বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে সালিশ আইনের সংস্কার চায় ডিসিসিআই

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৫:৪১ পিএম, ০২ এপ্রিল ২০২৩

দেশে বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণে আরবিট্রেশন বা সালিশ আইনের সংস্কার জরুরি বলে অভিমত ব্যক্ত করেছে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই)। ডিসিসিআই মনে করে, একটি কার্যকর বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি (এডিআর) ব্যবস্থাপনা দেশে ব্যবসা সহায়ক পরিবেশ উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। যা বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণেরও অন্যতম পূর্বশর্ত।

রোববার (২ এপ্রিল) ডিসিসিআইতে ‘বাংলাদেশে বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণে আরবিট্রেশন আইনের প্রয়োজনীয় সংস্কার’ শীর্ষক সেমিনারে চেম্বার সভাপতি ব্যারিস্টার মো. সামীর সাত্তার এ কথা জানান। সেমিনারে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক প্রধান অতিথি এবং ঢাকায় নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট চ্যাটারটন ডিকসন বিশেষ অতিথি হিসেবে যোগ দেন।

সেমিনারের স্বাগত বক্তব্যে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি বলেন, দেশে প্রবৃদ্ধির ধারা আরও বেগবান করার পাশাপাশি বাণিজ্য সহায়ক পরিবেশ নিশ্চিত করতে আমাদের একটি কার্যকর আইনি কাঠামো প্রয়োজন। যা বিশেষত ক্রস-বর্ডার বাণিজ্য বিরোধ নিষ্পত্তিতে দ্রুত ও দক্ষ কন্ট্রাক্ট অ্যানফোর্সমেন্ট বাস্তবায়নে সক্ষম। আমাদের বর্তমান আইনি কাঠামোতে এ ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রথম ধাপেই বিদ্যমান বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি আইনের প্রয়োজনীয় সংস্কার একান্ত অপরিহার্য।

তিনি বলেন, গত কয়েক দশকে আমাদের বৈদেশিক বিনিয়োগ যেমন বেড়েছে, তেমনই বাণিজ্য বিরোধের পরিমাণও বেড়েছে। ফলে সাম্প্রতিককালে এ ধরনের বাণিজ্য বিরোধ নিষ্পত্তিতে আরবিট্রেশন একটি অন্যতম নিয়ামক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

ক্রস-বর্ডার সংশ্লিষ্ট বাণিজ্য বিরোধগুলো দ্রুত ও স্বল্প খরচে সমাধানে প্রচলিত আইনি ব্যবস্থার চেয়ে আরবিট্রেশন ব্যবস্থাকেই বিদেশি বিনিয়োগকারীরা অধিক মাত্রায় কার্যকর মনে করেন বলেও জানান ঢাকা চেম্বার সভাপতি।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে দ্রুততম সময়ে আইনি কার্যক্রম সম্পন্ন করে বিচারপ্রাপ্তি নিশ্চিত করা যায়। বর্তমান সরকার দেশে ব্যবসা সহায়ক পরিবেশ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট আইনের প্রয়োজনীয় সংস্কারে বদ্ধপরিকর। বতর্মান প্রেক্ষাপটে আরবিট্রেশন আইন-২০০১ সংস্কারের বিষয়টি বিবেচনা করা যেতে পারে।

ব্যবসায়ীদের আরও বেশি হারে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি বা এডিআর কার্যক্রম ব্যবহারের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, কার্যকর এডিআর ব্যবস্থাপনা বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। মেডিয়েন কনভেনশন সই হবে এবং সিপিসি অ্যাক্ট এরই মধ্যে সংস্কার করা হয়েছে। আরবিট্রেশন প্রক্রিয়া সম্পন্নে নির্দিষ্ট সময়সীমা থাকা প্রয়োজন বলে মত দেন তিনি।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট চ্যাটারটন ডিকসন বলেন, বিগত দুই দশকে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি পরিলক্ষিত হয়েছে। তবে আগামী তিন বছর পর দেশটির এলডিসি থেকে উত্তোরণ পরবর্তীকালে অধিকতর বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের লক্ষ্যে আরবিট্রেশন আইনের প্রয়োজনীয় সংস্কার একান্ত অপরিহার্য।

