ক্রেতা খরা গুলশানের অভিজাত ইফতার বাজারে

ক্রেতা খরা যাচ্ছে সারাদেশের ইফতারের বাজারগুলোতে। ব্যতিক্রম নয় গুলশানের অভিজাত ইফতার বাজারও। প্রতিবারের মতো হরেক রকমের ইফতার সাজিয়ে বিকেল থেকে অপেক্ষায় থাকলেও আশানুরূপ ক্রেতার দেখা পায় না এ এলাকার ইফতার ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, গত বছরের তুলনায় বিক্রি এক-তৃতীয়াংশ কমেছে।
বুধবার (২৯ মার্চ) দুপুরে সরেজমিনে গুলশানের বেশ কিছু রেস্তোরাঁ মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে এমনটা। বিকেল নাগাদ ওই এলাকায় অবস্থান করেও দেখা গেছে একই চিত্র।
গুলশানে ইফতারি নানা আইটেমে কিনতে ভিড় থাকে ফখরুদ্দিনে। পুরান ঢাকার নানা ঐতিহ্যের ইফতারি আইটেম রাখা আছে সেখানে। মূলত ক্রেতাদের আকর্ষণের জায়গা সেখানেই। দুপুরের পর থেকেই এ দোকানটিতে আসেন অনেকেই। তবে বুধবার অন্যান্য বছরের মতো ভিড় ছিল না সেখানে।
কথা হয় রেস্টুরেন্টটির ম্যানেজার রেজাউল করিম সঙ্গে। তিনি বলেন, বিক্রি কিছুটা কম এ বছর। মানুষের হাতে টাকা নেই। আবার পণ্যের দাম বেড়েছে। ফলে যিনি বেশি কিনতেন, তিনি কমিয়ে নিচ্ছেন।
জানতে চাইলে রেজাউল করিম বলেন, ফখরুদ্দিনের গরুর চাপ ও রেজালা গত বছর প্রতি কেজি ১২০০ টাকা বিক্রি হয়েছে। এ বছর সেটা ১৪০০ টাকা। খাসির আইটেমের দাম প্রতি কেজি ১০০ টাকা বেড়েছে।
তিনি বলেন, বাজারে মাংসের দাম বাড়ায় আমাদের খরচ এর চেয়েও বেশি হারে বেড়েছে। কিন্তু মানুষের ক্রয় ক্ষমতার কথা চিন্তা করে সে তুলনায় দাম কমই বাড়ানো হয়েছে। তারপরও বিক্রি অনেক কম। ক্রেতারা অসন্তোষের কথা বলছে।
সেখানে মিনহাজ উদ্দিন নামের এক ক্রেতা রেস্তোরাঁটিতে এসেছিলেন অফিস শেষ করে। কিছু না কিনেই ফিরে যেতে দেখা গেল তাকে। তিনি বলেন, এখান থেকে দুই তিন বছর আগে খাসির পুরো লেগ কিনেছি ১০০০ টাকায়, এখন চাচ্ছে ১৬০০ টাকা। দেখি কমের মধ্যে অন্য কোথাও পাই কি না।
ফখরুদ্দিনে ইফতারে পাওয়া যাচ্ছে গরু-খাসির হালিম, গরু-খাসির চাপ, রেজালা, খাসির লেক রোস্ট, কাবাব, চিকেন ফ্রাইসহ নানা আইটেম। রয়েছে কয়েকটি প্যাকেজও। এর মধ্যে দশজন খাওয়া যায় এমন একটি বিরিয়ানীর প্যাকেজ ‘বিরিয়ানীর ডালা’। এর দাম চার হাজার টাকা। আবার নানা ধরনের কাবাব ও ইফতার নিয়ে রয়েছে পাঁচ হাজার টাকার ইফতারের ডালা। আবার খুব সাধারণ মানের ১২০ টাকার মধ্যে ইফতারের প্যাকেজও রয়েছে।
