বাণিজ্যমেলা
সুলভমূল্যে মিলছে খাবার, ভোগান্তি কমে ফিরেছে আস্থা
ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলায় একসময় খাবারের দাম ও মান নিয়ে ক্রেতা-দর্শনার্থীদের নানা অভিযোগ ছিল। মেলার ভেতরে ছাড়া অন্য কোথাও খাবারের দোকানের ব্যবস্থা রাখা হতো না। এ সুযোগে মেলায় বরাদ্দ দেওয়া দোকানগুলো কয়েকগুণ দামে খাবার বিক্রি করতো। খাবারের মান নিয়েও ছিল নানান অভিযোগ। এসব নিয়ে দোকানিদের সঙ্গে ক্রেতা-দর্শনার্থীদের তর্ক-বিতর্কও হতো। এতে মেলায় অধিকাংশ খাবারের দোকানে দর্শনার্থীরা পড়তেন বিপাকে।
ক্রেতা-দর্শনার্থীদের এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন সময় অভিযুক্ত দোকানগুলোকে জরিমানাও করে জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তর। তবে বর্তমানে ক্রেতা-দর্শনার্থীদের এমন ভোগান্তি কমাতে সাশ্রয়ী মূল্যে স্বাস্থ্যকর খাবার নিয়ে হাজির হয়েছে খাবারের বিভিন্ন ব্র্যান্ড ও ফুড স্টল। তাদের প্যাভিলিয়নগুলোতে সুলভমূল্যে ভালোমানের খাবার পেয়ে সন্তুষ্ট খাবারপ্রেমীরা।
সোমবার (৫ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলার খাবারের বিভিন্ন স্টল-প্যাভিলিয়ন ঘুরে দেখা গেছে, এসব খাবার স্টল ও প্যাভিলিয়ন বিভিন্ন আইটেমের খাদ্যপণ্য নিয়ে হাজির হয়েছে মেলায়। সুলভমূল্যে খাবার বিক্রির পাশাপাশি মেলা উপলক্ষে খাবারে বিভিন্ন ছাড়ও দেওয়া হচ্ছে। এসবের মধ্যে রয়েছে দুপুরের খাবার, সিঙাড়া, সমুচা, ফ্রাইড চিকেন, তান্দুরি চিকেন, বার্গার, ফ্রাইড রাইসসহ হরেক রকমের খাবার।
ঢাকার ইস্কাটন থেকে মেলায় এসেছেন তামান্না আক্তার। তিনি সিঙাড়া-সমুচা খাওয়ার জন্য ঢুকেছেন ঝঁটপটের প্যাভিলিয়নে। তামান্না বলেন, দ্বিতীয়বার আমার এখানে আসা। ঝঁটপটের খাবার অনেক ভালো লাগছে। আগেরবার শুধু স্বামীকে নিয়ে এসেছিলাম। এবার মেয়েকেও নিয়ে এসেছি। মেলায় এলেই সবসময় ঝঁটপট কিংবা টেস্টি ট্রিটে আসা হয়। আগেরবার খাবার অনেক ভালো লেগেছিল, তাই আবারও এসেছি। খাবারের দামও আমার কাছে কম মনে হয়েছে।
বাণিজ্যমেলায় ফ্রাইড রাইস খাবেন স্বপন খান। এজন্য তিনি চলে এসেছেন টেস্টি ট্রিটের স্টলে। স্বপন খান বলেন, ফ্রাইড রাইস খেয়েছি। টেস্টি ট্রিটের সব খাবারই সুস্বাদু। অন্যসব দোকানে খাবারের অনেক দাম, পাশাপাশি খাবারের কোয়ালিটি তেমন ভালো নয়।
টেস্টি ট্রিটে খাবার খেতে আসা আরিফুল ইসলাম নামের আরেক খাবারপ্রেমী জানান, এখানে এসে চিকেন শর্মা খাচ্ছি। এটি আমার খুব প্রিয় একটি খাবার। আমার কাছে মনে হয় মেলায় যেসব ফুড স্টল আছে, এর মধ্যে টেস্টি ট্রিট বেস্ট। কারণ দামে সাশ্রয়ী এবং খাবারও খুব মানসম্মত। এসব স্টলে খাবারের মান সবসময় ভালো থাকে। সেজন্য সবাই টেস্টি ট্রিটের খাবার পছন্দ করেন।
আরও পড়ুন>> খাদ্যপণ্যের বিশাল সমাহার নিয়ে বাণিজ্যমেলায় প্রাণ
টেস্টি ট্রিটের রিজিওনাল ম্যানেজার মো. শরীফ হোসেন বলেন, মেলা উপলক্ষে আমরা বিভিন্ন নতুন আইটেম নিয়ে আসছি। এছাড়া লাঞ্চের জন্য রয়েছে ফ্রাইড রাইস ও ডিম-খিচুড়ি। মাত্র ৮০ টাকায় আমরা এই ডিম-খিচুড়ি দিচ্ছি। যেন প্রত্যেক ক্রেতা-দর্শনার্থী এখানে এসে লাঞ্চ করতে পারেন। আমরাই শুধু সাশ্রয়ী মূল্যে এসব খাবার বিক্রি করছি। আমরা ক্রেতাদের ভালো সাড়া পাচ্ছি। আমাদের এই মুহূর্তে তিনটি কম্বো অফার চলছে।