তিনি বলেন, এটা সত্য যে, বিদেশি বিনিয়োগকারীরা তাদের বিনিয়োগের নিরাপত্তা এবং এডিআরের মাধ্যমে দ্রততম সময়ে বাণিজ্য বিরোধ নিষ্পত্তি করতে চায়। বাংলাদেশের কমার্শিয়াল আইনের সংস্কার খুবই জরুরি। এক্ষেত্রে ভারতের উদাহরণ বিবেচায় নিয়ে দ্রুততম সময়ে প্রয়োজনীয় সংস্কার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা আবশ্যক।

বাংলাদেশের ব্যবসা সহায়ক পরিবেশ উন্নয়নে ‘অ্যানফোর্সমেন্ট অব কনট্রাক’র বাস্তবায়ন অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং বলে মত প্রকাশ করেন ব্রিটিশ হাইকমিশনার।

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার আশরাফুল হাদি বলেন, আরবিট্রাল ট্রাইব্যুনালের উচ্চ আদালতের মতো ক্ষমতা থাকা প্রয়োজন। আরবিট্রেশন অ্যাক্ট ২০০১-এর সংজ্ঞায় ‘কোর্ট’কে ইন্টারন্যাশনাল কমার্শিয়াল আরবিট্রেশনের আদলে হাইকোর্ট হিসেবে বিবেচনার কথা বলা হয়েছে।

ব্যারিস্টার হাদি বলেন, বিদেশি নাগরিক ও বিনিয়োগকারীদের আরবিট্রেশনের জন্য বাংলাদেশ একটি উপযুক্ত স্থান হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। বিদ্যমান বাণিজ্য বিরোধসমূহ দ্রুততম সময়ে নিষ্পত্তির লক্ষ্যে তিনি একটি ‘আন্তর্জাতিক কমার্শিয়াল কোর্ট’ স্থাপনেরও প্রস্তাব করেন।

অনুষ্ঠানের নির্ধারিত আলোচনায় ইউনিলিভার বাংলাদেশ-এর সিইও এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাভেদ আকতার, গ্রামীণফোন লিমিটেডের সিইও ইয়াসির আজমান এবং ভারতের সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী প্রমোদ নায়ার অংশ নেন।

জাভেদ আকতার ডিজিটাল ম্যাকানিজম ব্যবস্থাপনার সমন্বয়ের মাধ্যমে একটি স্মার্ট আরবিট্রেশন প্রক্রিয়া চালুর ওপর জোর দেন। একই সঙ্গে ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের মাঝে আরবিট্রেশন বিষয়ক সচেতনতা বাড়াতেও গুরুতারোপ করেন।

ইয়াসির আজমান বলেন, আরবিট্রেশন অ্যাক্ট-২০০১ একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ। তবে এটির প্রয়োজনীয় সংস্কার জরুরি। তিনি এ আইনের দ্রুত বাস্তবায়নে তথ্য-প্রযুক্তি ও ডিজিটাল ব্যবস্থা প্রয়োগের প্রস্তাব করেন।

প্রমোদ নায়ার বলেন, ভারতে আরবিট্রেশন আইনের প্রয়োজনীয় সংস্কারের মাধ্যমে ব্যবসা পরিচালন সূচকে দেশটির অবস্থানের উন্নতি ছিল চোখে পড়ার মত। বাণিজ্য বিরোধ নিষ্পত্তির লক্ষ্যে ভারতে পৃথকভাবে ‘কমার্শিয়াল কোর্ট’ পরিচালিত হয়। এ ধরনের কার্যক্রম সম্পন্ন করতে সময়সীমা ও ফি সুনির্দিষ্ট করা হয়েছে। এছাড়া সে দেশে এডিআর কার্যক্রম অনলাইনে পরিচালিত হয়ে থাকে। এতে খরচ ও সময় দুটোই বাঁচে।

ইএআর/এমকেআর/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।