূলত বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের মধ্যে দেখা দেওয়া মতবিরোধের কারণে শেয়ারবাজারে দরপতন হচ্ছে।
এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত সূচকের নিম্নমুখী ধারা অব্যাহত রয়েছে। বেলা ১১টা ৪৬ মিনিটে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের তুলনায় ৪৫ পয়েন্টে কমেছে। অপর দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই-৩০ সূচক কমেছে ২২ পয়েন্ট। আর ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক ১০ পয়েন্ট কমেছে।
এ সময় পর্যন্ত ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ১০২টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ২১৪টির। আর ৪৭টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ৩১৫ কোটি ২৩ লাখ টাকা।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ১০৩ পয়েন্ট কমেছে। লেনদেন হয়েছে ৯ কোটি ২০ লাখ টাকা। লেনদেন অংশ নেওয়া ১৬৩ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দাম বেড়েছে ৪৮টির, কমেছে ৯৬টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ১৯টির।
শেয়ারবাজারের এই পরিস্থিতি সম্পর্কে ডিএসইর এক সদস্য বলেন, করোনার নতুন ধরন নিয়ে সবার মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। অনেক দেশ ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। এর একটি নেতিবাচক প্রভাব শেয়ারবাজারে পড়েছে।
তিনি বলেন, শেয়ারবাজার অত্যান্ত সংবেদনশীল। যে কোনো নেতিবাচক বিষয় শেয়ারবাজারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। তবে সার্বিকভাবে বর্তমান শেয়ারবাজার বিনিয়োগবান্ধব। তাই বিনিয়োগকারীদের উচিত আতঙ্কে বিক্রির চাপ না বাড়িয়ে তথ্য যাচাই-বাছাই করে ভালো শেয়ারের বিনিয়োগ করা।
ডিএসইর সাবেক পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন জাগো নিউজকে বলেন, আমি মনে করি করোনার নতুন ধরনের কোনো প্রভাব বাজারে পড়েনি। কয়েকদিন ধরে যে দরপতন হচ্ছে তার মূল কারণ বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিএসইসির মধ্যকার সমন্বয়হীনতা। এটা বিনিয়োগকারীদের উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। তবে আমরা আশা করছি আগামী মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিএসইসির মধ্যে যে বৈঠক হবে, সেখান থেকে ভালো ফলাফল আসবে। যা বিনিয়োগকারীদের উদ্বেগ কমাবে।
ইব্রাহিম হোসেন নামের এক বিনিয়োগকারী বলেন, দেশে প্রথম যখন করোনার প্রকোপ শুরু হয়, সেসময় বড় দরপতন হয়েছিল। এবার কী হবে বলা যাচ্ছে না। তবে করোনার নতুন ধরন নিয়ে বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে বলে খবর বের হচ্ছে। যেহেতু লাভ আছে তাই কিছু শেয়ার বিক্রি করে মুনাফা তুলে নিয়েছি।
এদিকে ইসরাইলসহ পাঁচ দেশ ও অঞ্চলে শনাক্ত হয়েছে করোনাভাইরাসের রূপান্তরিত নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন। ইউরোপে সর্বপ্রথম করোনার এই ধরন শনাক্ত হয়েছে বেলজিয়ামে। পাশাপাশি আফ্রিকার দেশ বোতসোয়ানা এবং এশিয়ার দুই দেশ ইসরাইল ও হংকংয়েও সন্ধান মিলেছে করোনার এই ধরনের।
ইতোমধ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, করোনাভাইরাসের নতুন এই ধরনটি মূল ভাইরাস ও তার অন্য রূপান্তরিত ধরনগুলোর চেয়ে অনেক দ্রুতগতিতে ছড়িয়ে পড়তে বা মানুষকে আক্রান্ত করতে সক্ষম।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, প্রাথমিক যেসব তথ্য পাওয়া গেছে সেসব পর্যালোচনা করে বোঝা যাচ্ছে করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর সুস্থ হয়ে ওঠা ব্যক্তিরাও ওমিক্রনে আক্রান্ত হতে পারেন।
আফ্রিকার নতুন ধরনটি সম্পর্কে স্বাস্থ্য বিভাগ সতর্ক আছে বলে উল্লেখ করেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। শনিবার সুইজারল্যান্ডে যাত্রার আগে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বার্তায় তিনি বলেন, এই ভাইরাসটি খুবই আগ্রাসী। সে কারণে আফ্রিকার সঙ্গে যোগাযোগ এখন স্থগিত করা হচ্ছে। সব বিমানবন্দর, স্থলবন্দর বা দেশের সব প্রবেশপথে স্ক্রিনিং আরও জোরদার করার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এমএএস/ইএ/এমএস