ম্যানেজার রেজাউল করিম বলেন, আমাদের এখানে ঐতিহ্যের কারণে প্রতিদিন ইফতারিতে কাস্টমারদের ভিড় থাকে। আর নানা আয়োজনের এমন সব আইটেম পেয়ে ক্রেতারাও আকৃষ্ট হয়।
দরদাম সম্পর্কে তিনি বলেন, মাঝারি হালিম ৬০০ টাকা ও বড় হালিম ৮০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে এবার।
গরুর চাপ ও রেজালা প্রতি কেজি ১৪০০ টাকা এবং গরুর কালাভুনা ১৫০০ টাকা। খাসির চাপ রেজালা ও কোরমা ১৬০০ টাকা, খাসির লেগ রোস্ট প্রতি পিস ১৬০০ টাকা।
এছাড়া জালী কাবাব, মুঠিয়া কাবাব, টিকিয়া কাবাব, চিকেন রোল, চিকেন ললি, চিকেন ফ্রই, ফিস ফিঙ্গার বিক্রি হচ্ছে প্রতি পিস ৬০ টাকা দরে। পিয়াজু, বেগুনি ও চপের দাম প্রতিপিস ১০ টাকা।
সেখানে ইফতারি কিনতে আসা ক্রেতা সামিনা হক বলেন, পুরান ঢাকায় চকবাজারে যেতে পারি না। এখানে আসি ইফতারি কিনতে। সেই স্বাদ ও মজা পাই। সঙ্গে এখানে গুণগতমান ঠিক পাই।
শুলশানের এক নম্বর চত্তরে কথা হয় অনেক রেস্তরাঁ গুলশান কুইজের কর্ণধার শহিদুল্লার সঙ্গে। তিনি বলেন, এবার ক্রেতা খুব কম। আমরা দুটি ইফতারের সেট মেনু সাজিয়েছি এ বছর, কিন্তু বিক্রি আশানুরুপ নয়।
ইফতারের বিপণী ক্লাসিকের সিনিয়র ম্যানেজার সিয়াম বলেন, গত বছরের তুলনায় এ বছর বিক্রি অনেক কম। আমাদের খরচ বেড়েছে। সেটা সমন্বয় করে পণ্যের দাম বেড়েছে।
তিনি বলেন, মানুষ এতো খরচ অ্যাফোট করতে পারছে না।
একই ধরনের অবস্থার কথা জানায় গুণশানের গ্লোরিয়া জিন্সের সিনিয়র পারসন মাসুম। তিনি জানান, এ অভিজাত রেস্তেরাঁয় ১৪৫ জন বসে ইফতারের ব্যবস্থা রয়েছে। তাদের সেট মেনু ‘ইফতার প্লাটার’ এ ১৫ টি খাবারের আইটেম রয়েছে। কিন্তু শুরু থেকে সেভাবে সাড়াঁ মিলছে না।
পূর্ণিমা রেস্টুরেন্টের কর্মচারী রোকন বলেন, প্রথম রোজা শুধু বেচাকেনা ভালো হয়েছে। এরপর ডাউন। শেষে হয়তো আবার একটু হবে, যখন মানুষ মার্কেটে বেরুবে।
প্রচলিত ইফতার সামগ্রীর সঙ্গে বিশেষ কয়েকটি পদ, বিভিন্ন অফারসহ ইফতার বক্স মিলছে এ এলাকার ইফতার বাজারে। কোথাও কোথাও কিছুটা বেশি দামে মিলছে পুরান ঢাকার শাহী জিলাপি, হালিম, কাচ্চি বিরিয়ানি ইত্যাদি। এছাড়া এ এলাকায় ইফতারে মিলছে নানা রকমের ফাস্টফুড আইটেম। ইফতার মেনুতে রয়েছে চাইনিজের কিছু আইটেমও।
এনএইচ/এমআইএইচএস/এএসএম