২০২৩-২৪ অর্থবছর
দুই লাখ ৬৩ হাজার কোটির উন্নয়ন বাজেট, যোগাযোগ-গ্রাম অগ্রাধিকার
আসন্ন ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বা উন্নয়ন বাজেট ধরা হয়েছে দুই লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকা। উন্নয়ন বাজেটে যোগাযোগ ব্যবস্থা ও গ্রামীণ অবকাঠামোসহ সামাজিক নিরাপত্তা খাত অগ্রাধিকার দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।
বুধবার (৩১ মে) রাজধানীর শেরে বাংলানগরে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে জাগো নিউজের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে এ তথ্য জানান মন্ত্রী।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, বাজেটে সামাজিক নিরাপাত্তাকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হবে। ইউনিভার্সেল পে স্কেলে গুরুত্ব দেওয়া হবে। পাশাপাশি লাগাম টেনে ধরা হবে মূল্যস্ফীতির।
আরও পড়ুন: আয়করে আসতে পারে যেসব প্রস্তাব
এডিপি বাস্তবায়নে কোন কোন বিষয়ে অগ্রাধিকার থাকবে- এমন প্রশ্নে জাগো নিউজকে মন্ত্রী বলেন, এডিপি বাস্তবায়ন যেন দ্রুত হয় সেই বিষয়ে কাজ করছি। কারণ এটা বাজেটের একটা বড় অংশ। তবে এডিপি বাস্তবায়নে কিছু দুর্বলতা আছে এটা স্বীকার করা ভালো। অনেক প্রকল্প পরিচালক (পিডি) ঢাকায় থাকেন অথচ প্রকল্প পঞ্চগড়ে, এই বিষয়ে আমরা কাজ করছি। পিডিরা নিজের জায়গায় থাকবেন। প্রকল্প পঞ্চগড়ে থাকলে পিডি ঢাকায় থেকে কীভাবে সেটা দেখাশোনা করবেন! প্রধানমন্ত্রী বার বার বলছেন, কিন্তু কিছুই হচ্ছে না।
আসন্ন বাজেটে কোন প্রকল্প অগ্রাধিকার পাবে- এমন প্রশ্নে এম এ মান্নান বলেন, সব প্রকল্প আদরের, স্নেহের প্রকল্প। তবে গ্রামীণ সড়ক, গ্রামীণ সেতু ও গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নে বেশি নজর দেওয়া হবে। কৃষিখাত ও কৃষি যান্ত্রিকীকরণে আরও অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। মানুষ যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন চায়। তাই আমরা সড়ক, রেল ও নৌপথের উন্নয়ন করবো।
আরও পড়ুন: ভ্যাট দায়মুক্তি পেতে যাচ্ছে ই-কমার্স
২০২৩-২৪ অর্থবছরে এডিপিতে পরিবহন ও যোগাযোগ খাতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এ খাতে বরাদ্দ ৭৫ হাজার ৯৪৪ কোটি ৬২ লাখ টাকা। অন্য খাতের প্রস্তাবিত বরাদ্দের মধ্যে রয়েছে বিদ্যুৎ ও জ্বালানিতে ৪৪ হাজার ৩৯৩ কোটি টাকা। এছাড়া শিক্ষায় বরাদ্দ ধরা হয়েছে ২৯ হাজার ৮৮৯ কোটি ১২ লাখ টাকা। গৃহায়ণ ও কমিউনিটি সুবিধাবলীতে ২৭ হাজার ৪৫ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। স্থানীয় সরকার ও পল্লি উন্নয়নে ১৮ হাজার ৮৮০ কোটি টাকা। স্বাস্থ্যে ১৬ হাজার ২০৪ কোটি টাকা এবং কৃষিতে ১০ হাজার ৭০৭ কোটি টাকা বরাদ্দ প্রস্তাব করা হয়েছে।
এছাড়াও সাধারণ সরকারি সেবায় দুই হাজার ১১৪ কোটি ৩০ লাখ টাকা, প্রতিরক্ষায় এক হাজার ১০ কোটি টাকা, জনশৃঙ্খলা ও সুরক্ষায় তিন হাজার ৪৩৬ কোটি ২৮ লাখ টাকা, শিল্প ও অর্থনৈতিক সেবায় পাঁচ হাজার ৩৬২ কোটি ২২ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। পাশাপাশি পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ খাতে আট হাজার ৯৯৫ কোটি ২১ লাখ টাকা, ধর্ম-সংস্কৃতি ও বিনোদনে দুই হাজার ২৯০ কোটি ২০ লাখ টাকা, বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তিতে পাঁচ হাজার ৩২১ কোটি ৩৭ লাখ টাকা এবং সামাজিক সুরক্ষা খাতে প্রস্তাব করা হয়েছে তিন হাজার ৩১৮ কোটি ৬৬ লাখ টাকার এডিপি।
আগামী অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে প্রকল্প থাকছে এক হাজার ২১৮টি। এর মধ্যে বিনিয়োগ প্রকল্প এক হাজার ১১৮টি, কারিগরি সহায়তা প্রকল্প ৭৮টি এবং সম্ভাব্যতা সমীক্ষা যাচাই প্রকল্প রয়েছে ২২টি।
আরও পড়ুন: গণতন্ত্রে পেট ভরবে না, গ্রামের মানুষ চাল-ডাল-ভাতার কার্ড চায়