টেস্টি ট্রিটের অপারেশনের দায়িত্বে থাকা আরিফুল ইসলাম বলেন, আমাদের চিকেন ফ্রাই, চিকেন বার্গার, রাইস কম্বো পাওয়া যাচ্ছে। খাবারপ্রেমীরা এখানে ৪৩৯ টাকার রেগুলার প্যাকেজের খাবার ২৯৫ টাকায় নিতে পারছেন। এতে এক পিস চিকেন, চার পিস উইংস ও একটি ম্যাক্সকোলা থাকবে। এছাড়া আমরা ৬০ টাকায় কোরিয়ান চিকেন বিক্রি করছি। চার পিস কোরিয়ান চিকেন কিনলে ২৫ শতাংশ ছাড় দেওয়া হচ্ছে।
মেলায় ভারী খাবারের পাশাপাশি রয়েছে হালকা স্ন্যাকস ও কুকিজ পণ্য। মিরপুর-১১ থেকে মেলায় এসেছেন কিরণ আক্তার। তিনি কুকিজ পণ্য কিনবেন। এজন্য এসেছেন বিস্ক ক্লাবে।
তিনি জাগো নিউজকে বলেন, বাণিজ্যমেলায় এসে এই প্যাভিলিয়ন থেকে কিছু কুকিজ পণ্য কেনা হয়েছে। কোয়ালিটি অনুযায়ী দাম আমার কাছে পারফেক্টই মনে হলো। এখানকার সব পণ্যই আমার খুব ভালো লাগে। সবকিছুই বেস্ট।
বিস্ক ক্লাবের ইনচার্জ মো. ইয়াসিন বলেন, আমরা ৩১০ টাকার কুকিস কম্বো মাত্র ২৪৯ টাকায়, ৩০৫ টাকার মামা ওয়েফার কম্বো ২৪৯ টাকায় বিক্রি করছি। এছাড়া মেলা উপলক্ষে আমাদের প্যাভিলিয়নে আরও নতুন কয়েকটি আইটেম যুক্ত হয়েছে। এসব খাবারের দাম বিকাশে পেমেন্ট করলে ৫০ টাকা পর্যন্ত ক্যাশব্যাক করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন>> বাণিজ্যমেলায় ১৫% ছাড় দিচ্ছে কমফি, থাকছে বাই টু গেট ওয়ান অফার
বাণিজ্যমেলায় বিভিন্ন স্টল ও প্যাভিলিয়নে শোভা পাচ্ছে হিমায়িত খাদ্যপণ্য। মেলায় বিভিন্ন হিমায়িত খাদ্যপণ্য নিয়ে হাজির জনপ্রিয় ব্র্যান্ড ‘ঝঁটপট’। তাদের স্টলে চিকেন নাগেট, মিটবল, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, স্পিং রোল, সিঙাড়া, সমুচাসহ বিভিন্ন ধরনের ফ্রোজেন পণ্য সরাসরি উপভোগ করতে পারছেন আগত দর্শনার্থীরা। স্টলে বেশ কিছু প্যাকেজে দর্শনার্থীদের দেওয়া হচ্ছে ২০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড়।
ঝঁটপটের ইনচার্জ আব্দুস সামাদ বলেন, এখানে আমরা ফ্রোজেন আইটেম বেশি বিক্রি করছি। এছাড়া মেলা উপলক্ষে আমরা সুলভমূল্যে ফ্রাইড রাইস বিক্রি করছি। তাছাড়া সমুচা রোল, চিকেন মিট বল, নাগেটসহ বিভিন্ন স্ন্যাক্স আইটেমেও ভালো সাড়া পাচ্ছি। ক্রেতাদের তাৎক্ষণিকভাবে আমরা গরম গরম খাবার সরবরাহ করতে পেরে ভীষণ খুশি। আমাদের প্যাভিলিয়নে চিকেন আইটেমগুলো বেশি বিক্রি হচ্ছে। কিছু ক্রেতা আমাদের খাবারে মুগ্ধ হয়ে ৭-৮ হাজার টাকার ফ্রোজেন ফুডসও কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। আমরা মেলায় সবসময় বেশি লাভের চেয়ে নিজেদের ব্র্যান্ডিং করার দিকে বেশি লক্ষ্য রাখি।
গত ২১ জানুয়ারি থেকে শুরু হয়েছে মাসব্যাপী বাণিজ্যমেলা। দেশীয় পণ্যের প্রচার, প্রসার, বিপণন, উৎপাদনে সহায়তার লক্ষ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও ইপিবির যৌথ উদ্যোগে ১৯৯৫ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত এ মেলা হতো শেরেবাংলা নগরে। কোভিড মহামারির কারণে ২০২১ সালে মেলার আয়োজন করা সম্ভব হয়নি।
এরপর মহামারির বিধিনিষেধের মধ্যে ২০২২ সালে প্রথমবার মেলার আয়োজন করা হয় পূর্বাচলে বিবিসিএফইসিতে। এবার তৃতীয়বারের মতো স্থায়ী ভেন্যু বাংলাদেশ-চীন এক্সিবিশন সেন্টারে বাণিজ্যমেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। চীনের অর্থায়নে পূর্বাচলে স্থায়ী বাণিজ্যমেলা কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছে। এখন থেকে প্রতি বছর এখানেই আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলার আসর বসবে।
রাশেদুল ইসলাম রাজু/ইএ/জিকেএস