মিথ্যা তথ্যে রপ্তানি, চট্টগ্রামে ৩ কোটি টাকার তৈরি পোশাক জব্দ

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক চট্টগ্রাম
প্রকাশিত: ০৭:৩০ পিএম, ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

# মিথ্যা ঘোষণা ও ভুয়া ব্যাংক নথিতে রপ্তানিচেষ্টা
# মুদ্রা পাচারের অভিযোগ, ৮ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন

মিথ্যা ঘোষণা ও ভুয়া ব্যাংক নথি ব্যবহার করে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে রপ্তানির সময় তিন কোটি টাকার বেশি মূল্যের তৈরি পোশাক জব্দ করেছে কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর। গত ৩১ জানুয়ারি চট্টগ্রাম মহানগরীর উত্তর পতেঙ্গা এসএপিএ (ওসিএল) ডিপো থেকে তৈরি পোশাকের এ চালান জব্দ করা হয়।

বৃহস্পতিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়।

ঢাকার দক্ষিণখানের আশকোনা মোল্লার টেক এলাকার সাবিহা সাকি ফ্যাশন নামের পোশাক প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান এসব পণ্য রপ্তানির জন্য পাঠায়। ভুয়া এলসি এবং মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে পণ্য রপ্তানির আড়ালে মানি লন্ডারিং করা হচ্ছিল বলে জানান শুল্ক গোয়েন্দারা। এ বিষয়ে তদন্তের জন্য শুল্ক গোয়েন্দা চট্টগ্রাম আঞ্চলিক কার্যালয়ের যুগ্ম পরিচালক মো. সাইফুর রহমানকে আহ্বায়ক করে ৮ সদস্যের কমিটি গঠন করেছে অধিদপ্তর।

কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর ঢাকার উপ-পরিচালক মো. শাকিল খন্দকার সই করা বিবৃতি থেকে জানা গেছে, সাবিহা সাকি ফ্যাশন দীর্ঘদিন ধরে রপ্তানি দলিল জালিয়াতি করে পণ্য রপ্তানি করে আসছে। এমন গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গত ৩১ জানুয়ারি চট্টগ্রাম মহানগরীর উত্তর পতেঙ্গা এলাকার এসএপিএ (ওসিএল) ডিপোতে অভিযান চালান শুল্ক গোয়েন্দারা। ওই অভিযানে ১৫টি বিল অব এক্সপোর্ট (বিই) পর্যালোচনা করে রপ্তানি জালিয়াতির প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া যায়। এ সময় ওই ১৫টি বিল অব এক্সপোর্টের পণ্য রপ্তানি কার্যক্রম সাময়িক স্থগিত করে দেয় শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর। পরে এসব বিল অব এক্সপোর্টে উল্লেখিত সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে (অগ্রণী ব্যাংকের প্রধান শাখায়) যোগাযোগ করলে ব্যাংক থেকে জানানো হয় বিল অব এক্সপোর্ট ও ব্যাংক নথিগুলো সাবিহা সাকি ফ্যাশনের নামে ইস্যু করা নয়। ব্যাংকটির অন্য গ্রাহকের নামে এগুলো ইস্যু করা।

‘তাছাড়া এসএপিএল ডিপোতে জব্দ পণ্য চালানের কায়িক পরীক্ষার সময় প্রতিষ্ঠানটির সিএন্ডএফ এজেন্ট লিম্যাক্স শিপার্স লিমিটেডের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও তারা কোনো সহযোগিতা করেনি বলে জানান শুল্ক গোয়েন্দারা। পরে ১৫টি বিল অব এক্সপোর্ট পর্যালোচনা করে শুল্ক গোয়েন্দারা জানতে পারেন এসব চালানের মধ্যে ৬টি এর আগেই রপ্তানি হয়ে গেছে। বাকি ৯ চালানের পণ্য ডিপোতে পাওয়া যায়। রপ্তানিকারক টি-শার্ট এবং লেডিস ড্রেস রপ্তানির ঘোষণা দিলেও জব্দ চালানে বেবি ড্রেস, জিন্স প্যান্ট, শার্ট, লেগিন্স, শালসহ ঘোষণা বহির্ভূত অসংখ্য পণ্য পাওয়া যায়।’

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, গত ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত এই রপ্তানিকারকের ৯৪টি পণ্য চালানোর হদিস পান শুল্ক গোয়েন্দারা। এর মধ্যে ৮৫টি চালান এরইমধ্যে রপ্তানি হয়ে গেছে। রপ্তানি হওয়া পণ্যের ওজন ৮৮২ মেট্রিক টন। টাকার অংকে ঘোষিত মূল্য ২২ কোটি। অন্যদিকে জব্দ ৯ চালানে ১১৮ টন পণ্য রয়েছে। এসবের ঘোষিত মূল্য ৩ কোটি টাকার কিছু বেশি। মালয়েশিয়া, সুদান, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ত্রিনিদাদ ও টোবাগোতে পণ্যগুলো রপ্তানি করা হচ্ছিল।

এ বিষয়ে কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর চট্টগ্রামের অতিরিক্ত মহাপরিচালক বশির আহম্মেদ জাগো নিউজকে বলেন, রপ্তানি দলিল জালিয়াতি করে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে তৈরি পোশাক রপ্তানি করা হচ্ছিল। ঢাকার দক্ষিণখান এলাকার সাবিহা সাকি ফ্যাশন এসব পোশাক রপ্তানি করছিল। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে উত্তর পতেঙ্গা এসএপিএল ডিপোতে অভিযান চালিয়ে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়। এসময় ৯ চালানোর ৭ কনটেইনার পণ্য জব্দ করা হয়। এসব কনটেইনার খুলে কায়িক পরীক্ষায় মিথ্যা ঘোষণার প্রমাণ মেলে। যেহেতু অন্য প্রতিষ্ঠানের নামে ব্যাংক ডকুমেন্ট ব্যবহার করে তারা পণ্য রপ্তানি করছিল, সেহেতু এসব রপ্তানির বিপরীতে বৈদেশিক মুদ্রা বৈধ উপায়ে দেশে আসছে না। এতে মানি লন্ডারিং হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে প্রমাণ পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।

ইকবাল হোসেন/কেএসআর/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।