আসন্ন জাতীয় বাজেটে বরাদ্দের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে বড় উন্নয়ন প্রকল্পে। এমন ১৪টি মেগা প্রকল্প ও কর্মসূচির জন্য ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে ৬৫ হাজার ৭৬০ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের সংশোধিত এডিপিতে এ খাতে বরাদ্দ আছে ৫৪ হাজার ১৫ কোটি টাকা। এ হিসাবে আগামী অর্থবছরে এসব প্রকল্পে বরাদ্দ বাড়ছে প্রায় ১১ হাজার ৭৪৫ কোটি টাকা। মাতারবাড়ি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে চলতি অর্থবছরের সংশোধিত এডিপিতে (আরএডিপি) বরাদ্দ আছে ৭ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরে বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে ৯ হাজার ২৫৬ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। এছাড়া মেট্রোরেল লাইন-৬ প্রকল্পে আরএডিপিতে এবছর বরাদ্দ আছে ৩ হাজার ৪৯ কোটি টাকা। গত জুন পর্যন্ত এ প্রকল্পের আওতায় ক্রমপুঞ্জিত ব্যয় ১৭ হাজার ১২৫ কোটি ৩০ লাখ টাকা। এ প্রকল্পে আগামী এডিপিতে ৩ হাজার ৪২৫ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হচ্ছে।
ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে চলতি অর্থবছরে বরাদ্দ ৩ হাজার ৩০০ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। এ প্রকল্পে ক্রমপুঞ্জিত ব্যয় এক হাজার ৯৬০ কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরে ৫ হাজার ৮৭০ কোটি ২৩ লাখ টাকা বরাদ্দ পাচ্ছে। এছাড়া বঙ্গবন্ধু রেলসেতু নির্মাণে চলতি অর্থবছরে বরাদ্দ ২ হাজার ৬৯৯ কোটি ৫০ লাখ টাকা। এ প্রকল্পে ক্রমপুঞ্জিত ব্যয় হয়েছে ৫ হাজার ৪২১ কোটি ২৮ লাখ টাকা। আগামী অর্থবছরে ৩ হাজার ৭৭৮ কোটি ৩৮ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
দোহাজারী-রামু-কক্সবাজার-ঘুনধুম পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণে চলতি অর্থবছরে বরাদ্দ আছে এক হাজার ২০ কোটি টাকা। এ প্রকল্পে ক্রমপুঞ্জিত ব্যয় ৬ হাজার ১৯৮ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। আগামী অর্থবছরে এ প্রকল্পে এক হাজার ৪০০ কোটি টাকা বরাদ্দ ধরা হয়েছে।
মাতারবাড়ি বন্দর উন্নয়ন প্রকল্পে চলতি অর্থবছরে বরাদ্দ আছে ১৮৭ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। গত বছরের জুন পর্যন্ত ক্রমপুঞ্জিত ব্যয় ৩০০ কোটি টাকা। এ প্রকল্পে আগামী অর্থবছরে ৪ হাজার ৫৪৭ কোটি ১৭ লাখ টাকা বরাদ্দ ধরা হয়েছে। হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রসারণ (প্রথম পর্যায়) প্রকল্পে বরাদ্দ আছে ৪ হাজার ৪৬৯ কোটি ৬০ লাখ টাকা। ক্রমপুঞ্জিত ব্যয় হয়েছে ৭ হাজার ৪০ কোটি ৫২ লাখ টাকা। আগামী অর্থবছরে এ প্রকল্পে ৫ হাজার ৪৯৮ কোটি ৯৭ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
আরও পড়ুন: বরাদ্দ কমছে কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচিতে
এছাড়া চতুর্থ স্বাস্থ্য-জনসংখ্যা, পুষ্টি সেক্টর উন্নয়ন কর্মসূচিতে বরাদ্দ আছে ৫ হাজার ৮৯৭ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। এ প্রকল্পে ১১ হাজার ১৫৪ কোটি ৫৫ লাখ টাকা ক্রমপুঞ্জিত ব্যয়। প্রকল্পটিতে আগামী অর্থবছরে বরাদ্দ আসছে ৭ হাজার ৮৯ কোটি টাকা। চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচিতে বরাদ্দ আছে ৬ হাজার ৩৬৫ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। এ প্রকল্পে ক্রমপুঞ্জিত ব্যয় হয়েছে ৪ হাজার ৬৯৭ কোটি ৬০ লাখ টাকা। আগামী অর্থবছরে এ প্রকল্পে ৮ হাজার ৫৮৬ কোটি টাকা বরাদ্দ থাকছে।
চলতি অর্থবছরে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে বরাদ্দ আছে ১১ হাজার ১৩৯ কোটি ১৫ লাখ টাকা। গত বছরের জুন পর্যন্ত ক্রমপুঞ্জিত ব্যয় হয়েছে ৫৫ হাজার ৪৬৮ কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরে এ প্রকল্পে বরাদ্দ কমছে, ৯ হাজার ৭০৬ কোটি ৭৬ লাখ টাকা ধরা হয়েছে। এছাড়া সাপোর্ট টু ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে (পিপিপি) প্রকল্পে বরাদ্দ আছে ২১৯ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। এ প্রকল্পে ক্রমপুঞ্জিত ব্যয় হয়েছে ৪ হাজার ৯১৭ কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরে বরাদ্দ কমিয়ে ১১৮ কোটি টাকা ধরা হয়েছে।
কর্ণফুলী টানেল প্রকল্পে চলতি অর্থবছরে বরাদ্দ আছে এক হাজার ৭২১ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। আসন্ন বাজেটে এ প্রকল্পে নতুন বরাদ্দ ধরা হয়েছে ৭৩৫ কোটি ১৮ লাখ টাকা। পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ প্রকল্পে বরাদ্দ আছে ৫ হাজার ৯০৯ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। আগামী অর্থবছরে বরাদ্দ ধরা হয়েছে ৫ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।
এমওএস/কেএসআর/জেআইএম